দেশে এক দিনে কোটি টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে শনিবার বিশেষ ক্যাম্পেইন করতে চায় সরকার। সেই ক্যাম্পেইনের চাপ কমাতে ছুটির দিন দেশের সব টিকাকেন্দ্র খোলা রাখা হয়েছে। তবে যথাযথ প্রচারণার অভাবে অধিকাংশ টিকাকেন্দ্র ফাঁকা দেখা গেছে।
শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বেশ কয়েকটি টিকাদান কেন্দ্রে একই চিত্র লক্ষ করা গেছে।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয় শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনেও সারা দেশে টিকাদান কার্যক্রম চালু থাকবে। এসব কেন্দ্রে নিবন্ধন ছাড়া টিকা দেয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব শামসুল হকের পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়, ২৬ ফেব্রুয়ারি গণটিকাদান কার্যক্রম ঘিরে দেশজুড়ে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে এবং টিকার জন্য টিকাদান কেন্দ্রে মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে।
সকাল ৯টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল হাসপাতালের টিকাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, দুই থেকে তিনজন টিকাপ্রত্যাশী এসেছেন। তারা নিবন্ধন ছাড়া শুধু মোবাইল নম্বর এন্ট্রি করে টিকা নিতে পারছেন। টিকাকেন্দ্রে শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ১০ থেকে ১৫ জন আনসার কর্মকর্তা থাকলেও প্রত্যাশীদের ভিড় নেই ।
টিকাকেন্দ্রে শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা এক আনসার সদস্য বলেন, ‘গতকাল তিন থেকে চারজন মানুষ টিকা নিতে উপস্থিত হন। তবে আজ তেমন লোক নেই।’
কেন মানুষ নেই জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে অনেকেই জানেন না শুক্রবারেও টিকা দেয়া হবে। যারা টিভিতে দেখেছেন, তারা হয়তো আসছেন। এই টিকার জন্য মেসেজ দেয়া হচ্ছে না, যে কারণে হয়তো সেভাবে ভিড় নাই।’
৪০ বছর বয়সী রিকশাচালাক ইব্রাহিম টিকা নেয়ার পর কথা বলেন নিউজবাংলার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই পথ থেকে রিকশা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম এখানে টিকা দেয়া হচ্ছে। রিকশা রেখে শুধু মোবাইল নম্বর দিলাম। একটি কার্ড দিল। টিকা দিয়ে দিল।
কোনো ধরনের লাইনে দাঁড়াতে হলো না। আর এক মাস পর আরেকটি ডোজ নিয়ে যাওয়ার জন্য এবং টিকা কার্ড সংরক্ষণের জন্য বলা হয়েছে।’
৬ মাসের সন্তান কোলে করে নিয়ে টিকা নিতে এসেছেন মা নাদিয়া সুলতানা। সন্তানের বাবাও এসেছেন। করোনা থেকে সুরক্ষা নিশ্চিতে টিকা নিতে এসেছেন বলে জানিয়েছেন নিউজবাংলাকে।
তিনি বলেন, ‘আসলে যেহেতু নিবন্ধন জটিলতা নেই। শুধু এসেই টিকা নিতে পারছি। গত রাতে টেলিভিশনে দেখলাম শুক্রবারেও টিকাকেন্দ্র খোলা থাকবে, সে কারণে সকাল-সকাল এসেছি টিকা নিতে।’
এই কেন্দ্রের সমন্বয়ক দাউদ আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গতকালকের তুলনায় অবশ্যই আজ অনেক কম হয়েছে। আমাদের প্রস্তুতি অনেক ভালো। যারা আসবেন তাদের সুশৃঙ্খলভাবে টিকা দিয়ে দেব।’
শ্যামলীর ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ দেয়া বন্ধ রেখে শুধু প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হচ্ছে।
হাসপাতালটির সহকারী পরিচালক আয়েশা আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা শুক্রবার ছুটির দিন এই টিকাকেন্দ্র খুলে রাখা হয়েছে। গতকাল ৩ হাজার মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। আজ ২০০ মানুষ এসেছে এই কেন্দ্রে।
‘আগামীকালের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি আমরা। আজ যেহেতু শুক্রবার জুম্মার দিন এবং ছুটির দিন, হয়তো আজ টিকা নিতে আসা মানুষ কম হবে। তবে যারাই আসুক, তাদের সঠিকভাবে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৬৭৫টি কেন্দ্রে কোভিড-১৯ গণটিকা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রতি ওয়ার্ডে ৯টি করে কেন্দ্র হিসেবে দক্ষিণ সিটির ৬৭৫ কেন্দ্রে এই টিকাদান কার্যক্রম চলছে। প্রতি কেন্দ্রে ৫০০ জনকে টিকা প্রয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে পরিচালিত হওয়া এই কার্যক্রমে ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ জনকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে।
এ ছাড়া ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম রাজধানীর কসাই বাড়ি রেলগেট, দক্ষিণখান গণটিকা কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। সেই কেন্দ্রেও তেমন ভিড় নেই।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে এক দিনে ১ কোটি ডোজ টিকা দেয়ার ঘোষণা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ওই দিন জানানো হয়, ২৬ ফেব্রুয়ারির পর প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হবে না।
বাংলাদেশে গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ দেয়া শুরু হয়। দুই মাস পর ৮ এপ্রিল শুরু হয় দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার কার্যক্রম। আর গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর তৃতীয় ডোজ বা বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে ৭৬ লাখ ডোজের বেশি টিকা দেয়া হয়েছিল এক দিনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, বুধবার পর্যন্ত সারা দেশে ১০ কোটি ৬৫ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন, যা মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের বেশি। তাদের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৮ কোটি ৬ লাখ মানুষ। আর বুস্টার ডোজ নিয়েছেন ৩৪ লাখ ৪২ হাজারের বেশি মানুষ।