বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দুর্নীতিসহ শরীফের বিরুদ্ধে দুদকের ১৩ অভিযোগ

  •    
  • ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৯:৩৫

শরীফের বিরুদ্ধে নামকাওয়াস্তে তদন্ত, দায়ীদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ করার মতো বিস্তারিত তথ্য তুলে না ধরা, অভিযানে জব্দ প্রায় এক কোটি টাকা কোষাগারে জমা না দিয়ে এক বছর নিজের কাছে রাখা, ভাই ও স্বজনকে প্রভাব খাটিয়ে চাকরি দেয়া, তদন্ত ও অনুসন্ধান চলাকালে সন্দেহভাজনদেরকে ডেকে এনে শারীরিকভাবে প্রহার করা, কমিশনের আদেশ অবজ্ঞার অভিযোগ আনা হয়।

শরীফ উদ্দিন চৌধুরীকে দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালকের পদ থেকে অপসারণ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে ১৩টি কারণ উল্লেখ করে বিস্তারিত বক্তব্য দিয়েছে দুর্নীতি নির্মূলে কাজ করা সংস্থাটি।

প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় চাকরিচ্যুতি- এমন অভিযোগকে ভিত্তিহীন উল্লেখ করে রোববার প্রায় আড়াই হাজার শব্দের একটি ব্যাখ্যা গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তুলে ধরেছেন দুদক সচিব মাহাবুব হাসান।

তিনি বলেন, ‘অপসারণের আদেশ জারির পর থেকেই বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় বিষয়টি প্রচারিত হচ্ছে। মূলত একতরফা তথ্যের ভিত্তিতেই এই সংবাদসমূহ প্রচারিত হচ্ছে, যা প্রকৃত ঘটনার বিপরীত।’

দুর্নীতি চেষ্টার নানা ঘটনায় শরীফের প্রতিবেদন দেয়ার বিষয়ে বলা হয়, ‘দায়িত্ব পালন কালে, যে কোনো অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্ত করে প্রতিবেদন দিবেন, এটাই স্বাভাবিক।’

‘গুরুত্বপূর্ণ বা কম গুরুত্বপূর্ণ যাই হোক না কেন, দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত সব কর্মচারীই নির্ভয়ে এবং নির্মোহভাবে দায়িত্বপালন করে থাকেন। কিন্তু জনাব মো. শরীফ উদ্দিনের মতন কোন অজুহাত তারা উত্থাপন করেন না।’

দুদকের ব্যাখ্যায় শরীফের বিরুদ্ধে নামকাওয়াস্তে তদন্ত, দায়ীদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ করার মতো বিস্তারিত তথ্য তুলে না ধরা, অভিযানে জব্দ প্রায় এক কোটি টাকা কোষাগারে জমা না দিয়ে এক বছর নিজের কাছে রাখা, ভাই ও স্বজনকে প্রভাব খাটিয়ে চাকরি দেয়া, তদন্ত ও অনুসন্ধান চলাকালে সন্দেহভাজনদেরকে ডেকে এনে শারীরিকভাবে প্রহার করা, কমিশনের আদেশ অবজ্ঞার অভিযোগ আনা হয়।

শরীফের নানা কর্মকাণ্ডে উচ্চ আদালতও অসন্তুষ্ট ছিল বলেও জানায় দুদক। একাধিক ঘটনা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ এসেছে বলেও উল্লেখ আছে ব্যাখ্যায়। একটি ঘটনায় হাইকোর্ট শরীফের কর্মকাণ্ডকে ‘আরেক দুর্নীতি’ বলে উল্লেখ করেছে।

দুদক সচিব বলেন, এসব কার্যকলাপ অন্য কর্মচারীদের শৃঙ্খলার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে নিরুৎসাহিত করতে পারে।

