১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহীদদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে মাতৃভাষার মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সোমবার সকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
রফিক, সালাম, জব্বার, বরকত, শফিউরসহ ১৯৫২-এর ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘তাদের আত্মত্যাগেই আমাদের মাতৃভাষার অধিকার, আমাদের পরিচয় ও নিজস্ব সংস্কৃতির মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ভাষা আন্দোলন শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রথম সুসংগঠিত আন্দোলন, যা আমাদের মনোবল ও আত্মবিশ্বাস সুদৃঢ় করে জাতীয়তাবাদে উজ্জীবিত করেছিল।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি গঠনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তার নেতৃত্বেই আমাদের সব যুগান্তকারী আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছে। অবশেষে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করেছি।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ও ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকরা ফরেন সার্ভিস একাডেমি প্রাঙ্গণে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। ছবি: নিউজবাংলা
মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের জন্য তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্তসহ সব ভাষাসেনানীর অবদানের কথাও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন পররাষ্ট্র সচিব।
মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য এবং জাতীয় চার নেতাসহ সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান পররাষ্ট্র সচিব।
তিনি বলেন, ‘তাদের সবার আত্মত্যাগেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে ও উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।’
১৯৯৯ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘তার নির্দেশনা এবং নেতৃত্বে এই গৌরবময় স্বীকৃতি অর্জন সম্ভব হয়েছে।’
এই স্বীকৃতি অর্জনে তৎকালীন কানাডা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সালামসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা বিশেষ করে প্যারিসে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত প্রয়াত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর অবদানের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাবেক কূটনীতিক সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর ছেলে সৈয়দ নাজিব মুস্তাফা আলী।
এ ছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকরা নিজেদের মাতৃভাষায় অনুভূতি প্রকাশ করে ভাষাশহীদদের অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম রাষ্ট্রীয় কাজে দেশের বাইরে অবস্থান করায় শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে তাদের দেয়া বাণী অনুষ্ঠানে পড়ে শোনানো হয়।
এ ছাড়া বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশ মিশনগুলোর প্রধানরা অনুষ্ঠানে সংযুক্ত ছিলেন।
এর আগে পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এবং ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকরা ফরেন সার্ভিস একাডেমি প্রাঙ্গণে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।