আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে দিনাজপুর গোর-এ শহীদ বড়ময়দানের শহীদ মিনারে প্রথম প্রহর থেকেই ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান নানা শ্রেণিপেশার মানুষ।
তবে সকাল ১০টার মধ্যেই শহীদ মিনার থেকে উধাও শ্রদ্ধা জানানোর ফুল।
অভিযোগ উঠেছে, উপস্থিত স্কাউট ও পুলিশ সদস্যদের সামনে দিয়েই যে যার মতো ফুল ও ডালা নিয়ে চলে গেলেও তারা নীরব ছিলেন।
এদিকে ফুল উধাওয়ের সময় জুতা পায়ে শহীদ মিনারের বেদিতে ওঠার প্রতিবাদ করায় সাংবাদিকরা ১২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেনের রোষের মুখে পড়েন।
উপস্থিত কযেকজন জানান, রাত ১২টা ১ মিনিটে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে প্রথম শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম। এরপর জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী ও পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন শ্রদ্ধা জানান। পরে একে একে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শহরের বাসুনিয়াপট্টির জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে এক শোক র্যালি শহীদ মিনারের দিকে রওনা দেয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন হুইপ ইকবালুর রহিমসহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল ইমাম চৌধুরীসহ নেতাকর্মীরা।
তবে স্কাউট ও পুলিশ সদস্যদের সামনেই সকাল ১০টায় কিছু যুবক ও কিশোর শহীদ মিনার থেকে ফুল লুট করা শুরু করে। এ সময় দিনাজপুর পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির নেতা শাহাদাত হোসেন জুতা পরে শহীদ মিনারে ওঠার প্রতিবাদ করলে সাংবাদিকদের ওপর ক্ষিপ্ত হন তিনি। পরে অবশ্য ক্ষমা চেয়ে চলে যান।
কিছুক্ষণ পর আবারও কয়েকজনকে নিয়ে এসে সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণাত্মক হন। এ সময় সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা এসআই আল আমিন সাংবাদিকের ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে সরে পড়েন। পরে অবস্থানরত সাংবাদিকরা এগিয়ে এলে বিএনপি নেতা শাহাদাত ও তার লোকজন পালিয়ে যান।
দিনাজপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওয়াহেদুল আলম বলেন, ‘পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের কারণে এ বছর নানা অব্যবস্থাপনা দেখতে হলো আমাদের। তারা একুশে ফেব্রুয়ারি পালনে সঠিকভাবে ব্যবস্থা নেননি। এ ছাড়া দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশরা চেয়ারে বসেই সময় কাটাচ্ছেন।’
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রোভার স্কাউটের দায়িত্বপ্রাপ্ত সমন্বয় কারিমুল ইসলাম বলেন, ‘ভোর থেকে আমাদের সদস্যরা এখানে দায়িত্ব পালন করছেন। সকাল ১০টার সময় সব সদস্য পৌরসভার মোড়ে নাশতা করতে গেলে ফুলগুলো লুট করে নিয়ে যায় ছেলেমেয়েরা।
‘এ ছাড়া জুতা পরে শহীদ মিনারে না উঠতে বারবার মানা করা হয়েছে, তার পরও অনেকে আমাদের কথা শোনেনি।’
এদিকে সাংবাদিকদের ওপর বিএনপি নেতা আক্রমণাত্মক হলেও নীরব থাকায় শহীদ মিনারে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা এসআই আল আমিনকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি গণ্ডগোল মিটমাট করে দিয়েছি। পরে আবারও গণ্ডগোল লেগেছিল বুঝতে পারিনি।’
নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের ফোন নম্বরে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।