বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রভাবশালীদের রোষানলের শিকার: শরীফ উদ্দিন

  •    
  • ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৬:৪৭

‘চাকরি থেকে অপসারণের মতো কোনো কাজ আমি করিনি। চট্টগ্রামে সাড়ে তিন বছর কর্মরত ছিলাম। সেখানে অতি গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর কিছু মামলা এবং অনুসন্ধান করেছি। এসব করতে গিয়ে একটি প্রভাবশালী মহলের রোষানলে পড়ি। সর্বশেষ ৩০ জানুয়ারি বাসায় এসে হুমকি দেয়। একপর্যায়ে তারা এটাও বলে, এক সপ্তাহের মধ্যে চাকরি খেয়ে নেবে। কাকতালীয় হলেও সত্য, ১৬ দিনের মাথায় আমাকে অপসারিত হতে হলো।’

আলোচিত নানা দুর্নীতির ঘটনা তদন্ত করে প্রশংসা কুড়ানো দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন চৌধুরী বিশ্বাস করতে পারছেন না তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। নিউজবাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, চাকরি থেকে অপসারণের মতো কোনো কাজ তিনি করেননি। তিনি প্রভাবশালীদের রোষানলের শিকার হয়েছেন।

শরীফ দুর্নীতি দমন কমিশনের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে থাকার সময় নানা তদন্ত চালিয়ে আলোচিত হন। তাকে সেখান থেকে বদলি করা হয় পটুয়াখালীতে। বুধবার রাতে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় তাকে।

বৃহস্পতিবার শরীফের আদেশটি গণমাধ্যমে আসার পর তোলপাড় পড়ে যায়। দুদকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই আদেশকে সরকারি চাকরিবিধি, দুদকের চাকরিবিধি ও মানবাধিকার পরিপন্থি আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাহারের দাবিতে সংস্থাটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনও করেন।

পরে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন দাবি করেন, শরীফের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। তিনটি অভিযোগের তদন্ত চলছে। আরও ৭ থেকে ১০টি অভিযোগ রয়েছে। তবে এগুলো প্রকাশ্যে বলবেন না তিনি।

শরীফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাকে যে চাকরি থেকে অপসারণ করা হবে, এটা আমি এক সেকেন্ডের জন্যও আঁচ করতে পারিনি।

‘১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে আমি পটুয়াখালীতে অফিস করছিলাম। ওই সময় আমার এক সহকর্মী জানান, একটি চিঠি এসেছে। বলা হয়, দ্রুত এটি রিসিভ করে ঢাকায় পাঠাতে হবে। তখনই চিঠিটি রিসিভ করে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে চলে আসি।’

শরীফ বলেন, ‘চাকরি থেকে অপসারণের মতো কোনো কাজ আমি করিনি। চট্টগ্রামে সাড়ে তিন বছর কর্মরত ছিলাম। সেখানে অতি গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর কিছু মামলা এবং অনুসন্ধান করেছি। এসব করতে গিয়ে একটি প্রভাবশালী মহলের রোষানলে পড়ি।

‘সর্বশেষ ৩০ জানুয়ারি বাসায় এসে হুমকি দেয়। একপর্যায়ে তারা এটাও বলে, এক সপ্তাহের মধ্যে চাকরি খেয়ে নেবে। কাকতালীয় হলেও সত্য, ১৬ দিনের মাথায় আমাকে অপসারিত হতে হলো।’

কোন সে প্রভাবশালী মহল?

