বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পাঠ্যপুস্তক আছে, চর্চা নেই চাকমা বর্ণমালার

  •    
  • ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ২১:৫৫

‘আমাদের চাকমাদের নিজস্ব ব্যঞ্জনবর্ণ ও স্বরবর্ণ রয়েছে। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে হয় বাংলা ভাষায়। চাকমা ভাষার চর্চা কমে যাচ্ছে। চাকমা বর্ণমালা ও ভাষা আমরা হারাতে বসেছি।’

চাকমা বর্ণমালাগুলোর মধ্যে চুচ্যাঙা-কা, গুজঙ্যা-খা, পিজপুঝা-আ, বুগতপদলা-মাসহ ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৯টি ও স্বরবর্ণ ১১টি। তবে এসব বর্ণমালার ব্যবহার জানেন না শিক্ষিত চাকমারা। এ ভাষায় বইপত্র লেখা হয় না বললেই চলে। কারণ স্কুলে এ ভাষা শেখানোর যথেষ্ট উদ্যোগ নেই সরকারের। প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর ব্যবস্থা আছে, কিন্তু তা দায়সারা।

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, দেশে চাকমা জনগোষ্ঠী ৪ লাখ ৪৪ হাজার। সে হিসাবে বাংলার পরেই এ দেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষাভাষী চাকমারা।

চাকমা ভাষা ও বর্ণমালা সংরক্ষণের জন্য রাঙ্গামাটিতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে ‘চাকমা ভাষা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ হিলর ভালেদী এবং হিলর প্রডাকশনসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন।

রাঙ্গামাটির স্থানীয় হিলর প্রডাকশনের সংগঠকরা বলেন, ভাষার চর্চা, বর্ণমালাগুলোর ব্যবহার, বাংলা এবং ইংরেজি ভাষার সঙ্গে সংমিশ্রণ ও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ না নেয়াসহ বিভিন্ন কারণে চাকমাদের নিজস্ব মাতৃভাষা, বর্ণমালা ও সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। শুধু চাকমা সম্প্রদায় নয়, মারমা ও ত্রিপুরাদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।

হিলর ভালেদী ও হিলর প্রডাকশনের চাকমা বর্ণমালা প্রশিক্ষক সুজন চাকমা নিউজবাংলাকে জানান, ২০১৭ সাল থেকে কয়েক বছর ধরে নিজেদের উদ্যোগে তারা কাজ করছেন। সরকারের পক্ষ থেকে কেউ এগিয়ে না আসায় বন্ধ করে দিতে হয়েছে তাদের বিনা মূল্যে চাকমা বর্ণমালা প্রশিক্ষণ কর্মশালা।

চাকমা ভাষা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষক সুবেশ চাকমা বলেন, ‘চাকমা ভাষা ও বর্ণমালা রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রকৃত চাকমা শব্দগুলো ব্যবহার ও প্রয়োগ করতে হবে। অনেকে চাকমাদের সব বর্ণমালা তাদের ছাত্রছাত্রীদের শেখান না। এ কারণে অনেকে প্রকৃতভাবে চাকমা বর্ণমালা কয়টি জানেন না।’

পহেলী চাকমা বলেন, ‘আমাদের চাকমাদের নিজস্ব ব্যঞ্জনবর্ণ ও স্বরবর্ণ রয়েছে। ব্যঞ্জনবর্ণগুলোর মধ্যে আছে চুচ্যাঙা-কা, গুজঙ্যা-খা, পিজপুঝা-আ, বুগতপদলা-মা। তবে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে হয় বাংলা ভাষায়। এ কারণে চাকমা ভাষার চর্চা কমে যাচ্ছে। এ কারণে চাকমা বর্ণমালা ও ভাষা আমরা হারাতে বসেছি।’

