ফরিদপুরের ভাঙার তুজারপুর ইউনিয়নে ‘স্বাধীনতার পর’ তৈরি সেতুটি এখন বেহাল। বিভিন্ন সময় বন্যায় দুপাশ থেকে মাটি সরে হারিয়ে গেছে সংযোগ সড়ক। রেলিংও ভেঙে পড়েছে।
এখন সেতুর দুই পাশে মই লাগানো হয়েছে। সেটি বেয়ে সেতুতে ওঠেন লোকজন, নামেনও মই দিয়ে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই সেতু ব্যবহারে নানা ঝক্কি পোহাতে হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে সেতুটি মেরামতের জন্য আবেদন করা হয়েছে অনেকবারই। তবে কোনো উদ্যোগ না দেখে নিজেরাই টাকা তুলে সেতুতে ওঠার জন্য মই তৈরি করেছেন।
স্থানীয় আব্দুল মান্নান বলেন, ‘এই ব্রিজে কোনো নামফলক নেই। ধারণা করা হচ্ছে, এটি পাকিস্তান আমল বা দেশ স্বাধীনের পরে তৈরি করা হয়েছে। একটা সময় এই ব্রিজ পার হয়ে এই রাস্তা দিয়ে আমিসহ এখানকার মানুষ ভাঙ্গা উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে চলাফেরা করতাম। এটিই একমাত্র পথ ছিল।
‘১৯৮৮ ও ১৯৯৬ সালে বন্যার কারণে তীব্র স্রোতে মাটি সরে গেছে ব্রিজের দুই পাশ থেকে। বিশ্বরোড হওয়ার পর থেকে এর কদর কমে গেছে।’
অনেকেই এ সেতুতে উঠার সময় পড়ে গিয়ে হাত-পা-মাজা ভেঙেছে বলে অভিযোগ আছে। ছবি: নিউজবাংলাওই সেতুর পাশেই বাড়ি ওমর আলী শেখের। তিনি বলেন, ‘২০০০ সালের পর ওই পাড়ে আমরা ঘর বানাই। আমাদের দেখাদেখি আরও ৫-৬টা পরিবার এসে ঘর বানাইছে, কিন্তু কোনো মেম্বার-চেয়ারম্যান এই ব্রিজের গোড়ায় কোনো মাটি দেয় নাই।
‘অনেকেই ওই ব্রিজে উঠার সময় পড়ে গিয়ে হাত-পা-মাজা ভেঙেছে। অনেকবার মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেও কোনো কাজ হয়নি। এখন আমরা দুই পাশের লোকজন চাঁদা তুলে ব্রিজে ওঠার জন্য বাঁশ কিনে চার (সাকো) দিয়েছি।’
গ্রামের কৃষক শাহিন মোল্লা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সবার অনেক জমি খালের ওপারে বলে আমাদের ফসল ঘরে তোলার সময় মারাত্মক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। ব্রিজ থাকা সত্ত্বেও আমরা কোনো উপকার পাচ্ছি না।’
এই সেতু দিয়ে কেউ চলাফেরা না করলেও কৃষকরা ফসল নেয়ার জন্য এটি ব্যবহার করেন বলে জানালেন তুজারপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পরিমল চন্দ্র দাস। এ কারণে এটির সংস্কার করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আলিমুজ্জামান বলেন, ‘আমি ব্রিজটি দেখেছি। এটি এখন আর চলাচল করার জন্য উপযোগী নেই।
‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক মান মন্দির প্রকল্পের আওতায় ব্রিজটি নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শুরু হলে এটি ভেঙে আবার নির্মাণ করা হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার জানা ছিল না, আপনাদের মাধ্যমে জানলাম এই ব্রিজের খবর। আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করে খুব দ্রুত এই ব্রিজ সংস্কারের ব্যবস্থা নেব। ব্রিজের দুই প্রান্তে মাটি ভরাট করে চলাচলের উপযোগী করা হবে।’
এলজিইডির উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. আলিমুজ্জামান বলেন, ‘ব্রিজটির নির্মাণ সময় বলা যাচ্ছে না। তবে এটি স্বাধীনতার পর নির্মাণ করা হতে পারে।’