এই প্রশ্নের জবাব দিতে চান না শরীফ। বলেন, ‘তারা কারা, সেটি আমি বলব না। কক্সবাজারে তিনটি প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে আমি একটি মামলা করি। যার তদন্ত ও চার্জশিট আমি জমা দিয়েছিলাম। ওই প্রকল্পসংশ্লিষ্ট একশ্রেণির টাউট-দালাল রয়েছে। এ চক্রটি কক্সবাজারে খুব বিখ্যাত ও প্রভাবশালী। এদের মধ্যে রাজনীতিক নেতা, পুলিশ, অ্যাডমিন ও সাংবাদিক আছে। এখান থেকে সবাই কমিশন পায়।

শরীফ উদ্দিনের চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদে সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা মানববন্ধন করেন। ছবি: সংগৃহীত

‘র‌্যাব ও ডিজিএফআই ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ভূমি অফিসের দুজন সার্ভেয়ারের বাসায় অভিযান চালিয়ে সাত বস্তার চেয়ে বেশি আলামত ও প্রায় নগদ ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ১৫০ টাকা জব্দ করে৷ ওই নথিগুলো যাচাই করে আমি প্রমাণ পেয়েছি, এই টাউট সিন্ডিকেট চক্রটি কক্সবাজার এলএ অফিস নিয়ন্ত্রণ করে।

‘অনুসন্ধানে যাদের নাম এসেছে, তার মধ্যে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। যাদের অনেকেই কোর্টে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। সেখান থেকে যাদের নাম এসেছে তাদের সম্পদ অনুসন্ধানের সুপারিশ করেছি।’

শরীফ জানান, তিনি পটুয়াখালীতে বদলি হওয়ার দিন চট্টগ্রামে রিপোর্ট জমা দেন। বলেন, ‘তখন থেকেই তারা বুঝে গেছে এই মামলা থেকে তারা রেহাই পাবে না। যদিও এর আগে তারা আমার সঙ্গে সমাঝোতার চেষ্টা করে। কিন্তু আমি তাতে রাজি হইনি।’

দুদকের অপসারিত উপপরিচালকের ধারণা, এই চক্রটিই তাকে সরানোর পেছনে লেগেছিল।

কক্সবাজার-বান্দরবানে ভোটার নিবন্ধন ইস্যু

এই প্রকল্প নিয়েও অনুসন্ধান করেছিলেন শরীফ। তার চাকরি থেকে অপসারণের পেছনে এ বিষয়টিও কাজ করে থাকতে পারে বলে ধারণা তার।

তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার ও বান্দরবানে ৩২টি উপজেলাকে ইসি স্পেশালাইজড জোন অফ রোহিঙ্গা করে। এসব উপজেলায় ভোটার নিবন্ধন করার সময় খুব যাচাই-বাছাই করা হয়। এটিকে পুঁজি করে এখানকার পলিটিশিয়ান ও জনপ্রতিনিধিরা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব পাইয়ে দিত।

‘আমি দীর্ঘদিন তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করতে গিয়ে সফল হয়েছে। একপর্যায়ে ২০টি মামলা করি। সবগুলোই আমি অনুসন্ধান করে রিপোর্ট দিয়েছি। বেশির ভাগ মামলার বাদীও আমি।

‘চট্টগ্রাম থেকে বদলির পরদিন সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৭ জুন যে মামলা করি, সেখানে নির্বাচন কমিশনের একজন সিনিয়র লেভেলের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে অনেকজনকে আসামি করা হয়েছে। কক্সবাজারে ঈদগা উপজেলার আউলিয়াবাদ এলাকা আছে যেখানে ১৭০০-১৮০০ লোককের বাস। যাদের অধিকাংশই রোহিঙ্গা। এখান থেকে প্রতিনিয়ত মধ্যপ্রাচ্যে প্রচুর লোক যায়। মাদকের সঙ্গে জড়িত যারা মাদক ও সন্ত্রাসী অর্থায়নের সঙ্গেও জড়িত এ চক্রটি। এ বিষটি ধরে ফেলার কারণে যেদিন আমি বদলি হয়েছি, সেদিন এ চক্রটি এবং কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের নেতা আব্বাস ফেসবুকে লেখালেখি করে। তারা আমার বিরুদ্ধে প্রচারণা ও সরিয়ে দেয়ার জন্য ফান্ডিংও করে।’