কক্সবাজার জেলার জমি অধিগ্রহণ বিষয়ে ২০২০ সালের ১০ মার্চ দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শরীফ উদ্দিন যে প্রতিবেদন দিয়েছেন, তাতে কমিশন বিধিমালা ২০০৭ এর বিধি-১০(৪) এর নির্দেশনা অনুসৃত হয়নি। প্রতিটি ঘটনায় কে, কখন, কীভাবে কী অপরাধ করেছে এবং অপরাধটি সংগঠনের সঙ্গে আসামিদের দায় সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়নি। আসামিদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত ক্রিমিনাল চার্জ সমর্থনে সাক্ষ্য প্রমাণাদি সুস্পষ্টকরণ করা হয়নি। যাদেরকে অভিযোগের দায় হতে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে, তাদেরকে কেন অব্যাহতি প্রদান করা হবে, তার ব্যাখ্যা প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হয়নি। এছাড়াও অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি ও দায়সাড়া গোছের প্রতিবেদনের কারণে কমিশন কর্তৃক তা বিবেচিত হয়নি। পরে দুই সদস্যের টিম গঠন করে মামলাটির পুনঃতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি শরীফকে চাকরি থেকে অপসারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি হয়। এরপর দুদকের কর্মকর্তা থাকাকালে নানা আলোচিত দুর্নীতির চেষ্টার অভিযোগের বিষয়ে তার তদন্তের বিষয়টি সামনে আসে। তিনি প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় চাকরিচ্যুতির শিকার হয়েছেন- এমন অভিযোগ জোরাল হয়ে উঠে।

দুর্নীতি ও সুশাসন নিয়ে কাজ করা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ- টিআইবি এক বিবৃতিতে শরীফকে অপসারণের পেছনে কারণ জানতে চায়। বিএনপি অভিযোগ করে, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় তাকে চাকরি থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

এর মধ্যে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দুদক সচিব গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, শরীফের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। তবে সেগুলো প্রকাশ্যে বলা হবে না। এর তিন দিন পর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিল সংস্থাটি।

শরীফ উদ্দিন নিউজবাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেছেন, প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় তিনি রোষানলের শিকার হয়েছেন।

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক এমডি আইয়ুব খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে হত্যার হুমকি দেয়া ও ‘চাকরি খেয়ে দেয়ার’ হুমকি দেয়ার অভিযোগও করেছেন শরীফ উদ্দিন।

শরীফ উদ্দিন ২০১৭ সালে কর্ণফুলী গ্যাসের বিভিন্ন অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর কেডিসিএল কর্তৃপক্ষকে তার আপন ছোট ভাই শিহাব উদ্দিন সবুজকে কোনো বিজ্ঞাপন ছাড়াই ২০১৮ সালের ১ আগস্ট ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে চাকরি দেন। বর্তমানে আইটি ডিপার্টমেন্টে কর্মরত আছেন। এরপর ভাইয়ের চাকরি স্থায়ী বরতে সবাইকে চাপ দিচ্ছিলেন। তিনি সেখানে তার আত্মীয় মুহাম্মদ শাহাব উদ্দিনকে জাল সনদের মাধ্যমে ড্রাইভার পদে চাকরি দিয়েছেন। এ নিয়ে এখন তদন্ত চলছে।

গত ৩০ জানুয়ারি এ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয় চট্টগ্রামের খুলশী থানায়। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, শরীফের বাসায় আইয়ুব খান চৌধুরীর যাওয়ার বিষয়টি সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। তবে তিনি হুমকি দিয়েছেন, এমন সিদ্ধান্তে এসে তদন্ত এখনও শেষ করা যায়নি। ‍

এ বিষয়ে দুদক সচিব বলেন, শরীফ যে সাধারণ ডায়েরি করেছেন, সে বিষয়ে তিনি কাউকে জানাননি। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ দেখে তাকে দাপ্তরিক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন আছে কি না জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি কর্তৃপক্ষের কোনো সহযোগিতা নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেননি। হুমকি দেয়া হলে কমিশন ব্যবস্থা নিতে পারত।

দুদকের যে ১৩ অভিযোগ

১. শরীফ উদ্দিন কোনো অনুসন্ধান বা তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া মাত্র দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত নির্দেশিকা অনুসরণ না করে নিজের খেয়ালখুশি মতো কাজ করতেন।

২. অনুসন্ধান বা তদন্তের সময় অভিযোগের সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট নয়, এরকম বহু ব্যক্তিকে নোটিশ করে বা টেলিফোনে ডেকে এনে তাদের হয়রানি করতেন, যার প্রমাণ রয়েছে।

