বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মেয়রের ভাবনায় ‘টেকসই উচ্ছেদ’

  •    
  • ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ২১:০০

সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘ফুটপাত দখলমুক্তের অভিযান চলে, আপনারা দেখেন না। আমরা সকালে তাদের উঠিয়ে দিলাম, বিকেলে তারা আবার বসল, এটা তো সমাধান না। আমরা দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই উচ্ছেদের জন্য কাজ করছি। বন্দরনগরীর সব ফুটপাত স্থায়ীভাবে দখলমুক্ত করতে চাই।’

হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থ বিবেচনায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন দুই বছর আগে ফুটপাতে জায়গা বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। মেয়র বদল হওয়ায় সে সিদ্ধান্ত দেখেনি আলোর মুখ। তবে ফুটপাতের দখল থেমে থাকেনি। দখলদাররা এখন ইচ্ছে-খুশিমতো ফুটপাতে দোকান তৈরি করায় নগরবাসীকে হাঁটতে হয় ব্যস্ত সড়ক দিয়ে।

সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম ফুটপাত দখলমুক্ত করতে ‘টেকসই উচ্ছেদ’ নিয়ে কাজ করছেন বলে দাবি করেছেন।

সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, ২০২০ সালের অক্টোবরে নগরীর ব্যস্ততম টেক্সটাইল এলাকায় ফুটপাত থেকে দখলদার উচ্ছেদে অভিযান চলে। এর কয়েক মাস পরই সেখানে ফুটপাতে বৈধভাবে দোকান বরাদ্দের সিদ্ধান্ত হয়।

২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়, ভাসমান ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের জন্য টেক্সটাইল গেট, শেরশাহ ও তারা গেট এলাকার ফুটপাতে দোকান তৈরি করা হবে। সে সময়ের প্রশাসক খোরশেদুল আলম সুজনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকৌশল বিভাগকে জায়গা চিহ্নিত করতে বলা হয়। এরপর এস্টেট শাখা থেকে দোকান বরাদ্দ দেয়ার কথা বলা হয় চিঠিতে।

সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফুটপাতে যিনি দোকানের জায়গা বরাদ্দ পাবেন, তিনি নিজ খরচে নির্ধারিত জায়গায় দোকান নির্মাণ করবেন। আর মাস চুক্তিতে ভাড়া আদায় করবে সিটি করপোরেশন। যদিও সিদ্ধান্তটি পরে আর বাস্তবায়ন হয়নি।

সাবেক প্রশাসক খোরশেদুল আলম সুজন এ বিষয়ে বলেন, ‘আমি দায়িত্বে থাকাকালে ফুটপাতে দোকান তৈরির অনুমতি দেয়া হয়নি। কাউকে বরাদ্দ দেয়া হয়নি।’

ফুটপাতজুড়ে দোকান থাকায় নগরবাসীকে হাঁটতে হয় ব্যস্ত সড়ক দিয়ে। ছবি: নিউজবাংলা

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বন্দরনগরীতে এক দশক আগে থেকে ফুটপাত দখল হয়ে আসছে; যা চরমে পৌঁছলে মেয়র আ জ ম নাছিরের আমলে কয়েক দফায় উচ্ছেদ অভিযান চলে। এ জন্য তিনি হকারদের আন্দোলনের মুখেও পড়েন। সে সময়েই হকারদের পুনর্বাসনের বিষয় আলোচনায় আসে।

মেয়র নাছির তখন শহরের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত হকার বসতে পারবে বলে জানান। আর ফুটপাতের পুরোটা দখল করা যাবে না, পথচারীদের চলাচলের জন্য একটি অংশ উন্মুক্ত রাখতে হবে বলে শর্ত দেন তিনি। হকারদের জন্য ভ্যান চালুর উদ্যোগও নেন তিনি।