কর্ণফুলী গ্যাস সংযোগ প্রকল্প

শরীফুল বলেন, ‘কর্ণফুলী গ্যাস সংযোগ ও নিয়ম নিয়ে অনিয়ম দুর্নীতির বিষয় উদ্ঘাটন করে মামলাও করেছি। এক সাবেক এমপিপুত্রও এর সঙ্গে জড়িত ছিল। তারা বাড়ি এমডি আইয়ুব খান চৌধুরীর পাশেই। এই আইয়ুব খান মনে করেছে এ বিষয়গুলো আমি তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করেছি। কারণ তার দুই ছেলে সেখানে চাকরি করে। সে মনে করেছে পটুয়াখালী যাওয়ার পরও আমি তার বিরুদ্ধে লেগে আছি। এ ক্ষোভ থেকে সে গত ৩০ জানুয়ারি আমাকে হুমকি ও চাকরি থেকে সরানোর হুমকি দেয়।’

স্বাস্থ্য খাত বিষয়

শরীফুল বলেন, ‘চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য খাত নিয়েও আমি দুর্নীতি-অনিয়ম খুঁজে বের করেছি। চট্টগ্রামের বিএমএ নেতারা আমার পেছনে উঠেপড়ে লাগে। কক্সবাজারে ৫০ কোটির বেশি টাকা জব্দ করেছি। সেখানের এক কাউন্সিলর জাভেদ কায়সার মোহাম্মাদ নোবেলের ২৫ কোটি টাকা জব্দ করেছি। এসব চক্র একত্রিত হয় আমাকে সরানোর জন্য।

‘আমি পটুয়াখালীতে বদলি হওয়ার দুই মাস পর ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি থেকে কমিশনে আমার বিরুদ্ধে টানা একের পর এক অভিযোগ করা হয়েছে। সবগুলোই কক্সবাজারকেন্দ্রিক। অভিযোগের পর আমাকে যখন কমিশনে ডাকা হয়, তখন তাদের অভিযোগগুলোর ভাষা দেখেই আমি বুঝতাম সব একই চক্রের কাজ। অথচ এর আগে চট্টগ্রামে যখন ছিলাম আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই পড়েনি।’

‘দুদকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, তুলে ধরেছি’

দুদক সচিবের দাবি, সংস্থাটির ভাবমূর্তি রক্ষায় শরীফুলকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে।

দুদকের কোন ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন- এমন প্রশ্ন ছিল শরীফুলের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি রোহিঙ্গা আইডি পাসপোর্ট নিয়ে ২০টি মামলা করেছি। ৫০ কোটি টাকা জব্দ করেছি। আমি ইমেজ ক্ষুণ্ন করার মতো কোনো কাজ করিনি। বরং বৃদ্ধি করেছি বলে মনে করি।

‘দেশের স্বার্থে দেশপ্রেম নিয়ে কাজ করেছি। আমি মামলা করার সুপারিশ করেছি। আমি খুব কম নথিই নথিভুক্ত করেছি। দুদকের কাজ মামলা করে কোর্টে তদন্ত উপস্থাপন করা। আমি তো শুধু সুপারিশ করেছি, মামলা করার এখতিয়ার তো কমিশনের।’

অভিযানে উদ্ধার টাকা জমা না দেয়া প্রসঙ্গ

দুর্নীতি অভিযানে জব্দ করা টাকা জমা না দেয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, সেটিও খণ্ডন করেছেন শরীফুল। তিনি বলেন, ‘১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ র‌্যাব টাকাসহ ইনভেন্ট্রি করেনি। কোভিডকালীন মামলা হওয়ার পর এ টাকা আমি এনে অফিসে রেখেছি। এটা আমার উপপরিচালক (ডিডি) জানতেন। জব্দকৃত সব টাকা ও নথি ভল্টে রাখতাম। দুদকের বিধিতে বলা নেই কতদিনের মধ্যে এই টাকা জমা দিতে হবে। যদিও এখন বুঝেছি টাকা জমা দিয়ে দিলে ভালো হতো।