৩. অনুসন্ধান ও তদন্তের স্বার্থে ব্যাংক হিসাব স্থগিতের প্রয়োজন হলে তার সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। কমিশনের সম্মতিতে আদালতের আদেশেই কেবল এটা করা যায়। শরীফ উদ্দিন এই নিয়মের তোয়াক্বা করতেন না এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতেনও না।

৪. তিনি দুদকের চট্টগ্রাম-২ এ কর্মরত থাকাকালে আদালতের অনুমতি ছাড়া স্যোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের, কক্সবাজার শাখার হিসাব নম্বর ০৩৯৫৩১০০১৭১৮১ স্থগিত করেন। এই বেআইনি কার্যকলাপকে চ্যালেঞ্জ করে বেলায়েত হোসেন নামে একজন হাইকোর্টে রিট করেন। গত ২৭ জুন এক আদেশে এই ব্যাংক হিসাব স্থগিতের আদেশকে এখতিয়ারবহির্ভূত উল্লেখ করে।

তার (শরীফ) এ ধরনের কার্যকলাপ ক্ষমতার অপব্যবহার, কর্তব্যে অবহেলা, অসদাচরণ ও অদক্ষতার পর্যায়ে পড়ে।

কমিশনকে পাস কাটিয়ে এবং আদালতের অনুমতি ছাড়া লিখিতভাবে ২৫টি ও মৌখিকভাবে ৮টিসহ মোট ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছেন শরীফ।

এক নিকটাত্মীয়কে প্রভাব খাটিয়ে নিয়ম বহির্ভুতভাবে কর্ণফুলী গ্যাসে চাকরি দেয়া, অবৈধ অর্থ উপার্জন, অনুসন্ধানের নামে অভিযোগে সংশ্লেষ না থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন ব্যক্তিকে নোটিশ প্রদান করে ডেকে এনে হয়রানি করা ও অর্থ আদায় করা, প্রভাব খাটিয়ে নিজের শাশুড়ির নামে অবৈধ গ্যাস সংযোগ গ্রহণসহ অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি পটুয়াখালীতে অবস্থানকালে দুদকের পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে হয়রানির অভিযোগও পাওয়া গেছে।

৫. ২০২০ সালের ১০ মার্চ কক্সবাজারে একজন সার্ভেয়ারের বাসায় অভিযান চালিয়ে র‌্যাব ঘুষের ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ১৫০ টাকা জব্দ করে। সেই টাকা তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে শরীফ উদ্দিনের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়। আলামত হিসেবে জব্দ করা টাকা তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে ১ বছর ৪ মাস নিজের হেফাজতে রেখেছেন।

‘দুদক কর্মকর্তার ক্ষমতার অপব্যবহার, রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়নি ঘুষের ৯৩ লাখ টাকা’ শিরোনামে গত ৭ অক্টোবর জাতীয় দৈনিকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনটি হাইকোর্টের দৃষ্টিগোচরে এলে সুয়োমোটো রুল জারি করা হয়। এরপর আদালত শরীফের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেয়।

জব্দ করা অর্থ জমা না করার বিষয়ে শরীফ যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাও অগ্রহণযোগ্য। জব্দকৃত অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক বা ট্রেজারিতে জমা করার সুনির্দিষ্ট বিধান আছে এবং এ ধরনের মামলায় সকলেই তা অনুসরণ করে।

৬. শরীফ উদ্দিন একটি মামলায় অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তার জবানবন্দি গ্রহণের জন্য তার দপ্তরে ডেকে এনে নির্মমভাবে প্রহার করেছেন, এ রকম একটি অভিযোগ দুদকে আসে। দুদকের তদন্তে তা প্রমাণিতও হয়েছে। এ ধরনের বহু অভিযোগ রয়েছে। বহু ব্যক্তি তার কাছে নিগৃহীত হয়েছেন।

শরীফের বেপরোয়া মনোভাবের জন্য কেউ প্রকাশ্যে বা লিখিতভাবে অভিযোগ জানাতে সাহস করেননি বলেও দুদকের ব্যাখ্যায় বলা হয়।

২০২০ সালের ১০ মার্চ মো. ইদ্রিস নামে এক সিআইপিকে (কমার্শিয়ালি ইম্পরটেন্ট পারসন) জনাব শরীফ উদ্দিন চট্টগ্রামে দুদকের জেলা কার্যালয়ে এনে মারধর করার সুষ্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে।

