ঢাকার সাভারে তৃতীয় দিনেও গণটিকাদান কর্মসূচিতে উপচেপড়া ভিড়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। গরমের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে হুড়োহুড়ি ও ধাক্কাধাক্কিতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন কয়েকজন। এমন ছয় থেকে সাতজন সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
এ ছাড়া ভিড়ের মধ্যে ধাক্কা খেয়ে একজন চিকিৎসক দেয়ালের সঙ্গে মাথায় আঘাত পান। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সায়েমুল হুদা নিউজবাংলাকে এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে টিকা নিতে এসে এমন ভোগান্তিতে ক্ষোভ জানিয়েছেন টিকাপ্রত্যাশীরা। এ সময় টিকা কার্ডে স্বাক্ষর ও টিকার নাম উল্লেখ না করাসহ তাদের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মীদের অসদাচরণের অভিযোগও করেছেন তারা।
তবে আগামীকাল থেকে এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকেই সাভার হেলথ ম্যানেজমেন্ট সেন্টারে টিকা নিতে আসতে শুরু করে মানুষ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে টিকাকেন্দ্র জনসমুদ্রে পরিণত হয়। এ সময় মানুষের হুড়োহুড়ি ও ধাক্কাধাক্কিতে চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। যদিও টিকা কর্মসূচির প্রথম ও দ্বিতীয় দিনেও একই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আরও তিনটি কেন্দ্রে বাড়িয়েছে।
এদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সাভার অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়, সাভার হেলথ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও সাভার পৌরসভা টিকাদান কেন্দ্রে ঘুরে টিকা নিতে আসা মানুষের ভিড় দেখা গেছে। এ সময় লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা টিকাপ্রত্যাশীরা নানা অভিযোগ জানিয়েছেন।
সাভার অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে টিকা নিতে আসা নার্গিস আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভোর ৬টার সময় আইসা লাইনে দাঁড়াইছি। ঠেলাঠেলি আর গরমে অসুস্থ হইয়া গেছি। পরে ১২টার দিকে টিকা দিতে পারছি।
‘ভিতরে কোনো শৃঙ্খলা নাই। গরুর মতো শুধু ইনজেকশন দিয়া তাড়াতাড়ি বিদায় করতেছে। আমার কাগজে কোনো সাইন করে নাই, তারিখ নাই। আবার আমি কোন টিকা দিছি সেটাও লেখা নাই। এখন গার্মেন্টস গিয়ে স্যাররা দেখতে চাইলে কী বলব?’
পৌর এলাকার গৃহিণী এ্যানি রায় বলেন, ‘ভোর ৫টার দিকে বাসার কাজ ফেলে বাচ্চাদের রেখে আসছি টিকা দিতে। ৫-৬ ঘণ্টা গরমের মধ্যে দাঁড়ায় থেকে টিকা দিতে পারছি। কিন্তু কোন টিকা দিলাম আমি নিজেই জানি না। ওনারা কাগজে কোনো কিছুই লিখছেন না। শুধু তড়িঘড়ি করে টিকা দিয়ে বের হয়ে যেতে বলছেন।
‘কিছু জিজ্ঞেস করলে স্বাস্থ্যকর্মীরা খারাপ আচরণ করছেন। বলছেন, স্বাক্ষর দিয়া নেন। কাগজ ধুইয়া পানি খান এ ধরনের কথাবার্তা বলছেন।’
সাভার হেলথ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার কেন্দ্রে আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘মানুষজনের ভিড়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকাও কষ্ট। তার ওপর রোদের তীব্রতায় অনেকেই অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন। হঠাৎ হঠাৎ ধাক্কাধাক্কিতে নিচে পড়ে আহত হচ্ছেন অনেকে।
ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এভাবে টিকা কার্যক্রম চলতে পারে না। লাইন মেইনটেইনের জন্য এখানে পর্যাপ্ত পুলিশ ও ভলানটিয়ারও নেই। তারা থাকলে মানুষজন অন্তত ঠিকভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা দিত, বিশৃঙ্খলা হতো না।’
এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মঈনুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য বিশৃঙ্খলা এড়াতে সকাল থেকেই কাজ করেছি। কিন্তু মানুষজন না বুঝেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে।
‘আমরা তাদের সচেতন করার চেষ্টা করেছি। মাইকে ২৬ ফেব্রুয়ারির পরও প্রথম ডোজ টিকা নিতে পারবেন, এমন ঘোষণা দেয়ার পরও তারা শোনেনি।’
জানতে চাইলে বিকেল ৫টার দিকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সায়েমুল হুদা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত দুই দিনে আমরা সাভারে ৩৮ হাজার মানুষকে গণটিকা দিয়েছি। আজ কতজনকে টিকা দেয়া হয়েছে তা গণনা চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, টিকাগ্রহীতার সংখ্যা আজ ৩৪ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।’
টিকা কার্ডে স্বাক্ষর ও টিকার নাম উল্লেখ না করাসহ টিকাপ্রত্যাশীদের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মীদের অসদাচরণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক মানুষের সমাগম হওয়ায় জনবল সংকটের কারণে হয়তো অনেক টিকা কার্ডে সিল, স্বাক্ষর ও তারিখ লেখা হচ্ছে না। তবে আগামীকাল থেকে তারা অটোসিলের মাধ্যমে এটা করবেন।
‘আর আজ যাদের কার্ডে এসব ওঠেনি পরবর্তীতে তারা দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে আসলে সেটা সমন্বয় করে নেবেন। কারণ আজকের তারিখ ও টিকার নাম তাদের জানা আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক মানুষের ওভারফ্লোর কারণে টিকা নিতে আসারাই বেশির ভাগ সময় মেজাজ হারিয়ে খারাপ আচরণ করছেন। অনেক সময় দিনভর সেবা দেয়া স্বাস্থ্যকর্মীরাও হয়তো সেটা মেনে নিতে পারছেন না।’
তবে আগামীকাল থেকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।
লাইনে অসুস্থ হয়ে পড়ার বিষয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘ভিড়ের মধ্যে হুড়োহুড়িতে ধাক্কা খেয়ে ডা. আরমান দেয়ালের সঙ্গে মাথায় আঘাত পান। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ভিড় ও হুড়োহুড়িতে ছয় থেকে সাতজন টিকাপ্রত্যাশী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।’