একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারজয়ী কবি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী রোজী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে যে সাহসী ভূমিকা দেখিয়েছেন তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কাজী রোজীর মৃত্যুতে পৃথক শোকবার্তায় তারা এমন কথা বলেছেন।
রোববার ভোর ৫টা ৫ মিনিটে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কাজী রোজী। তিনি বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কাজী রোজী তৎকালীন জামায়াতের রাজনীতিক আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের চতুর্থ সাক্ষী হিসেবে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। নানা প্রতিকূল পরিবেশেও তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ছিলেন তৎপর।
শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘কাজী রোজী তার লেখনীর মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে কাজ করে গেছেন। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়ায়ও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।’
রাষ্ট্রপতি কাজী রোজীর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার শোকবার্তায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে কাজী রোজীর সাহসী ভূমিকার কথা তুলে ধরেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের পক্ষ থেকে পাঠানো শোকবার্তায় বলা হয়, ‘কবিতার পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে তার (কাজী রোজী) সাহসী ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
শোকবার্তায় কবি ও সাবেক এমপির মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন। কবির আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী।
কাজী রোজীর জীবন ও কর্ম
১৯৪৯ সালের ১ জানুয়ারি বর্তমান বাংলাদেশের সাতক্ষীরায় জন্মগ্রহণ করেন কবি কাজী রোজী। তার বাবার নাম কাজী শহীদুল ইসলাম।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন কাজী রোজী। কর্মজীবনে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ২০০৭ সালে তথ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হিসেবে অবসর নেন রোজী।
কবি হিসেবে কাজী রোজীর অভিষেক ষাটের দশকে। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলো হলো ‘পথঘাট মানুষের নাম’, ‘নষ্ট জোয়ার’, ‘আমার পিরানের কোনো মাপ নেই’, ‘লড়াই’। এ ছাড়া ‘শহীদ কবি মেহেরুন নেসা’ নামে জীবনীগ্রন্থ এবং ‘রবীন্দ্রনাথ: রসিকতার কবিতা’ নামের গবেষণাগ্রন্থেরও রচয়িতা কাজী রোজী।
কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার এবং ২০২১ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক পান কাজী রোজী।
২০১৪ সালে সংরক্ষিত নারী আসনে (আসন নম্বর-৪৩) এমপি নির্বাচিত হন কাজী রোজী। জাতীয় সংসদের গ্রন্থাগার সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।