প্রিয়াংকা চাকমা বলেন, ‘আমরা চাকমা। পড়ালেখা করতে হয় বাংলা ভাষা দিয়ে। অন্যদের সঙ্গে বাংলা ভাষায় কথা বলতে কঠিন লাগে। তবে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে নিজেদের সংগঠন হিলর ভালেদী ও হিলর প্রডাকশনের নিজস্ব উদ্যোগে কাজ করে আসছি। জেলা পরিষদ, ক্ষৃদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটসহ সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো পৃষ্ঠপোষকতা নেই এ ক্ষেত্রে।’

মণিকা চাকমা বলেন,‘বাইরে গেলে আমরা নিজস্ব ভাষায় কথা বলতে পারি না। সরকারিভাবে যদি সহযোগিতা করা হয়, তাহলে চাকমা বর্ণমালা এবং ভাষা শেখা ও পড়ার সুযোগ হবে।’

অভিনেতা ও সংগঠক সুমন চাকমা বলেন, ‘হিলর ভালেদী ও হিলর প্রডাকশন সংগঠন থেকে বিনা মূল্যে চাকমা বর্ণমালা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় এ কার্যক্রম বন্ধ করতে হয়েছে।’

শিক্ষক মতিময় চাকমা বলেন,‘ছাত্রছাত্রীরা ভাষাটা শুধু মুখস্থ করছে। বিশ্লেষণ করতে বললে তারা বোঝে না। এ ক্ষেত্রে চাকমা, বাংলা কোনোটাই সঠিকভাবে বলতে পারছে না তারা। প্রাক-প্রাথমিকে চাকমা বর্ণমালা ও ভাষা শেখানোর ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, মাতৃভাষাকে অস্বীকার করে আমরা অন্য ভাষায় অভ্যস্ত হচ্ছি। যারা বেশি শিক্ষিত, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা বেশি এ ভাষাকে হারিয়ে ফেলছে। তারা চাকমা ভাষার ভেতর বাংলা, ইংরেজি শব্দ ঢুকিয়ে দিচ্ছে। এ কারণে চাকমাদের মাতৃভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ভাষা ও বর্ণমালা টিকিয়ে রাখতে শিক্ষিত সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।’

রকবিব ছড়া বটতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা বলেন,‘আমাদের নিজস্ব বর্ণমালা, ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে। কিন্তু সঠিক মূল্যায়নের কারণে আমাদের ভাষা হারাতে বসেছি। সরকার যদিওবা পার্বত্যাঞ্চলে চাকমাদের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করেছে, সেগুলো সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। কেননা সেগুলো পরীক্ষার সময় নম্বরভিত্তিক মূল্যায়ন করা হয়নি।

‘তিন জেলার চাকমা আওয়াতাধীন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের চাকমা ভাষায় দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ ও চাকমা শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। এ ছাড়া প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক সৃজনশীল করে চাকমা ভাষাকেও আবশ্যিক পরীক্ষার বিষয়ে পরিণত করতে হবে – তবেই বর্ণমালা ও ভাষা টিকে থাকতে পারে।’

ভাষা শিক্ষার জন্য আলাদা শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে সরকার ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে বলে নিউজবাংলাকে জানান রাঙ্গামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন। আপাতত যে শিক্ষক যে ভাষায় কথা বলেন, সেই ভাষায় পাঠদানের জন্য এক হাজার শিক্ষককে ১৪ দিনের একটি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

সাজ্জাদ হোসেন জানান, পার্বত্য এলাকায় তিনটি প্রধান কমিনিউটি চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা। তাদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত নিজস্ব বর্ণমালার পাঠ্যপুস্তক দেয়া হয়েছে। ২০১৭ সালে প্রথমে প্রাক-প্রাথমিক, ২০১৮ সালে প্রথম শ্রেণি, ২০১৯ সালে দ্বিতীয় শ্রেণি এবং ২০২০ সালে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বই বিতরণ করা হয়। ২০২২ সালেও তাদের নিজস্ব ভাষায় রচিত পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর