বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কৃষকের মুখে ‘সূর্যমুখীর হাসি’

  •    
  • ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৫:৫৯

ফয়সাল বলেন, ‘আমার বন্ধু শিবলী ও নাঈমের কথায় সূর্যমুখীর এই বাগানে এসেছি। সবধরনের ফুল ভালো লাগলেও চারদিকে ফসলি জমির মাঝখানে একসঙ্গে অসংখ্য সূর্যমুখী ফুল ফোটায় সৌন্দর্য বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। সময়টা অনেক ভালো কেটেছে।’

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলায় সূর্যমুখী ফুল চাষে ব্যাপক সম্ভবনা দেখছেন কৃষকরা।

কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় এ ফুল চাষে ঝুঁকছেন তারা। ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিনই ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা।

উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের নয়াগাঁও গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর হাসান রতন ও মামুন মিয়া।

গত বছর সূর্যমুখীর এক কেজি বীজ পরীক্ষামূলকভাবে বপন করেছিলেন তারা। খরচ বাদে অর্ধেক লাভ হওয়ায় এবারও চাষ করেছেন সূর্যমুখী।

ফুল দেখতে এসে অনেক দর্শনার্থীর অসতর্কতায় মারা পড়ছে গাছ। তবুও কাউকে বাধা দিচ্ছেন না কৃষক। আনন্দ-উল্লাস করে বাড়ি ফিরছেন সবাই।

দৃষ্টিনন্দন ফুলের এ বাগান দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন স্থানীয় অন্য কৃষকরাও।

সূর্যমুখী ফুল দেখার সময় হুমায়ুন কবির নামে এক যুবকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নান্দাইল পৌর শহর থেকে কয়েকজন বন্ধু বাইকে করে ময়মনসিংহের জয়নুল আবেদীন পার্কে ঘুরতে এসেছিলাম৷ ফেসবুকে হঠাৎ দেখতে পাই, এই ফসলি জমিতে চাষ করা হয়েছে সূর্যমুখী। হলুদ ফুলগুলো দেখতে এখানে এসেছি। নয়ন জুড়ানো সৌন্দর্য দেখে আরও বেশি ভালো লেগেছে।’

ঢাকায় র‌্যাব সদর দপ্তরে চাকরি করেন ফয়সাল জেমি। ছুটি পেয়ে ঈশ্বরগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে এসে এ বাগানেও তিন বন্ধুকে নিয়ে তিনিও ঘুরতে এসেছেন।

ফয়সাল বলেন, ‘আমার বন্ধু শিবলী ও নাঈমের কথায় সূর্যমুখীর এই বাগানে এসেছি। সবধরনের ফুল ভালো লাগলেও চারদিকে ফসলি জমির মাঝখানে একসঙ্গে অসংখ্য সূর্যমুখী ফুল ফোটায় সৌন্দর্য বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। সময়টা অনেক ভালো কেটেছে।’

এখানে এসেছেন জাহিদ ও রুম্পা দম্পতি। তারা জানান, গৌরীপুর পৌর শহরেই থাকেন তারা। শহরের কোলাহল ছেড়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে দুজন ঘুরতে এসেছেন। স্মৃতি ধরে রাখতে অনেক ছবিও তুলেছেন।

সূর্যমুখী ফুল চাষি জাহাঙ্গীর হাসান রতন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গতবছর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সূর্যমুখী চাষের পরামর্শ দেন। এ সময় সরকারি প্রণোদনায় এক কেজি বীজ দিয়েছিলেন। বীজগুলো চাষ করে খরচ বাদে অর্ধেক লাভ হয়েছে। এ জন্য এবারও যোগাযোগ করে বীজ সংগ্রহ করে ২০ শতাংশ জমিতে চাষ করেছি। এবার আরও বেশি ফুল ফুটেছে।’

তিনি বলেন, ‘নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সারিবদ্ধভাবে বীজ বপন করা হয়েছে। বীজ বপনে থেকে পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত ৯৫ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দু’বার সেচ দিতে হয়।

‘অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। আগামীতে আরও বড় পরিসরে সূর্যমুখী চাষ করব।’

কৃষক মামুন মিয়া বলেন, ‘সূর্যমুখী চাষ সম্পর্কে কৃষকদের ধারণা না থাকায় এ ফুল চাষাবাদে কেউ আগ্রহ প্রকাশ করে না। কিন্তু আমরা প্রথম চাষ করায় স্থানীয় কৃষকরা বাগান দেখতে আসছেন। আমরাও তাদেরকে চাষ সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছি। কৃষি কর্মকর্তাদের সঠিক পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা পেলে আগামীকে বহু কৃষক সূর্যমুখী চাষ করবে বলে জানিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সমস্যা হচ্ছে, সূর্যমুখীর তেল উৎপাদনের মেশিন এ অঞ্চলে নেই। ফলে সরিষা ভাঙানোর মেশিনেই সূর্যমুখী তেল উৎপাদন করতে হয়। যদি সূর্যমুখী তেল উৎপাদনের মেশিন থাকত, তাহলে উপজেলায় প্রতিবছর সূর্যমুখী চাষ বাড়বে।’

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক আব্দুস সালাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘‘সূর্যমুখীর তেলে আছে ভিটামিন ‘ই’, ভিটামিন ‘কে’- এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন, আছে মিনারেল। মুখের যত্নে দাঁতের জন্য উপকারী একমাত্র তেল। ডায়াবেটিসের রোগী, উচ্চ রক্তচাপের রোগী, কিডনি রোগীর জন্যও সূর্যমুখীর তেল নিরাপদ। চমৎকার এনার্জির উৎসও সূর্যমুখীর তেল। অর্থাৎ সূর্যমুখীর তেল পুষ্টিগুণে অন্য সব তেল থেকে শ্রেষ্ঠ।’’

উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মুক্তাদির হাসান বলেন, ‘সূর্যমুখী ফুলের বীজের রঙ কালো। প্রতিটি মাথায় বীজের সংখ্যা থাকে ৫০০-৬৫০টি। এক একর জমিতে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক একর জমিতে প্রায় এক টন বীজ উৎপাদন হয়। এক টন বীজ ৮৫ থেকে ৯০হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।’

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপপরিচালক মতিউজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জেলায় ২১ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। এর মধ্যে গৌরীপুর উপজেলায় মাত্র ২ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। সূর্যমুখীতে রোগবালাই খুব কম হয়। এ ছাড়া এটি চাষে লাভ বেশি হওয়ার ধারণা কৃষকরা জানেনা বিধায় চাষে আগ্রহী হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘এ ফুলের বাগান যাতে আরও বৃদ্ধি পায় সেজন্য চাষীদের সবধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হবে। প্রয়োজনে বিনামূল্যে বীজ বিতরণ করা হবে। আগামীতে আরও কয়েক হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ বাড়বে।’

এ বিভাগের আরো খবর