‘কিন্তু আট মাসে ৩০ লাখ টাকার বেশি ইনভেন্ট্রি করতে পারিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলি টাকাটি কীভাবে জমা দেয়া যায়। তারা বলে, যদি চালান না থাকে টাকাগুলো একটি ভল্টে রেখে তাদের দিয়ে দিলে তা জমা নেবে।

‘তখন আমি বললাম, দুই-তিন বছর পর যখন মামলাটার ট্রায়াল শুরু হবে তখন তো এটা নষ্ট হয়ে যাবে। ভেতরে কী আছে কেউ জানবে না। এই সেন্সে যে টাকাটা তো সার্কুলেট করতে হবে মার্কেটে। মার্কেটে সার্কুলেট করলে যখন মামলাটার ট্রায়াল শুরু হবে তখন সমপরিমাণ অর্থ কোর্টে দেবে।

‘পরে কক্সবাজার জেলার স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে আলাপ করছি যে, স্যার এটা কী করা যায়। তখন উনি বললেন যে, ‘আপনি চার্জশিটে দিয়ে দিলে আলামতগুলো প্রডিউস করতে পারেন।’

-আপনি কমিশনকে জানিয়েছিলেন?

‘না, আমার এখানে কমিশন বলতে আমার ডিডি। আমার সুপারভাইজার উনি। টাকা যে আমার কাছে সঞ্চিত ছিল তিনি জানতেন। আমি কক্সবাজার থেকে যখন টাকাটা নিয়ে এসেছি স্যাররা তো আমাকে ডেকে বলেছেনও যে, আসো শরীফ কীভাবে টাকাটা জমা দেয়া যায়? আমি বলেছি স্যার, এভাবে এন্ট্রি করেন। আমি একা, তদন্ত করব, অনুসন্ধান করব, গ্রেপ্তার করব, রিমান্ডে নেব, আমার তো কোনো বডি নেই।

-কেন বডি নেই, আপনাদের অফিসের লোকজন ছিল না?

না, আমাদের কোনো অ্যাসাইন নেই, তদন্ত কর্মকর্তা একা। আমাকে ওরা অফিশিয়ালি সাহায্য করতে বাধ্য। কারণ আমার তো কোনো লোকবল নেই।

সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার আমি বলি, কারণ এখানে তো কর্মকর্তা আরও আছে।

চট্টগ্রাম জেলার দুদকের সমন্বিত কার্যালয়-২ দায়িত্বে থাকাকালীন আমার কাছে ১৩০টা নথি ছিল। চাঞ্চল্যকর নথি, বড় বড় নথি। এসবের কারণে আমি চট্টগ্রামের সাড়ে তিন বছরে ছুটি কাটাতে পারিনি। নথির প্রেশারে আমার হাইপারটেনশন হয়ে গেছে। আমি এখন ১০-১২টা ওষুধ খাই। আমি ঘুমাতে পারিনি। সর্বাবস্থায় যাওয়ার আগে আমি চার্জশিটে উল্লেখ করে গিয়েছিলাম যে, এই টাকাটা আমার কাছে আছে, ভল্টে আছে। আমি যাওয়ার সময়, যখন আমাকে রিলিজ দেয়া হয়েছে, আমি টাকাটা বুঝিয়ে দিয়ে আসছি। আমার তো স্বাক্ষর আছে, আমি তো ডিডি স্যারকে টাকাটা বুঝিয়ে দিয়ে আসছি।

যখন আমি চলে আসছি, তখন কথাবার্তা মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা গত দুয়েক মাস আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে ট্রেজারিতে জমা দিয়েছে।

এই টাকাটা জমা দিতে ওনার সাত-আট মাস লেগেছে। এগুলো ছাড়াও তো আমাদের যে বড় বড় ট্র্যাপ কেইসের টাকাটা- সেগুলো তো এখনও আমাদের অফিসে আছে।

আমি যে টাকাটা একেবারে আত্মসাৎ করে ফেলেছি- ভাই এটা সুযোগ আছে আমার?

আপনার বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে যে আপনি নামে-বেনামে বাড়ি করেছেন বা ফ্ল্যাট নিয়েছেন, আপনার স্ত্রীর নামে, শ্বশুরের নামে?

