করোনা মহামারির মধ্যে অর্থপ্রবাহ স্বাভাবিক ছিল বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবির।
শনিবার ঢাকা চেম্বার আয়োজিত ‘বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বাংলাদেশের অর্থনীতির সামগ্রিক পর্যালোচনা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘অর্থ সংস্থানে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক।’
অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সংস্কার কার্যক্রম এখনও চলমান আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প অর্থনীতির ইঞ্জিন। তাই সামনের দিনের জন্য এই শিল্প বিকাশের বিকল্প নেই।’
গভর্নর আরও বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি এখন আলোচনার নাম। কিন্তু এটি বৈশ্বিক সমস্যা। খাদ্য, খাদ্যবহির্ভূত এবং সেবা- সব খাতেই এখন মূল্যস্ফীতির উত্তাপ।’
তিনি জানান, দেশের রপ্তানি বাণিজ্য এখন গার্মেন্টস-নির্ভর। এ ক্ষেত্রে বিকেন্দ্রীকরণের বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় খাত হতে পারে কৃষি, সিরামিক, চামড়া, আইটি, ওষুধ এবং পাট এবং পাটজাত পণ্য।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রহমান।
গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ‘কোভিড দেশের অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জে ফেলেছে। বিশেষ করে বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা বেশি বিপাকে পড়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক সময়মতো প্রণোদনা প্যাকেজসহ বিভিন্ন ধরনের নীতি নিয়েছে, যা সংকট কাটিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়তা নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিডার সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। বিশেষ করে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার আরও উন্নয়নের মাধ্যমে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যয় অনেকাংশে কমানো সম্ভব।’
রপ্তানি খাতের প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে গভর্নর জানান, পাট ও চামড়াজাত পণ্যের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনতে হবে। পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি উল্লেখ করে এই খাতের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
মূল প্রবন্ধে রিজওয়ান রহমান বলেন, ‘করোনার সংকট কাটিয়ে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া মসৃণ হতে হবে। বিশেষ করে শিল্প খাত (ক্লাস্টার) ধরে ঋণ সুবিধা দিতে হবে, যেন ওই খাতটি করোনার ধাক্কা সামলে উঠে দাঁড়াতে পারে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে একটি সমীক্ষা করা দরকার। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যা শিল্প খাতের খরচ বাড়াবে। যৌক্তিকভাবে দাম বাড়ানো উচিত।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী কোভিড মহামারি থাকা সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-ডিসেম্বর, ২০২১) বাংলাদেশের অর্থনীতির পথচলা বেশ আশাব্যঞ্জক, তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতি, রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ, নীতি সহায়তা, মানবসম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধি, লজিস্টিক অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং সর্বোপরি সাপ্লাই চেইনে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ একান্ত অপরিহার্য।
তিনি বলেন, ‘কোভিড-পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী ভোগ্যপণ্যের সাপ্লাই চেইনের ওপর বেশি মাত্রায় চাপ পড়ায় আমাদের দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ও কাঁচামাল আমদানিতে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় বাজারে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে, এমতাবস্থায় বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে আমদানিকারকদের ঋণ সহায়তা ও আমদানিকৃত পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক হ্রাস করা হলে সাধারণ জনগণ এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে দেশের কর কাঠামাকে সাময়িক সময়ের জন্য পুনর্বিন্যাস না করলে সামনের রমজান মাসে আরও ভোগান্তি বাড়বে। শিল্প খাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে শিক্ষা ও শিল্প খাতের সমন্বয় আরও সম্প্রসারণের আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আমরা আগেই শুল্ক-কর কমানোর সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু সুপারিশ রাখা হয়নি। এসব কারণে এখন বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। সামনে পবিত্র রমজান, এখনই দ্রব্যমূল্য নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মেট্রোপলিটান চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি সাইফুল ইসলাম, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআিই) সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় ও ঢাকা চেম্বারের সহসভাপতি আরমান হক।