২০২০ সালের ১০ মার্চ কক্সবাজারে একজন সার্ভেয়ারের বাসায় অভিযান চালিয়ে র‌্যাব ঘুষের ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ১৫০ টাকা জব্দ করে। সেই টাকা তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে শরীফ উদ্দিনের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়। আলামত হিসেবে জব্দ করা টাকা তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে ১ বছর ৪ মাস নিজের হেফাজতে রেখেছেন। দুদক কর্মকর্তার ক্ষমতার অপব্যবহার, রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়নি ঘুষের ৯৩ লাখ টাকা’ শিরোনামে গত ৭ অক্টোবর জাতীয় দৈনিকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনটি হাইকোর্টের দৃষ্টিগোচরে এলে সুয়োমোটো রুল জারি করা হয়। এরপর আদালত শরীফের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেয়।

৭. চট্টগ্রাম দুদক কার্যালয়ে শরীফ উদ্দিন তিন বছর চাকরি করার পর আরও ২০ জন কর্মচারীর সঙ্গে তাকে বদলি করা হয়। এই আদেশ তিনি ছাড়া সবাই যথাসময়ে কার্যকর করেন। কিন্তু এই আদেশের বিরুদ্ধে তার পক্ষে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার শহিদুল ইসলাম লিটন নামে একজন মানবাধিকারকর্মী (যে প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা ভুয়া) হাইকোর্টে রিট করেন।

হাইকোর্ট রিট খারিজ করা সত্ত্বেও কয়েকটি জাতীয় ও চট্টগ্রামের স্থানীয় পত্রিকায় ‘হাইকোর্টের আদেশের প্রেক্ষিতে বদলি আদেশ স্থগিত’ শিরোনামে অসত্য সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে সংবাদপত্রগুলো দুঃখ প্রকাশ করে তা আদালতকে জানায়।

কয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় কয়েকটি দৈনিকে আসা খবর আদালতের নজরে এলে হাইকোর্টের বিচারপতি এ বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করে দুদক আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এটি আরেক দুর্নীতি, এটি তদন্ত করেন’।

বদলি স্থগিত সংক্রান্ত ভুয়া কপি সরবরাহ করা এবং তার ভিত্তিতে ভুল সংবাদ পরিবেশন করার পেছনে জড়িতদের বের করতে দুদককে তদন্ত করতে বলেছে আদালত। বিচারক বলেছেন, এই ঘটনার সুবিধাভোগী হতেন শরীফ উদ্দিন।

৮. শরীফ উদ্দিনকে ২০২১ সালের ১৬ জুন চট্টগ্রাম-২ থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়। অন্য সকলেই যথাসময়ে আদেশ পালন করলেও শরীফ উদ্দিন একমাস পর ১৭ জুলাই ই-মেইলযোগে যোগদানের কথা জানান, পরে ১০ আগস্ট সশরীরে পটুয়াখালীতে উপস্থিত হন। এই বিলম্বের কারণ হিসাবে লকডাউন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

দুদক বলেছে, ‘ইমেইলে যোগদান তো তিনি বদলি আদেশ প্রাপ্তির পর নির্ধারিত সময়ে করতে পারতেন। বিলম্বে যোগদান করে তিনি কমিশনের আদেশ অবজ্ঞা করেছেন।’

৯. বদলির পর কর্মস্থল ত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে সব রেকর্ডপত্রসহ নথি যথাযথভাবে বুঝিয়ে দেয়ার বিধান রয়েছে। তা সত্ত্বেও শরীফ উদ্দিন চট্টগ্রাম কার্যালয়ে তার দায়িত্বে থাকা অনুসন্ধান ও তদন্তের নথি হস্তান্তর করেননি। প্রায় তিন মাস পর তাকে পটুয়াখালী থেকে ডেকে নিয়ে আসা হলে গত ২৯ আগস্ট তিনি নথি হস্তান্তর করেন। এই তিন মাস নথিগুলোর অনুসন্ধান বা তদন্ত করা সম্ভব হয়নি।

