সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে সড়কে রাখা লাশ ইউএনওর গাড়ির মাড়িয়ে যাওয়ার ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক আখ্যায়িত করে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
তবে প্রশাসন বলছে, ঘটনাটি নিয়ে আপাতত কিছু করা যাচ্ছে না। লিখিত অভিযোগ এলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চুরির মামলায় গ্রেপ্তারের পর জামিনে মুক্তি পাওয়ার ১১দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান উজির মিয়া। তার মৃত্যুর পর স্বজনরা অভিযোগ করেন, আটক অবস্থায় পুলিশ তাকে নির্যাতন করেছে। এর ধকলেই তিনি অসুস্থ হন এবং মারা যান।
উজিরের মরদেহ নিয়ে সোমবার সুনামগঞ্জের সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের পাগলাবাজার এলাকায় মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করা হয়। এর মধ্যে একটি গাড়ি সেই লাশটিকে চাপা দিয়ে এগিয়ে যায়।
গাড়িটিতে ছিলেন দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনোয়ার উজ জামান। তবে গাড়িটি উপজেলার সহকারী কমিশনারের।
এ ঘটনা পুলিশের ওপর ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীকে আরও উত্তেজিত করে তোলে।
ইউএনও আনোয়ার উজ জামান দাবি করেছেন, তাকে বহনকারী গাড়ি মরদেহকে চাপা দেয়নি। জনতা তার গাড়িতে হামলা করেছিল। চালক তখন মরদেহটি পাশ কাটিয়ে গেছে।
তবে এ ঘটনার দুটি ভিডিও ক্লিপ হাতে এসেছে নিউজবাংলার হাতে, যাতে দেখা যায়, শান্তিগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার সখিনা আক্তারের গাড়ি আসে ঘটনাস্থলে। জনতা গাড়িটিকে সামনে যেতে বাধা দিলে চালক না থেমে রাস্তায় রাখা উজির মিয়ার লাশকে চাপা দিয়ে চলে যায়।
এ ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক অখ্যায়িত করে সুনামগঞ্জ জেলা জাসদের সাধারণ সালেহীন চৌধুরী শুভ বলেন, ‘এমন ঘটনা আমরা আগে কখনও দেখিনি। একজন প্রশাসনের কর্মকর্তার উচিত ছিল উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করার জন্য নিজে গাড়ি থেকে নেমে যাওয়া। কিন্তু উনি গাড়ি দিয়ে মানুষদের ধাক্কা দিয়ে বের হয়ে লাশকে চাপা দিলেন। তিনি বলেছেন লাশ পাশ কাটিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু ভিডিওতে তার চিহ্ন নেই।’
সাংস্কৃতিক কর্মী অলক বাপ্পা বলেন, ‘ঘটনাটি দেখেছি। অনেক খারাপ লেগেছে। তবে আমি ঘটনার নিন্দা জানাই এবং ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার হোক।’
হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমি এ ঘটনা দেখে বিস্মিত হয়েছি। এমন নির্দয় ইউএনও আমাদের প্রয়োজন নেই। দ্রুত তার অপসারণ চাই।’
এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ না পেলে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার উল হালিম।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যে ঘটনা ঘটেছে সেটি আমরা দেখিনি, যার কারণে আমরা আপাতত কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। কিন্তু কেউ যদি লিখিত অভিযোগ দেন, তাহলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব এবং দোষীদের শাস্তি দেয়া হবে।’
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মুক্তাদির হোসেন বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাইদ ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আশ্বাসে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তবে পাগলা এলাকায় আমরা পুলিশ মোতায়েন করেছি।’