সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে পড়ায় একটি ট্রলারসহ চট্টগ্রামের বাঁশখালীর ৩২ জেলেকে ভারতীয় কোস্টগার্ড আটক করেছে দাবি করে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে।
নুরুল আবছার নামের ওই বোটমালিক গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালী থানায় জিডি করেন। এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি মাছ আহরণের জন্য জেলেরা গভীর সাগরে যান বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল উদ্দিন বুধবার রাত ৮টার দিকে নিউজবাংলাকে জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ওই জেলেদের ১৪ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে- এমনটি শুনেছেন বলে জানিয়েছেন শীলকূপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এ ছাড়া তিনি বাঁশখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে (ইউএনও) আটক ৩২ জনের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা দিয়েছেন।
তালিকায় যাদের নাম রয়েছে- বাঁশখালীর শীলকূপ ইউনিয়নের মনকিচর এলাকার ওমর মিয়ার ছেলে শাহ আলম, ওমর কাজীর ছেলে মো. ছাবের, আলী আকবরের ছেলে ছৈয়দুল আলম, ওমর কাজীর ছেলে হাবিবুর রহমান, মোস্তফা আলীর ছেলে কামাল হোসেন, হাবিব উল্লাহর ছেলে জিয়াউর রহমান, কামাল উদ্দীনের ছেলে দিদারুল আলম ও জয়নাল আবেদিন, মুহাম্মদ আলীর ছেলে নুর হোসেন, মুহাম্মদ আলীর ছেলে আজগর হোসেন।
তালিকায় আরও আছেন সিকান্দার আলীর ছেলে আলী আহমদ, মোস্তফা আলীর ছেলে জাফর আহমদ, মো. ইউসুফের ছেলে আকতার হোসেন, মুহাম্মদ হানিফের ছেলে কবির হোসেন, হাসান আলীর ছেলে আবুল হোসেন, আহছান আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম, ওমর কাজীর ছেলে জয়নাল উদ্দীন, আবুল কাশেমের ছেলে মাহমুদুল ইসলাম ও ওবাইদুল হক, আলী আহমদের ছেলে মো. আবদুল্লাহ, হারুনুর রশিদের ছেলে শামসুল আলম।
এ ছাড়াও নবী হোসেনের ছেলে সাদ্দাম হোসেন, শাহ আলমের ছেলে মো. ফারুক, আবদুল আজিজের ছেলে মো. জোনাইদ, লাল মিয়ার ছেলে আবদুল আজিজ, নুরুচ্ছফার ছেলে আহমদ নুর, ছৈয়দ নুরের ছেলে আরিফ উল্লাহ, আবদুস সালামের ছেলে হোসেন আহমদ, মোস্তফা আলীর ছেলে নুরুল আলম, নজির আহমদের ছেলে জসীম উদ্দীন এবং আমির আমজার ছেলে মো. ইয়াছিন রয়েছেন তালিকায়।
এ বিষয়ে কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন কাজী শাহ আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এরকম কোনো খবর পাইনি। তাছাড়া আমাদের জোনের সঙ্গে ভারতের সীমা না নেই। এটা খুলনা জোনের এলাকায় হতে পারে।’
শীলকূপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘ভারতে বাঁশখালীর ৩২ জেলে আটকা পড়ার বিষয়ে ১৮ তারিখ বোট মালিকের মাধ্যমে জানতে পারি আমি। বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। আটক ৩২ জন সবাই বাংলাদেশ সরকারের নিবন্ধিত জেলে সম্প্রদায়ের লোক।
‘সবশেষ খবর পেয়েছি তাদের ১৪ দিনের জেল দেয়া হয়েছে। তাছাড়া তাদের সঙ্গে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া এলাকার কিছু জেলেও ছিল বলে শুনেছি। আমরা আমাদের এলাকার ৩২ জনের পূর্ণাঙ্গ তালিকা ইউএনও মহোদয়কে দিয়েছি।’
তালিকা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ইউএনও সাইদুজ্জামান বলেন, ‘শীলকূপ ইউনিয়নের এক বোটমালিক আমাকে ৩২ জনের নামের একটি তালিকা দিয়েছে। এটি যাচাই করা হবে।’
বোট মালিক নুরুল আবছার বলেন, ‘চলতি মাসের ৮ তারিখ মাছ ধরার উদ্দেশ্যে গভীর সমুদ্রে যায় তারা। সম্ভবত কুয়াশার কারণে ভুল করে ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে পড়ে তারা। আর তাই ভারতীয় কোস্টগার্ড বোটসহ তাদের আটক করে নিয়ে যায়।’
১৩ ফেব্রুয়ারি একটি মোবাইল কলের মাধ্যমে জেলেদের আটকের বিষয়টি জানতে পারেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি বাঁশখালী থানায় ১৬ ফেব্রুয়ারি একটি জিডি করেছি। জেলেদেরসহ ট্রলার ফেরত পেতে আমরা সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।’
জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করে ওসি কামাল উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১৬ ফেব্রুয়ারি ওই ফিশিং বোটের মালিক তাদের উদ্ধারের জন্য একটা সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। এতে উল্লেখ করা হয়- ফিশিং বোটে মাঝি-মাল্লাহসহ ৩২ জন জেলে নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যায়। বোটটির নাম সোনার মদিনা ফিশিং ট্রলার। নির্দিষ্ট সময়ে বাকি বোটগুলো ফিরে এলেও সোনার মদিনা ফিশিং ট্রলারটি ফিরে আসেনি। পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারেন জেলেসহ বোটটি ভারতীয় কোস্টগার্ড আটক করেছে।’