শরীফ উদ্দিনের বার্ষিক মূল্যায়ন বা এসিআরে কেন তার কার্যক্রমকে ‘অতি উত্তম’ বলা হয়েছিল- সে প্রশ্নে সচিব বলেন, ‘সম্ভবত ২০১৪ সালে তিনি যোগ দিয়েছিলেন। স্বভাবগত কারণে তাদের উৎসাহিত করার জন্য এবং তখন যেসব কাজকর্ম করেছেন, সেটির মূল্যায়ন করা হয়েছিল (এসিআরে অতি উত্তম লেখা হয়েছিল)।

১০. রোহিঙ্গাদের এনআইডি ও পাসপোর্ট প্রদান বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন তিনি। সেই দলে শরীফ উদ্দিন ছিল সর্বকনিষ্ট সদস্য। একজন পরিচালকের নেতৃত্বে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৬ সদস্যের সমন্বয়ে দলটি গঠন করা হয়। তবে সর্বকনিষ্ট সদস্য হওয়া সত্ত্বেও তিনি বিভ্রান্ত করে চলেছেন যে, তিনি সব উদঘাটন করেছেন।

১১. কক্সবাজার জেলার জমি অধিগ্রহণ বিষয়ে ২০২০ সালের ১০ মার্চ দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শরীফ উদ্দিন যে প্রতিবেদন দিয়েছেন, তাতে কমিশন বিধিমালা ২০০৭ এর বিধি-১০(৪) এর নির্দেশনা অনুসৃত হয়নি।

প্রতিটি ঘটনায় কে, কখন, কীভাবে কী অপরাধ করেছে এবং অপরাধটি সংগঠনের সঙ্গে আসামিদের দায় সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়নি। আসামিদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত ক্রিমিনাল চার্জ সমর্থনে সাক্ষ্য প্রমাণাদি সুস্পষ্টকরণ করা হয়নি। যাদেরকে অভিযোগের দায় হতে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে, তাদেরকে কেন অব্যাহতি প্রদান করা হবে, তার ব্যাখ্যা প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হয়নি। এছাড়াও অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি ও দায়সাড়া গোছের প্রতিবেদনের কারণে কমিশন কর্তৃক তা বিবেচিত হয়নি। পরে দুই সদস্যের টিম গঠন করে মামলাটির পুনঃতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।

১২. স্বাস্থ্য খাতের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, বদলি, নিয়োগ বাণিজ্য, ক্লিনিক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে শরীফ উদ্দিনের জমা দেয়া অনুসন্ধান প্রতিবেদনের সঙ্গে তার তদারককারী কর্মকর্তাই দ্বিমত পোষণ করেছেন।

বিশেষ করে টেন্ডারে অনিয়ম সংক্রান্তে মালামালের গুণগত মানের তথ্য, জড়িত ব্যক্তিদের সুনির্দিষ্ট সম্পৃক্ততা, মূল্যায়ন কমিটির দায়-দায়িত্ব, আর্থিক বছর, সরকারি জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়নি। পরে দুই সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করে নতুন করে অনুসন্ধান করতে বলা হয়েছে।

১৩. শরীফ উদ্দিন ২০১৭ সালে কর্ণফুলী গ্যাসের বিভিন্ন অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর কেডিসিএল কর্তৃপক্ষকে তার আপন ছোট ভাই শিহাব উদ্দিন সবুজকে কোনো বিজ্ঞাপন ছাড়াই ২০১৮ সালের ১ আগস্ট ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে চাকরি দেন। বর্তমানে আইটি ডিপার্টমেন্টে কর্মরত আছেন। এরপর ভাইয়ের চাকরি স্থায়ী বরতে সবাইকে চাপ দিচ্ছিলেন। তিনি সেখানে তার আত্মীয় মুহাম্মদ শাহাব উদ্দিনকে জাল সনদের মাধ্যমে ড্রাইভার পদে চাকরি দিয়েছেন। এ নিয়ে এখন তদন্ত চলছে।

এক নিকটাত্মীয়কে প্রভাব খাটিয়ে নিয়ম বহির্ভুতভাবে কর্ণফুলী গ্যাসে চাকরি দেয়া, অবৈধ অর্থ উপার্জন, অনুসন্ধানের নামে অভিযোগে সংশ্লেষ না থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন ব্যক্তিকে নোটিশ প্রদান করে ডেকে এনে হয়রানি করা ও অর্থ আদায় করা, প্রভাব খাটিয়ে নিজের শাশুড়ির নামে অবৈধ গ্যাস সংযোগ গ্রহণসহ অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি পটুয়াখালীতে অবস্থানকালে দুদকের পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে হয়রানির অভিযোগও পাওয়া গেছে।

