বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভাষাশহীদ বরকতের স্বজনদের আক্ষেপ

  •    
  • ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১১:০৬

ভাষাশহীদ বরকতের ভাতিজা আলাউদ্দিন বরকত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে ঘটা করে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো, গ্রন্থমেলা, সভা-সেমিনার সব কিছুরই আয়োজন করা হয়। কিন্তু এসব অনুষ্ঠানে উপেক্ষিত ভাষাশহীদদের পরিবার। ফেব্রুয়ারি মাস এলেই তাদের খোঁজ নেন সবাই। অন্য সময় আর কেউ তাদের খোঁজ রাখেন না।’

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আবুল বরকত। এরপর কেটে গেছে ৭০টি বছর। কিন্তু এত বছর পরও শহীদ বরকতের স্বজনদের কণ্ঠে আক্ষেপ আর অভিমান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়ায় স্বজনদের আক্ষেপটা যেন একটু বেশি। কারণ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই বরকতের নামে নেই কোনো হল। দেশের কোথাও এই ভাষাশহীদের ম্যুরাল স্থাপন করা হয়নি। গাজীপুরে শহীদ বরকত স্টেডিয়াম এবং মায়ের কবর ছাড়া আর কোনো স্মৃতিচিহ্নও নেই।

স্বজনরা জানান, ১৯২৭ সালের ১৩ জুন (মতান্তরে ১৬ জুন) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুর থানার বাবলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবুল বরকত। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষে ১৯৪৫ সালে তালিবপুর হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৪৭ সালে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন তিনি।

১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে চতুর্থ হয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং একই বিভাগে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন বরকত। ভাষা আন্দোলন শুরু হলে তাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন তিনি। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলের সামনে আমতলায় সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মিপরিষদের ডাকে সমাবেশে যোগ দেন তিনি।

১৪৪ ধারা ভেঙে ছাত্র-জনতার স্লোগানে কম্পিত হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সেখানেই একপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে বিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান বরকত। পরে তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।

দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে বরকত ছিলেন সবার বড়। ১৯৬৩ সালের ২১ জুলাই তার বাবা শামসুদ্দিন মিয়া ভারতে মারা যান। পরের বছর ১৯৬৪ সালে মা হাসিনা বানু ভারত থেকে সপরিবারে বাংলাদেশে চলে এসে গাজীপুর মহানগরের চান্দনা গ্রামে নিবাস গড়েন। শহীদ বরকতের একমাত্র ছোট ভাই আবুল হাসনাত ১৯৬৮ সালে মারা যান। এরপর ১৯৮২ সালে মারা যান মা হাসিনা বানু।

মায়ের কবর ছাড়া গাজীপুরে তেমন কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই ভাষাশহীদ আবুল বরকতের। তবে তার কিছু ছবি, হাতে লেখা চিঠি ও স্মৃতি বাঁচিয়ে রেখেছেন তার ভাতিজারা। সেসব স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলাশী মোড়ে স্থাপিত শহীদ বরকত স্মৃতি জাদুঘরে হস্তান্তর করেছেন স্বজনরা।

১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন গাজীপুরের চান্দনা গ্রামসংলগ্ন নলজানি মৌজায় বরকতের মা হাসিনা বানুকে ৬৮ শতাংশ জমি দেন। ওই জমির একাংশে পরিবারের সদস্যরা নিজ উদ্যোগে শহীদ বরকত স্মরণে বরকত স্মৃতি পাঠাগার ও একটি মসজিদ এবং অন্য অংশে দোকান নির্মাণ করেন। এ জমিরই এক পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন বরকতের মা হাসিনা বানু।

প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি শাহাদাতবার্ষিকীতে শহীদ বরকত স্মরণে এখানে পরিবারের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা। এ বছরও স্বল্প পরিসরে সেসব কর্মসূচির আয়োজন করেছে পরিবার।

শহীদ বরকতের ভাতিজা আলাউদ্দিন বরকত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে ঘটা করে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো, গ্রন্থমেলা, সভা-সেমিনার সব কিছুরই আয়োজন করা হয়। কিন্তু এসব অনুষ্ঠানে উপেক্ষিত ভাষাশহীদদের পরিবার। ফেব্রুয়ারি মাস এলেই তাদের খোঁজ নেন সবাই। অন্য সময় আর কেউ তাদের খোঁজ রাখেন না।’

আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘যারা ভাষার জন্য শহীদ হলেন তাদের পরিবারের কোনো সদস্যকেই বাংলা একাডেমিতে একুশে বইমেলার কোনো অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয় না। রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিশেষ দিনগুলোয় (বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস ইত্যাদি) বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধাদের কুশল বিনিময়ের ব্যবস্থা করা হলেও ভাষাশহীদ পরিবারের সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো হয় না। ২১ ফেব্রুয়ারিতে রাষ্ট্রীয়ভাবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দেয়ার অনুষ্ঠানেও তাদের কোনো আমন্ত্রণ জানানো হয় না।

তিনি আরও বলেন, ‘১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে যে কয়জন শহীদ হয়েছেন, তাদের মধ্যে একমাত্র আবুল বরকতই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার নামে কোনো হলই নেই।’ তাই তাদের দীর্ঘদিনের আশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হল হবে বরকতের নামে। গাজীপুরে হবে স্মৃতি জাদুঘর ও ভাস্কর্য এবং প্রাথমিক পাঠ্যবইয়ে স্থান পাবে শহীদ বরকতের সংক্ষিপ্ত জীবনী।

তাদের আক্ষেপ, ২০০০ সালে মরণোত্তর একুশে পদক পেলেও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা স্বীকৃতি ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ জোটেনি ভাষাশহীদদের ভাগ্যে।

গাজীপুরের স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে শহীদ বরকতের নামে। তবে এখানেও সংক্ষিপ্ত কোনো ইতিহাস তুলে ধরা হয়নি তার।

স্টেডিয়ামে খেলতে আসা শিক্ষার্থী মৃদুল বলেন, ‘আবুল বরকত কীভাবে শহীদ হয়েছেন কিংবা তার বাড়ি কোথায় কেউ জানে না। স্টেডিয়ামের মূল ফটকে ছোট অক্ষরে শুধু নাম ছাড়া শহীদ বরকতের কোনো স্মৃতিচিহ্নই নেই।’

এ বিভাগের আরো খবর