আর্থিক খাতে যোগ্যতা, দক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা না গেলে অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে জানিয়েছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী, ঋণখেলাপি, করখেলাপি, বিলখেলাপি, দুর্নীতিবাজরা যেন আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সে বিষয়ে নতুন নির্বাচন কমিশনকে দৃঢ় অবস্থান দেখাতে হবে।’
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এফডিসি) শনিবার ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের সদিচ্ছা’ শীর্ষক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘ব্যাংকগুলো মধ্যরাতে সভা করে ঋণখেলাপিদের দায়মুক্তি দিয়ে নির্বাচন করার সুযোগ দেয়া নৈতিকতাবিরোধী। যে পরিমাণ ঋণ আদায় করা হয় তার চেয়ে অনেক বেশি অবলোপন করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিং সেক্টরে ১০ শতাংশ ঋণখেলাপির যে তথ্য দেয়া হয় সেটি সঠিক নয়। কোনো ঋণখেলাপি যাতে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্সের সদস্য হতে না পারে সে বিষয়ে ব্যাংক মালিকদের সতর্ক থাকতে হবে। একই সঙ্গে ঋণখেলাপি ও আর্থিক খাতে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক ঘৃণা ছড়িয়ে দিতে হবে।’
আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সদিচ্ছা ও যোগ্যতার অভাব রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। বলেন, ‘ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় জড়িত প্রভাবশালীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা এড়িয়ে চলে।
‘গণতন্ত্র ও সুশাসনের পাশাপাশি আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা বজায় রাখা টেকসই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন টেকসই হবে না।’
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা দিনে দিনে ক্যানসারের রূপ ধারণ করছে। যা আমাদের জাতীয় অর্থনীতির পরিধি সংকুচিত করছে। আর্থসমাজিক খাতে বাংলাদেশের উন্নয়ন অব্যাহত থাকলেও আর্থিক খাতের অনিয়ম আমাদের জন্য একটি কালো অধ্যায়। অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে সরকার গর্ববোধ করলেও ব্যাংকিং খাতের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা লজ্জিত হই।’
আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা রক্ষায় ১০ দফা সুপারিশ করেন তিনি।
সুপারিশগুলো হলো
অর্থপাচার প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন গঠন। দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ সব দুর্নীতিবাজদের তালিকা জাতীয় সংসদসহ গণমাধ্যমে প্রকাশ করা।
ব্যাংকিং খাতের আত্মসাৎকৃত অর্থ আদায়ে ও অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন। ঋণ জালিয়াতি ও অর্থপাচার রোধে সর্বদলীয় রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলা। বড় ঋণখেলাপিরা যেন কেউ বিদেশে যেতে না পারে সেজন্য নৌ, স্থলব ও বিমানবন্দরগুলোতে ঋণখেলাপিদের তালিকা পাঠানো।
রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালক নিয়োগ না দিয়ে দক্ষ, পেশাদার ব্যক্তিকে নিয়োগ। ব্যাংকিং খাতে অভিজ্ঞ নয় এমন ব্যক্তিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদে নিয়োগ না দেয়া। নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তা যাচাই করে অনুমোদন দিতে হবে।
লোকসানে নিপতিত ব্যাংকগুলো সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য বিশেষ কমিটি গঠন এবং সুইস ব্যাংকসহ বিদেশে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ ও পাচারকারীদের নাম সংগ্রহের জন্য সমঝোতা চুক্তি করা।
বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সমান নম্বর পেয়ে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা যৌথভাবে বিজয়ী হয়।