শরীফের অভিযোগ খণ্ডন

দুদক সচিব বলেন, ‘অপরাধ ও কর্মের দায় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শরীফ উদ্দিন কিছু মামলাকে গুরুত্বপূর্ণ মামলা বলে প্রচার করে সেই মামলা/ অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে মূল্যায়ন করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসাবে দাবি করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছেন, তাই প্রভাবশালীদের চাপে তাকে অন্যায়ভাবে তাকে অপসারণ করা হয়েছে মর্মে তিনি দাবি করেছেন এবং মিডিয়ায় তাই প্রচার করা হয়েছে, যা প্রকৃত ঘটনা নয়।

‘কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের কিছু মামলায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দুর্নীতি উদ্ঘাটনের কারণে তাদের প্রভাবে তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে এটা মোটেও সত্য নয়।’

দুদকের ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘বাস্তবতা বিবেচনায় কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে কর্মরত জেলা পর্যায়ের ব্যক্তিদের আর কতটুকুই বা প্রভাব থাকতে পারে! কমিশনের প্রায় সকল অনুসন্ধান ও তদন্তকারী কর্মচারী চট্টগ্রাম বা কক্সবাজারের সংশ্লিষ্ট মামলায় উল্লিখিত অভিযুক্ত বা আসামি অপেক্ষা অনেক গুরুত্বপূর্ণ/ উঁচু পদ পদবির ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আদালতে বিচারের পর তাদের সাজাও হয়েছে। কিন্তু তারা কেউ এ ধরনের অভিযোগ উত্থাপন করেননি। তাদের কারও কারণে কমিশনকে এভাবে বিব্রত হতে হয় না।’

প্রশ্নের মুখোমুখি দুদক সচিব

লিখিত ব্যাখ্যা উপস্থাপন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন দুদক সচিব।

তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির তদন্তে প্রভাবশালীদের নাম আসায় তাদের চাপে শরীফকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে যেসব বলা হচ্ছে, তা মোটেও সত্য নয়।...চাকরিবিধি না মানার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’

অন্য এক প্রশ্নে মাহবুব হোসেন বলেন, ‘কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের কিছু মামলায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দুর্নীতি উদ্ঘাটনের কারণে তাদের প্রভাবে তাঁকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে, এটা মোটেও সত্য নয়। দুর্নীতি দমন কমিশন কোনো প্রভাব আমলে নেয় না এবং প্রভাবিত হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে না।’

আরেক প্রশ্নে দুদক সচিব বলেন, ‘আপনি কমিশনের নিয়ম মানবেন না, অনুমোদন ছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করবেন। আমার কোনো কিছুই আপনি মানবেন না, কমিশন কেন আপনাকে রাখবে? তিনি যদি চাকরিবিধি না মানেন, অফিস ব্যবস্থাপনা না মানেন, তাহলে তো হার্ডলাইনে যেতেই হবে।’

শরীফ উদ্দিনের বার্ষিক মূল্যায়ন বা এসিআরে কেন তার কার্যক্রমকে ‘অতি উত্তম’ বলা হয়েছিল- সে প্রশ্নে সচিব বলেন, ‘সম্ভবত ২০১৪ সালে তিনি যোগ দিয়েছিলেন। স্বভাবগত কারণে তাদের উৎসাহিত করার জন্য এবং তখন যেসব কাজকর্ম করেছেন, সেটির মূল্যায়ন করা হয়েছিল (এসিআরে অতি উত্তম লেখা হয়েছিল)।

‘পরবর্তী সময়ে যেসব তথ্য-উপাত্ত আপনাদের দিয়েছি, আপনি আজ যে অবস্থানে আছেন, এক দিন পর, দুই দিন পর সে অবস্থানে থাকবেন কি না, তা আপনিও জানেন না, আমিও জানি না। তার সিকোয়েন্সিয়াল যে মূল্যায়ন, সেটা তো আমলে নিতে হবে।

‘এটা তো আমার চাকরির পার্ট, শুধু ওই একটা দেখে, বাকি সব ওভারলুক করার তো সুযোগ নেই।’

এ বিভাগের আরো খবর