শ্বশুরের কথা আমি বলব না, কারণ উনি বাংলাদেশের বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা। আমার বিয়ের দুই মাস পরেই উনি মারা গেছেন। আমার শ্বশুরবাড়ির সবাই বড় বড় চাকরি করে, আমার শালা-সম্বন্ধিরা বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, গুগলে চাকরি করেন। হিউজ টাকা ওরা উপার্জন করেন। আমার চাকরির পর যদি কোনো সম্পদ নিয়ে থাকি আমার স্ত্রীর নামে, তাহলে আপনারা যাই পাবেন- আমি হেবা করে দেব। বিনা টাকায় আমি হেবা করে দেব।

আমি অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করেছি কি না, যদি তদন্ত করে পাওয়া যায়... আমিও আরেকটু বলে রাখি, আমরা চার ভাই। আমি চাকরিতে জয়েন করার আগে ৪৫ হাজার টাকা স্যালারি পেতাম, আমি ভেটেরিনারি ডাক্তার। আমার বাবা মারা গেছেন এই কোভিডকালে। বাবার পেনশনের ২৫ লাখ টাকা থেকে শুরু করে যাবতীয় টাকা সব আমার কাছে আছে। এবং আমরা চার ভাই স্টাবলিশড।

আপনি বাবা মারা যাওয়ার পর আপনার ভাইকে রেলওয়েতে চাকরি পাইয়ে দিতে রেলে হস্তক্ষেপ করেছেন এমন অভিযোগ আছে।

নো, প্রশ্নই ওঠে না। আমার ভাই তো এখনও ওই চাকরি করতে পারেনি। একমাত্র বাংলাদেশ রেলওয়েতে আছে পোষ্য কোটায় নিয়োগ দেয়া। আমার বাবা কর্তব্যরত অবস্থায় মারা গেছেন। এটার তদন্ত কমিটি হয়েছে। কমিটি থেকে তদন্ত রিপোর্ট ঢাকায় যায়। কেউ মারা গেলে তার উপযুক্ত কোনো ছেলে থাকলে চাকরিটা তাকে দেয়া হয়। আর যদি না থাকে তাহলে সে যেই লেভেলের, তাকে ওই লেভেলের একটা চাকরি দেবে।

তো সে (ভাই) মাস্টার্স কমম্প্লিট করছে। তাকে তো আর চতুর্থ শ্রেণির জন্য দেয়া যায় না। তো সে তৃতীয় শ্রেণির জন্য আবেদন করছে। এটা প্রক্রিয়াধীন, ঢাকা থেকে ডিজি মহোদয় অনুমতি দিয়েছেন। এখন তো তার চাকরি হয়নি, কোনো পোষ্য কোটায়ও হয়নি। এখানে আমি কীভাবে ইন্টারফেয়ার করলাম?

আপনি দুদকের কর্মকর্তা হিসেবে কোনো প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছিলেন কি না।

দুদকের কর্মকর্তা হিসেবেও কোনো প্রভাব খাটায়নি। কীভাবে প্রভাব বিস্তার করব? আমি তো বুঝছি না। হ্যাঁ, এটা ঠিক আমি রেলওয়ে পরিবারের সন্তান। আমাকে সবাই চেনেন, কারণ আমি রেলওয়ের তদন্ত অনুসন্ধান করেছি। ৮৬৩ জন খালাসি নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতি- এটা তো যেমন তেমন বিষয় না। ৮৬৩ জন খালাসি নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির মামলা করেছি, সেখানে তো জিএমও আসামি, এজিএমও আসামি, অনেকে আসামি। সেখানে এটা উদ্ধার করেছি আমি।

আমি যদি মামলা করি, তাহলে তো ওরা আমার বিরুদ্ধে লাগবেই। আমি কীভাবে প্রভাব বিস্তার করলাম? আমি তো ওদের পক্ষ নিয়ে আমার ভাইকে সেখানে দিতে পারতাম।

আপনি বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরপত্তাহীনতায় আছেন কি না?

