ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর স্বামীকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে প্রশাসন। কমিটিকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হীরা বেগমের স্বামী ফাইন রহমান রাসেলকে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ছুরিকাঘাত করা হয়। দেবাশীষ নয়ন নামে এক যুবকসহ কয়েকজন এই হামলা চালান বলে অভিযোগ আছে।
মামলার বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল। তিনি বলেন, ‘বুধবার রাতে আহত ফাইনের স্ত্রী হীরা থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনেন। বৃহস্পতিাবর সেই অভিযোগ মামলা হিসেবে নেয়া হয়।
এজাহারে নার্স ইলা সিকদার, নার্সিং সুপারভাইজার জহুরা বেগম ও দেবাশীষ নয়নের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে দুজনকে।
স্বজন ও হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বরাতে তিনি জানান, শহরের টেপাখোলা বিন্দাবনের মোড় এলাকার বাসিন্দা ফাইনের স্ত্রী হীরা গত ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাকে প্রতিদিন দুবার রক্ত পরীক্ষার নির্দেশনা দেন চিকিৎসক।
বুধবার রাতে জেনারেল হাসপাতালের প্যাথলজি ল্যাব বন্ধ থাকায় বাইরের বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা করানোর জন্য নার্সকে সিরিঞ্জে রক্ত টেনে দিতে বলেন হীরার স্বামী। এতে নার্স ইলা সিকদার রক্ত টেনে দেয়া তার দায়িত্ব না বলে রাসেলকে জানান।
এ সময় রাসেল ইলাকে বলেন, ‘সরকারি বেতন খান, রক্ত টানবেন না কেন?’
পরে ইলা সিকদার নার্স সুপারভাইজারের কাছে রাসেলের নামে নালিশ করেন। একই সঙ্গে শহরের খাবাসপুর এলাকার যুবলীগ কর্মী দেবাশীষ নয়নকে ফোন করে ডেকে আনেন।
ফাইন নার্স সুপারভাইজারের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বের হওয়ার পর পরই দেবাশীষ নয়ন ও তার সঙ্গে থাকা আরও দু-তিনজন রাসেলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে চলে যান।
এ ঘটনার পর থেকেই পলাতক আছেন ইলা ও দেবাশীষ। তাদের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
তদন্ত কমিটি গঠন
হাসপাতালের ভেতর ছুরিকাঘাতের ঘটনার তদন্তে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ও ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ছিদ্দীকুর রহমান।
কমিটির সভাপতি করা হয়েছে জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন সিনিয়র কনসালট্যান্ট আবু আহমেদ আব্দুল্লাকে এবং সদস্য সচিব করা হয়েছে ডেপুটি সিভিল সার্জন শাহ মো. বদরুদ্দোজাকে।
কমিটির অন্য তিন সদস্য হলেন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফাতেমা বেগম, ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা গণেশ কুমার আগরওয়ালা এবং উপসেবা তত্ত্বাবধায়ক মর্জিনা বেগম।
সিভিল সার্জন ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, ‘এই কমিটিকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। বুধবার রাতে সংঘটিত ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। হাসপাতালে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
অস্ত্রোপচার চলছে ফাইন রহমানের
হামলার শিকার ফাইনকে জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানে তার অস্ত্রোপচার চলছে।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল চিকিৎসক আসাদউল্লাহ বলেন, ‘অস্ত্রোপচার করে ওয়ার্ডে নেয়ার পর ফাইনের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা দেয়া যাবে।’
এর আগে জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক সাইফুজ্জামান বলেন, আহত রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার প্রচুর ব্লিডিং হয়েছে।’
কে এই দেবাশীষ নয়ন
দেবাশীষ নয়ন ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ ঝিলটুলী মহল্লায় বসবাস করেন। তার বাড়ি সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের আটঘর গ্রামে। তিনি ফরিদপুর সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি (প্রাইভেট) পাস করেন।
তিনি জেলা ছাত্রলীগের আগের কমিটির সহসভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া ১১ নভেম্বর সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের থেকে দলীয় মনোনয়ন কিনে জমা দেন। দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ছাত্রলীগ নেতা জানান, ফরিদপুরের আলোচিত সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের বিরুদ্ধে করা মানি লন্ডারিং মামলার আসামি জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক ফাহাদ বিন ওয়াজেন ফাইনের আনুসারী ছিলেন দেবাশীষ।
দেবাশীষের বিরুদ্ধে সালথা ও ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, ‘অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে।’