ভাষাশহীদ আবদুস সালামের স্মৃতিরক্ষায় ফেনীতে ২০০৮ সালে তার গ্রাম সালামনগরে একটি গ্রন্থাগার ও জাদুঘর নির্মাণ করা হয়। তবে নির্মাণের ১৩ বছর পেরোলেও আজও পূর্ণতা পায়নি এটি। একজন গ্রন্থাগারিক ও একজন কেয়ারটেকার নিয়োগ দেয়া হলেও নিয়মিত খোলা হয় না গ্রন্থাগার ও জাদুঘরটি।
জেলা পরিষদ কার্যালয় সূত্র জানায়, শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞায় জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে ভাষাশহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ করা হয়।
২০০৮ সালে সাবেক উপদেষ্টা আনোয়ারুল ইকবালের উদ্যোগে প্রায় ৬৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করা হয়। এডিপির অর্থায়নে এলজিইডির অধীনে ফেনী জেলা পরিষদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে।
গ্রন্থাগারটি উদ্বোধন করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। ওই বছরের ২৬ মে গ্রন্থাগারটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর প্রায় ৫ হাজার মূল্যবান বই গ্রন্থাগারে দেয়া হয়।
২০১১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি শহীদ আবদুস সালামের ছোট ভাইয়ের মেয়ে খাদিজা বেগমকে লাইব্রেরিয়ান ও স্থানীয় শেখ ফরিদকে কেয়ারটেকার পদে নিয়োগ দেয়া হয়।
স্থানীয় সাংবাদিক কারি ইফতেখারুল আলাম জানান, নামে জাদুঘর হলেও এর ভেতরে ভাষাশহীদ সালামের একটি ছবি ছাড়া আর কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই। গ্রন্থাগারে চার-পাঁচ হাজার বই থাকলেও সেখানেও উপেক্ষিত শহীদ সালাম। তাকে নিয়ে একটি বইও দেখা যায়নি সেখানে।
প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস এলে জাদুঘরটি ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু সারা বছর এখানে আর কোনো কর্মকাণ্ড থাকে না। অনেক সময় দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা জাদুঘরটি দেখতে এসে শহীদ সালামের কোনো স্মৃতিচিহ্ন না পেয়ে হতাশ হন।
স্থানীয় ইয়াছিন রনি জানান, স্থানীয়দের সঙ্গে সমন্বয়হীনতার কারণেও গ্রন্থাগারে পাঠকের সংখ্যা কম। এখানে ইতিহাস, দেশের স্বাধিকার আন্দোলন, দর্শন, সাহিত্য, ধর্ম, কবিতা, উপন্যাস ও গল্পের বই ছাড়াও রয়েছে বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী নিয়ে অসংখ্য বই।
বেশির ভাগ বই দেশের প্রথিতযশা লেখকদের লেখা। বেশির ভাগ বই দেখে মনে হয়, বইগুলো একবারও পড়া হয়নি। তবে গ্রন্থাগারের ভেতরে কোথাও ভাষাশহীদ সালামকে নিয়ে লেখা কোনো বই দেখা যায়নি।
দর্শনার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহ নেওয়াজুল ইসলাম তায়েফ বলেন, ‘শহীদ সালামের ব্যবহৃত কোনো জিনিসপত্রও এখানে নেই। ভাষাশহীদ সালামের ওপর গবেষণা প্রয়োজন।’
স্থানীয় রহমত উল্যাহ জানান, গ্রন্থাগারটি নিয়মিত খোলা হয় না। লাইব্রেরির জন্য পাওয়া বইগুলো আলমারিতে তোলা হয়নি। এ ছাড়া প্রাপ্ত বইগুলোর কোনো তালিকাও করা হয়নি। গ্রন্থাগারে স্থানীয় বা জাতীয় কোনো পত্রিকা রাখা হয় না।
এ ছাড়া ছোট ফেনী নদীর জোয়ার-ভাটার ফলে ভাঙনে গ্রন্থাগার ও জাদুঘরে যাওয়ার সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়দের কয়েকজন জানান, গ্রন্থাগারটির উদ্যোগে স্থানীয়দের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতি সপ্তাহে বা প্রতি মাসে একবার পাঠচক্রের ব্যবস্থা করা হলে মানুষের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ তৈরি হতো। কিন্তু বছরে শুধু ২১ ফেব্রুয়ারি এলেই জাদুঘরে মানুষের আনাগোনা হয়। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রধান অনুষ্ঠানটি জাদুঘর প্রাঙ্গণেই হয়।
ভাষাশহীদ সালামের ছোট ভাই আবদুল করিমের দাবি, দীর্ঘদিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লক্ষ্মণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ভাষাশহীদ সালামের নামে করা হয়। বিদ্যালয়টি অষ্টম বা দশম শ্রেণি পর্যন্ত করা গেলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা আরও বাড়বে। তারা এ গ্রন্থগারেরও সদস্য হতে পারে।
দাগনভূঞা ইউএনও নাহিদা আক্তার তানিয়া বলেন, ‘শহীদ সালামের কোনো স্মৃতিচিহ্ন না থাকায় জাদুঘরে তা সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। তবে এখানে মানুষকে বই পড়তে আসতে উদ্বুদ্ধ করতে বই পড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে।’
ভাষাশহীদ সালাম পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক শাহাদাত হোসেন জানান, শহীদ সালাম শুধু ফেনীর নন, সমগ্র দেশের অহংকার। তাকে যে পরিমাণ মূল্যায়ন করা দরকার তা করা হচ্ছে না। তবে এ বছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে সালামনগরে ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং করা হবে।