মেয়র নাছিরের মেয়াদেই এসব পদক্ষেপ ঝিমিয়ে পড়ে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ফের হকার ও ভাসমান ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যায় ফুটপাত। এরপর ফুটপাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা করেন সিটি প্রশাসক খোরশেদুল আলম সুজন। তিনি বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ফুটপাতে বসার সময় নির্ধারণ করে দেন। এতেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

এদিকে নতুন মেয়র দায়িত্ব নেয়ার এক বছর পেরিয়ে গেলেও ফুটপাত দখলমুক্ত করার তেমন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর ফুটপাত দখলে নিয়ে সেখানে অবৈধভাবে ভাড়া আদায় করছেন প্রভাবশালীরা।

নগরীর জিইসি নূরবাগ এলাকার বাসিন্দা জিল্লুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ছোডকালে বই-পুস্তকত পইজ্জিদি রাস্তাত আড়ন পরে যে ফুটপাত দি। এখন চিটাং শরঅত একখান ফুটপাতও নাই, যিয়েনদি কিনা নিরাপদে হাড়ন যইবো। তোঁয় কেউরে কিছু হইতও ন পারিবা, যাতো ফুটপাত হিতারার বাপর দিইন্না সম্পদ।’

নগরীর অক্সিজেন এলাকার বাসিন্দা বেলাল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অক্সিজেন থেকে কুয়াইশ যাওয়ার সড়কে ফুটপাতের চিহ্ন দেখা যায় না। পুরোটাই দখলে রেখেছেন ভাসমান সবজি ব্যবসায়ী ও হকাররা। কথিত বড়ভাইদের চাঁদা দিয়েই তাদের বসতে হয় ফুটপাতে।’

ফুটপাত দখল করে বিভিন্ন দোকান, তাই রাস্তা দখল করে ব্যবসা করছেন হকাররা। ছবি: নিউজবাংলা

নিউ মার্কেট এলাকায় ১০ বছর ধরে ফুটপাতে কাপড়ের ব্যবসা করছেন হকার এনামুল হোসেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তো এখানে শখে বসি না, পেট বাঁচানোর জন্য বসি। প্রতিদিন ৫০-১০০ টাকা দিতে হয় নেতাদের। কেউ কিছু বললে তারা দেখে, আমাদের কিছু নাই এখানে।’

ফুটপাতে ব্যবসা করতে যেসব নেতার টাকা দিতে হয়, তাদের নাম বলতে রাজি হননি তিনি।

কিছুদিন আগে ফুটপাতে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে মির্জাপুল এলাকায় আরিফ নামে এক যুবককে কুপিয়ে ও ইট দিয়ে আঘাতে জখম করেন ওয়াহিদুল নামে একজন। এই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রামের ফুটপাত বাণিজ্যের বিষয়টি ফের আলোচনায় আসে।

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ারা আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নাছির সাহেবের সময় দখলদারদের উচ্ছেদে চেষ্টা হয়েছিল কয়েকবার, কিন্তু উচ্ছেদ হয়নি। কারণ ফুটপাত দখলের যে সুবিধা, তার ভাগ সবার কাছে যায়। বর্তমান মেয়রের কাজ করার সদিচ্ছা থাকলেও সমন্বয়ের অভাব দেখছি। ফুটপাত দখল নিয়ে লড়াই করলে সর্বশক্তি দিয়ে করতে হবে।’

ফুটপাত দখলমুক্ত করতে সিটি করপোরেশনের চেষ্টা অব্যাহত আছে জানিয়ে সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফুটপাত দখলমুক্তের অভিযান চলে, আপনারা দেখেন না। আমরা সকালে তাদের উঠিয়ে দিলাম, বিকেলে তারা আবার বসল, এটা তো সমাধান না। আমরা দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই উচ্ছেদের জন্য কাজ করছি। বন্দরনগরীর সব ফুটপাত স্থায়ীভাবে দখলমুক্ত করতে চাই।’

এ বিভাগের আরো খবর