৩০ জানুয়ারি যে হুমকি দেয়া হয়েছিল বাসায় এসে, আসলে এটা নিয়ে আমি জিডি করেছি। সেখানে বেশ কিছু স্লাং ওয়ার্ড ছিল। এরপর হুমকির বিষয়টি আমি মাননীয় কমিশনার স্যারকে জানিয়েছি। তো এরপর ১৬ দিনের মধ্যে তো চাকরি থেকেই রিমুভ হয়ে গেলাম।

রিমুভেলের দিন বিকেলে আমি কিছু বিষয় জেনেছিলেম, আমার তো বন্ধু-বান্ধব রয়েছে, তো এক ধরনের ডিজএভিয়ারেন্সের বিষয় এখানে আছে। ক্ষতি করার বিষয় আছে। আর যেহেতু চাকরি করাকালীন সময়ে হুমকি দিয়েছে সে, চাকরি না থাকলে কী হবে?

আর একটা জিনিস কি, আমি যে মামলাগুলো করেছি বা নথিগুলো দিয়েছি- এগুলোর ভবিষ্যৎ কী হবে তাহলে? আমি তো নেই এখন।

ওদের জন্য একটা সুবিধা আছে। শরীফকে যদি কোনোভাবে অ্যাসল্ট করা যায় বা তার কোনো ক্ষতি করা যায়। এটা তো ওদের সুবিধা। কারণ এটা তো ওদের ইউনিটি। সবকিছুই এখানে হতে পারে।

হুমকি পাওয়ার পর কমিশনকে যেহেতু জানিয়েছেন, কমিশন আপনাকে কোনো ধরনের সাপোর্ট করেছে?

হ্যাঁ, ডিডি স্যার আমাকে ডাকিয়েছিলেন। আমি লিখিত স্টেটমেন্ট দিয়েছি।

হুমকি আপনার বাসায় এসে দেয়া হয়েছিল বলছেন। এর বাইরে অন্য কোনোভাবে অন্য কারও কোনো হুমকি ছিল?

একটাই কথা বলি, স্রোতের প্রতিকূলে গেলে বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি আসবেই। এটা ধরে নিয়েই সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করেছি। আসলে এগুলো তো ডকুমেন্টারিয়েল বিষয় না, এটা স্বাভাবিক থাকবে। আমরা তো এই দেশের নাগরিক। আর একটার সঙ্গে আরেকটা যোগসূত্র রয়েছে। বিশেষ করে কক্সবাজারকেন্দ্রিক এটার যোগসূত্র রয়েছে।

আপনি এখন অনেকটা আত্মগোপনে থেকে দিন কাটাচ্ছেন...

আত্মগোপনে ঠিক না, একটু লুকিয়ে আছি আরকি। কারণ ভালো লাগে না। আমি তো আসলে চাকরির বয়স তো আমার খুব কম, মাত্র সাত বছর। তো এই বয়সে আমার জন্য ধাক্কাটা একটু হয়ে গেল আরকি। মানে আমার মনে হয় আমি সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছি।

যত যা-ই বলি না কেন, আমি তো দুদকের একজন কর্মীই ছিলাম। আমি তো দুদকের একজন স্টাফ হিসেবে দুদকের ইমেজের বাইরে যাওয়ার কখনও সুযোগ নেই। মাননীয় কমিশনার স্যার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, আমি এটা রিভিও করব। সর্বোপরি কমিশনার স্যারও হয়তো বুঝবেন জিনিসটা।

আপনি কমিশনে রিভিউ আবেদন করবেন নাকি উচ্চ আদালতে যাবেন?

না, আইনত যা যা করা লাগে, আমি তা তা করব। কারণ আমার তো চাকরি করতে হবে। আমি তো সমাজের কাছে একেবারে অপদস্ত হয়ে গেলাম।

সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া বলতে আপনি কী বোঝাতে চাচ্ছেন?

