জাতীয় জাদুঘরের সংরক্ষণ কক্ষে (স্টোররুম) পড়ে থাকা ভাষাশহীদ আবদুস সালামের একমাত্র ছবিটি অবশেষে বিশেষ প্রদর্শনীতে আনা হয়েছে।
এক যুগের বেশি সময় ধরে আড়ালে থাকা ছবিটি সোমবার মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে জাতীয় জাদুঘরের প্রদর্শনীতে উপস্থাপন করা হয়।
এর আগে রোববার এই ছবি সংরক্ষণ কক্ষে পড়ে থাকা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউজবাংলা। তারপরই ছবিটি তড়িঘড়ি করে বিশেষ প্রদর্শনীতে আনা হয়।
সোমবার বেলা ১১টায় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান লবিতে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান। ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় জাদুঘরের সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা জানান, এক যুগের বেশি সময় ধরে শহীদ সালামের ছবিটি জাদুঘরের স্টোররুমে পড়েছিল। যেটা জাদুঘরের মূল গ্যালারি বা ভাষাশহীদ স্মরণে আয়োজিত বিশেষ প্রদর্শনীতেও আনা হয়নি।
তিনি জানান, রোববার দুপুরে জাদুঘরের দায়িত্বশীলদের কাছে শহীদ সালামের ছবি কোথায় আছে, তা কেন গ্যালারিতে রাখা হচ্ছে না- এ বিষয়ে জানতে চাওয়ার পর সংশ্লিষ্টদের তোড়জোড় শুরু হয়। সোমবার যে বিশেষ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে, এতে শেষ সময়ে শহীদ সালামের ছবিটি যুক্ত করা হয়।
বেলা ১২টার দিকে জাদুঘরের বিশেষ প্রদর্শনী ঘুরে দেখা গেছে, জাদুঘরে প্রবেশের পর ডান পাশে লবিতে ছোট পরিসরে এ আয়োজন করা হয়েছে। ভাষাশহীদ ও সৈনিকদের ২৬টি স্মৃতি নিদর্শন বিশেষ প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে।
ভাষা আন্দোলনের ২০টি দুর্লভ ছবি স্থান পেয়েছে এতে। জাদুঘরের মূল গ্যালারি ও স্টোর থেকে কিছু নিদর্শন আনা হয়েছে। বাকিগুলো গ্যালারি ও স্টোরে রয়েছে।
বিশেষ প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া নিদর্শনগুলোর মধ্যে রয়েছে ভাষাশহীদ আবদুস সালামের ছবি, ভাষাসংগ্রামী ড. সুফিয়া আহমেদের ব্যবহৃত চশমা, কলম ও বিভিন্ন সময়ে পাওয়া ক্রেস্ট; শহীদ সফিউর রহমানের গুলিবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত জামা, জুতা; ভাষা মতিনের ব্যবহৃত জিনিসপত্র, স্মারক, ভাষাসৈনিক হালিমা খাতুনের ব্যবহৃত খোলক, হাতঘড়ি, কলমদানি ও ডায়েরি। এ ছাড়া ৫২-্এর ভাষা আন্দোলন ও পরবর্তী সময়ের বেশ কিছু ছবি জাদুঘরের বিশেষ প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছে।
বিনা টিকিটে প্রদর্শনীটি ঘুরে দেখতে পারছেন সাধারণ দর্শনার্থীরা।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে দর্শনার্থীরা বিশেষ প্রদর্শনী ঘুরে দেখতে পারছেন বলে জানান জাতীয় জাদুঘরের ইতিহাস ও ক্লাসিক আর্ট বিভাগের সহকারী পরিচালক তাহমিদুন নবী। অন্য একটি প্রদর্শনী চলার কারণে এবার ছোট জায়গায় ভাষাশহীদদের বিশেষ প্রদর্শনী হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ভাষাশহীদ সালামের ছবি প্রসঙ্গে জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শহীদ সালামের ছবিটি আমরা বিশেষ প্রদর্শনীতে রেখেছি। প্রদর্শনী শেষে গ্যালারিতে রাখার ব্যবস্থা করা হবে।’
’৫২-এর ফাগুনে আগুনঝরা দুপুরে বুকের রক্তে ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা সালামের কোনো ছবিই আসলে ছিল না কারও সংগ্রহে। ভাষা আন্দোলনের ৪৯ বছর পর স্বজনদের বর্ণনা থেকে একজন চিত্রশিল্পী এঁকেছেন তার মুখ। সেই ছবিটিই শহীদ সালামের ছবি হিসেবে মেনে নেয়া হয়েছে।
২০০১ সালে বাঙালি জাতি প্রথমবারের মতো দেখতে পায় শহীদ আবদুস সালামকে। ভাই-বোনদের কাছ থেকে সালামের চেহারার বর্ণনা শুনে তার ছবিটি আঁকেন চিত্রশিল্পী শাহজাহান আহমেদ বিকাশ।
৩ ফিট বাই ২ ফিট ফ্রেমে অ্যাক্রেলিক রঙে আঁকা ছবিটির সঙ্গে শহীদ সালামের ৮০ ভাগের বেশি মিল রয়েছে বলে স্বীকৃতি দেন তার পরিবারের সদস্যরা। পরবর্তী সময়ে শহীদ আবদুস সালামের ছবিটি জাতীয় জাদুঘরকে উপহার দেয়া হয়।
সালামের এই একমাত্র ছবিটিই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভাষা আন্দোলন বা ভাষাশহীদদের স্মরণে আয়োজিত বিভিন্ন আয়োজন বা ব্যানারে ব্যবহার করা হয়। ছবিটি জাদুঘরের প্রদর্শনীতে না রেখে এতদিন স্টোররুমে ফেলে রাখা হয়েছিল।