উচ্চ আদালতের আদেশ বা রায় সাধারণত ইংরেজিতে হলেও ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে ৬৫৭টা রায় ও আদেশ বাংলায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ।
বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব রায় বা আদেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন উচ্চ আদালতের এক কর্মকর্তা।
পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬৫৭টি রায় বা আদেশ দিয়েছে ওই বেঞ্চ।
সংশ্লিষ্ট আদালতের এক বেঞ্চ অফিসার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে সবগুলো রায় ও আদেশ বাংলায় দিয়ে আসছেন মাননীয় বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন।
‘প্রতি বছর বাংলা ভাষার সম্মানে ফেব্রুয়ারিতে মাসজুড়ে যতগুলো রায় বা আদেশ দেন, তার সবগুলো বাংলায় দিয়ে থাকেন। এ বছর ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬৫৭টি আদেশ ও রায় বাংলায় দিয়েছেন।’
উচ্চ আদালতে এখনও সিংহভাগ রায় লেখা হয় ইংরেজিতে, তবে দিন দিন বাংলাভাষার রায়ও বাড়ছে।
আদালতে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার নিয়ে আইনজ্ঞরা বলছেন, কোন ভাষায় রায় বা আদেশ দেয়া হবে তা বিচারকের এখতিয়ার, তবে উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষা চালুর জন্য মানসিকতার পরিবর্তনের প্রয়োজন। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এ পদ্ধতি হুট করে বললেই পরিবর্তন হবে না।
ব্রিটিশদের কাছে থেকে আসা শত শত বছরে পুরোনো আইনেই চলছে আদালত। সে কারণে ইংরেজিতে মামলার ড্রাফটিংসহ যাবতীয় কাজ হয়ে আসছে। বিচারকরাও ইংরেজিতে রায় লিখে অভ্যস্ত। এখন এটি পরিবর্তন করতে হলে গোড়া থেকেই পরিবর্তন শুরু করতে হবে। তার আগে আইনের যাবতীয় বিষয় এবং শব্দমালা বাংলায় থাকতে হবে।
নব্বইয়ের দশকে উচ্চ আদালতে বাংলার ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়। প্রয়াত সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও বিচারপতি এম আমীরুল ইসলাম চৌধুরী বাংলায় কয়েকটি আদেশ ও রায় দিয়েছিলেন, কিন্তু তা আইন সাময়িকীতে প্রকাশ হয়নি।
১৯৯৮ সালে প্রকাশিত আইন সাময়িকীর (ঢাকা ল রিপোর্টস ৫০ ও ৫১ ডিএলআর) তথ্য অনুযায়ী, ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিচারপতি কাজী এবাদুল হক ও বিচারপতি হামিদুল হকের বেঞ্চ নজরুল ইসলাম বনাম রাষ্ট্র মামলায় বাংলায় রায় দিয়েছিল। একই সময়ে বিচারপতি হামিদুল হক অন্য একটি ফৌজদারি রিভিশন মামলায়ও বাংলায় রায় দেন।
বিভিন্ন সময় সাবেক বিচারপতি আবদুল কুদ্দুছ, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক, সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীসহ অনেকে বাংলায় বেশ কিছু রায় দেন।