দেখুন, বাংলাদেশের সাংবিধানিক আইনের ১৩৫-এ বলা আছে, প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মচারীকে যদি আপনি চাকরি থেকে বহিষ্কার করতে চান, তাহলে অবশ্যই তাকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দিতে হবে। আমাদের দুদকের ৫৪-২ যে বিধিটা আছে, স্থায়ী কর্মচারীর ক্ষেত্রে একেবারে বাদ দেয়া, আমার মনে হয় বিধিটা এখনও সাব-জুডিশিয়ারি। এই বিধি নিয়ে মাননীয় চেম্বার বিচারপতি আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন। তবে আপিল বিভাগ বোধহয় এটা স্টে করছে।

এই বিধির প্রথম শিকার আপনিই?

হ্যাঁ, এটা আমার ক্ষেত্রেই প্রথম।

আপনার চাকরিচ্যুতির পর আপনার সহকর্মীরা আন্দোলনে নেমেছেন, এটা নিয়ে কিছু বলবেন?

আসলে এ বিষয়ে কোনো কথাই বলতে চাচ্ছি না। আমি তো এখন চাকরিতে নেই। তবে সিনিয়র কলিগ এবং স্যাররা আমার প্রতি যে পরিমাণ সহমর্মিতা ও আন্তরিকতা দেখিয়েছেন- এটা আসলে প্রত্যাশা ছিল না। দুদকের কর্মকর্তারা, আমরা যারা আছি, এটা আসলে রাষ্ট্রের একটা সেনসিটিভ প্রতিষ্ঠান। এটা কেন হলো তা আসলে আমি বুঝতে পারিনি। ওনারা ওনাদের জায়গা থেকে করেছেন হয় তো।

পটুয়াখালীতে গিয়ে কী করেছেন?

পটুয়াখালীতে আমি প্রায় আট মাস ছিলাম তো, খুব কম ছুটিই আমাকে দেয়া হতো। ওখানে ফাইলের তেমন কোনো কাজ করতাম না, ফাইল আমাকে দেয়া হতো না।

ঢাকায় সচিব বলেছিলেন আপনাকে অপসারণের আগে কয়েকবার ডাকা হয়েছে, আসলে কয়বার ডাকা হয়েছে?

হ্যাঁ, আমাকে তিনবার ডেকেছিলেন। আমাদের তিনটা ডিপি তো, এই তিনটায় মাননীয় চেয়ারম্যান স্যার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। আমি ওনাকে সন্তুষ্ট করার মতো উত্তর দিয়েছি। আমাদের ডিপার্টমেন্ট প্রসিডিউর যেগুলা, সেগুলো তদন্ত চলতেছে। এখনও তদন্ত চলে, মনে হয় একটা রিপোর্ট দেয়নি। পটুয়াখালীতে যাওয়ার পর পরই ডিপিগুলো হয়েছে, সবগুলো চট্টগ্রাম-২ কেন্দ্রিক।

আপনি এখন অনেকটা নীরবে থাকতে চাচ্ছেন?

হ্যাঁ। কারণ আমি ভেটেরিনারিতে পড়াশোনা করেছি তো, বেসরকারি চাকরি করব। কারণ আমার তো রিজিক লাগবে। রিজিকের মালিক তো আল্লাহ। আর আইনি লড়ায়ও চালিয়ে যাব, আইনি লড়াই চালিয়ে যাব এই জন্যই যে কারণ আমার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। আমি এটা অবিচারের ফল দেখতে চাই, আমি অন্তত চাকরিতে যোগদান করতে চাই।

আমি একজন ডিএডি, আমি রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কিত করব, আল্লাহ না করুক- আমার তো এর আগে মৃত্যু হওয়া শ্রেয়। আমার মাদার প্রতিষ্ঠানকে যদি বিতর্কিত করি, আমি তো থাকলাম না। কারণ দুদকের ইমেজ ই তো আমার ইমেজ। আর আমি বিতর্কিত করেছি কি না, চট্টগ্রামের সাংবাদিকরা আর কক্সবাজারের সাংবাদিকরা এটা ভালো বলতে পারবেন।

এ বিভাগের আরো খবর