রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের সক্ষমতা বাড়াতে নগদ সহায়তার ওপর কর মওকুফের প্রস্তাব করেছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ প্রস্তাব করেন সংগঠনের সভাপতি ফারুক হাসান।
বর্তমানে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাত ক্যাশ ইনসেনটিভ বা নগদ সহায়তা পাচ্ছে। এর ওপর ১০ শতাংশ উৎসে কর কর্তন করা হয়।
আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে এই কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছে বিজিএমইএ।
বর্তমানে পোশাক খাতে রপ্তানি আয়ের ওপর উৎসে কর হার শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ এবং করপোরেট কর হার ১২ শতাংশ।
আসন্ন বাজেটে বিদ্যমান কর হার আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করেছে পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। বিজিএমইএ প্রতিনিধিরা ছাড়াও আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন এনবিআর কাস্টমস সদস্য (শুল্ক নীতি) মাসুদ সাদিক, সদস্য (ভ্যাট নীতি) জাকিয়া সুলতানা, সদস্য (আয়কর নীতি) সামস উদ্দিন আহমেদ।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘করোনা-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছি। যে কারণে আমাদের রপ্তানি বেড়েছে।
‘এখন মাসে প্রায় ৫০০ কোটি ডলার (৫ বিলিয়ন) রপ্তানি হচ্ছে। এটি আরও বাড়ানোর সুযোগ আছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হলে কর হার কমানোসহ কিছু নীতিসহায়তা দিতে হবে।’
পোশাক খাতের বিদ্যমান করকাঠামো তুলে ধরে বিজিএমইএর এই শীর্ষ নেতা আরও বলেন, উৎসে কর বিদ্যমান শূন্য ৫০ শতাংশ, করপোরেট কর সাধারণ কারখানার জন্য ১২ শতাংশ এবং গ্রিন কারখানার ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তার ওপর ১০ শতাংশ হারে আয়কর আদায় করা হয়।
সরকার যদি আগামীতে এই কর হার আরও বাড়ায় তাহলে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কাজেই, পোশাক খাতের রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখাতে আগামী পাঁচ বছরের জন্য বিদ্যমান কর হার বহাল রাখতে হবে। এ ছাড়া নগদ সহায়তার ওপর আরোপিত কর হার প্রত্যাহার করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, রপ্তানি খাতে কিছু সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে বেশি সমস্যা হচ্ছে এইচ এস কোড দিয়ে পণ্য চিহ্নিতকরণ। এইচ এস কোডের জটিলতার কারণে ক্রেতার কাছে পণ্য পেতে বিলম্ব হচ্ছে। এমন জটিলতা পরিহারের অনুরোধ করছি।
জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, পোশাকশিল্পের প্রতি সরকারের সু-নজর আছে। করোনা মহামারির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার যেসব সুযোগ-সুবিধা পোশাকশিল্পের জন্য দিয়েছে, সেই সুবিধার কারণে রপ্তানি বেড়েছে।
আমরাও পোশাকশিল্পের উন্নতি চাই। সমস্যা খুঁজে বের করে তার সমাধান করছে এনবিআর। তবে ঢালাওভাবে সুবিধা দিতে গেলে অনেক ক্ষেত্রে তার অপব্যবহার হতে পারে।
তিনি বলেন, এইচএস কোড সমস্যার ক্ষেত্রে বিজিএমইএর প্রস্তাব থাকলে তা বিবেচনা করা হবে। একই সঙ্গে পোশাকের পশ্চাৎ শিল্পের সম্প্রসারণে দেশে ইয়ার্ন বা তুলা আমদানি সহজ করার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হবে।
প্রাক বাজেট প্রস্তাবনায় বিজিএমইএর পক্ষ থেকে পোশাকশিল্পে সাব কন্ট্রাক্টের বিপরীতে ভ্যাট আদায় থেকে অব্যাহতি, অনূর্ধ্ব ১০ কেজি ক্যাপাসিটির ওয়াশিং ও ড্রাই মেশিন আমদানিকালে মূলধনি যন্ত্রপাতির ন্যায় রেয়াতি হারে শুল্কায়নের সুযোগ, সকল অগ্নিনির্বাপণ পণ্য বা উপকরণ বিকল বা নষ্ট হলে অগ্নিপ্রতিরোধক দরজার ন্যায় একই শর্তে প্রতিস্থাপনের জন্য রেয়াতি হারে শুল্কায়নের মাধ্যমে আমদানি-সুবিধা দেয়ার কথা বলা হয়েছে।