বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আবদুল জব্বার স্মৃতি জাদুঘর: সরব শুধুই ফেব্রুয়ারিতে

  •    
  • ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৯:২৫

গফরগাঁও উপজেলা সদর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে রাওনার পাঁচুয়া গ্রামে ভাষাশহীদ আবদুল জব্বারের পৈতৃক ভিটার পাশেই ৪০ শতক জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। গণগ্রন্থাগারটিতে ৪ হাজার  ১৩০টি বই রয়েছে। আছে অনেক দুর্লভ বই। এখানে পাঠক-দর্শক টানতে প্রশাসনিক উদ্যোগ দাবি এলাকাবাসীর।

মায়ের ভাষার জন্য বায়ান্নর ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সালাম, বরকত, রফিকের সঙ্গে পুলিশের গুলিতে প্রাণ দেন ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের আবদুল জব্বার। তার স্মৃতি রক্ষার্থে জন্মস্থান গফরগাঁওয়ের পাঁচুয়া গ্রামে ২০০৮ সালে নির্মাণ করা হয় ভাষাশহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। গ্রন্থাগারটিতে রয়েছে চার হাজারের বেশি বই। কিন্তু গ্রন্থাগারের প্রাণ যে পাঠক, তাদের উপস্থিতিটা নেই বললেই চলে। দর্শনার্থীও থাকে না তেমন একটা।

স্থানীয়রা জানান, ফেব্রুয়ারি মাস এলেই কেবল এই ভাষাসৈনিককে মনে করে গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর দেখতে আসেন অনেকে। এর বাইরে সারা বছরই থাকে সুনসান নীরবতা। পাঠাগারে মাঝেমধ্যে কেউ এলেও বই পড়ার পরিবর্তে মোবাইল ফোন নিয়ে বেশি সময় ব্যয় করেন। তাই প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে গ্রন্থাগারটি ডিজিটালাইজেশন করা প্রয়োজন। এ ছাড়া ভাষাশহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর পর্যন্ত আসা সড়কটিও ভাঙাচোরা। ফলে কেউ আসতে চায় না। এখানে পাঠক ও পর্যটক আনতে রাস্তাটির সংস্কারও জরুরি।

গফরগাঁও উপজেলা সদর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে রাওনার পাঁচুয়া গ্রামে ভাষাশহীদ আবদুল জব্বারের পৈতৃক ভিটার পাশেই ৪০ শতক জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। জেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় স্থাপিত গণগ্রন্থাগারটিতে ৪ হাজার ১৩০টি বই রয়েছে। আছে অনেক দুর্লভ বই।

এই পাঁচুয়া গ্রামে ১৯১৯ সালে জন্ম নেয়া আবদুল জব্বার ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় অসুস্থ শাশুড়িকে দেখতে যান। একই সময় ভাষা আন্দোলনে যোগ দিয়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন তিনি।

সরেজমিনে সোমবার দেখা যায়, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সোমবার অনেকেই আসছেন এই গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর ঘুরে দেখতে। তবে ভাষাশহীদ আবদুল জব্বারের ব্যবহৃত কোনো স্মৃতি এখানে নেই। দর্শনার্থীরা আশপাশ ঘুরে জাদুঘরের সামনে শহীদ মিনার কিংবা ভাষাশহীদ জব্বারের ম্যুরালের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত। কিন্তু গ্রন্থাগারের ভেতরে এসে বইয়ের পাতা উল্টাতে দেখা যায়নি তেমন কাউকেই।

পৌর শহরের বাসিন্দা আসাদুল হক নিউজবাংলাকে বললেন, ‘শহীদের ছবি ছাড়া কোনো স্মৃতি জাদুঘরে নেই। গণগ্রন্থাগারটিতে অসংখ্য বই থাকলেও পাঠক নেই। পাঠকস্বল্পতায় ধুঁকতে থাকা গ্রন্থাগারটি আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডিজিটালাইজেশন করা দরকার।’

ফরহাদ নামে এক দর্শনার্থী বললেন, ‘আমরা নতুন প্রজন্ম মায়ের মুখের ভাষার জন্য জীবন দেয়া জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সম্পর্কে বইপুস্তকে পড়েছি। ভাষা সৈনিক আবদুল জব্বারের স্মৃতিবিজড়িত স্থানে জন্ম হওয়ায় নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করি। এখানে পাঠক ও পর্যটক টানতে উপজেলা প্রশাসনকে আরও উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।’

গ্রন্থাগার দেখাশোনা ও পরিচালনার জন্য লাইব্রেরিয়ান, সহকারী লাইব্রেরিয়ান ও পিয়নসহ মোট পাঁচটি পদ থাকলেও এখানে কর্মরত আছেন একজন সহকারী লাইব্রেরিয়ান ও একজন কেয়ারটেকার।

কথা হলো লাইব্রেরিয়ান কায়সারুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই স্মৃতি গ্রন্থাগার ও জাদুঘর ছুটির দিন বাদে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। অনেক মূল্যবান বইয়ের সমাহার রয়েছে গ্রন্থাগারে। ভাষার মাসজুড়ে দর্শনার্থী এলেও বছরজুড়ে বই পড়ার জন্য পাঠক তেমন একটা আসে না।

‘পাঠাগারে আগে নিয়মিত দৈনিক পত্রিকা রাখা হতো। কিন্তু বর্তমানে পাঠক খুব কম আসায় পত্রিকাও রাখা হয় না। তবে আমরা নিয়মিত আসি।’

ভাষাশহীদ আবদুল জব্বারের চাচাতো ভাই মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘সরকার থেকে আমাদের সম্পর্কে কখনো খোঁজখবর নেয়া হয় না৷ কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসজুড়েই এখানে মানুষের সমাগম বাড়ে। ভাষাশহীদ আবদুল জব্বারের নামে দীর্ঘদিন ধরে কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে এলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এটি দুঃখজনক।’

গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবিদুর রহমান বলেন, ‘আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। বইয়ের সংখ্যা ও মানের দিক থেকে এটি বেশ সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার। কীভাবে পাঠকদের আকৃষ্ট করা যায় এ বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হবে। আমরা চাই, এখানে পাঠকের সমাগম ঘটুক।’

এ বিভাগের আরো খবর