বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শরীফের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ: দুদক সচিব

  •    
  • ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৮:০৪

এটি একেবারে শেষ, চরম পর্যায়ে চলে গেলে যে পদক্ষেপ নেয়া হয়, সেটির একটি অংশ। তার বিরুদ্ধে অনেক কমপ্লেইন রয়েছে। বিভাগীয় মামলা চালু আছে। অনেকগুলো কমপ্লেইন আসছিল, অনেকগুলো এসেছে: দুদক সচিব

দুদকের উপপরিচালক শরীফ উদ্দীনকে চাকরি থেকে অপসারণের কারণ এখনও ব্যাখ্যা করেনি সংস্থাটি। তবে জানানো হয়েছে, তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট বেশ কিছু অভিযোগ ছিল। উচ্চ আদালতের অসন্তোষও ছিল তাকে নিয়ে।

তবে কী সেই অভিযোগ, সেসব বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলা হবে না বলে জানিয়েছেন দুদক সচিব মাহবুব হোসেন। তিনি জানান, শরীফ উদ্দিনকে একাধিকবার দুদকে ডাকা হয়েছে, তার বক্তব্য শোনা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত দুদক তার ভাবমূর্তি রক্ষায় এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।

তবে এই আদেশটি দুর্নীতি দমনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষুব্ধ করেছে। তারা সংস্থাটির কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছেন। আদেশটিকে অসাংবিধানিক ও মানবাধিকার পরিপন্থি উল্লেখ করে তা পুনর্বিবেচনার দাবিও জানানো হয়েছে।

তাদের অভিযোগ, ক্ষমতাবানদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে একের পর এক ব্যবস্থা নেয়ায় শরীফকে চাকরি হারাতে হয়েছে। যদিও দুদক সচিব বলছেন, এই অভিযোগ একেবারেই অবান্তর। শরীফ বেআইনি কাজে জড়িত ছিলেন। তার কাজকে অনুৎসাহিত করতেই এই পদক্ষেপ।

বুধবার দুদক পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণের আদেশ জারি হয়।

শরীফের চাকরিচ্যুতির এই সংবাদ প্রকাশের পর সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও তুমুল আলোচনা তৈরি হয়েছে। কেন এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে দুদকের পক্ষ থেকে কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। এমনকি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষোভের পরও সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য আসেনি দুর্নীতি নির্মূলে কাজ করা সংস্থাটির পক্ষ থেকে।

এতসব ঘটনা যাকে নিয়ে, সেই শরীফ উদ্দিনের কোনো বক্তব্য গণমাধ্যমে আসেনি। নিউজবাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

শরীফের বিরুদ্ধে ৭ থেকে ১০টি অভিযোগ

দুদক সচিব মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে তিনটি বিভাগীয় মামলা চলছে। আরও প্রায় ৭ থেকে ১০টি অভিযোগ তাদের কাছে রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘উনি অনেক সুযোগ পেয়েছেন। ওনাকে অনেকবার ডাকাও হয়েছে। সর্বশেষ বিধিবদ্ধ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’

‘এটি একেবারে শেষ, চরম পর্যায়ে চলে গেলে যে পদক্ষেপ নেয়া হয়, সেটির একটি অংশ। তার বিরুদ্ধে অনেক কমপ্লেইন রয়েছে। বিভাগীয় মামলা চালু আছে। অনেকগুলো কমপ্লেইন আসছিল, অনেকগুলো এসেছে।’

তবে কী কী বিষয়ে অভিযোগ- সেটি প্রকাশ করতে চান না দুদক সচিব। তিনি বলেন, ‘উনি বিধি-বিধানের বাইরে অনেক কাজ করেছেন, যেটা আমি পাবলিকলি বলতে চাই না।’

শরীফ দুর্নীতি দমন কমিশনের চাকরিবিধি অব্যাহতভাবে লঙ্ঘন করেছেন এমন অভিযোগ এনে সচিব বলেন, ‘যার কারণে দুদক মনে করেছে তার ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে এবং সবাই যাতে সঠিকভাবে কাজ করেন সেই লক্ষ্যে তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা প্রয়োজন।

‘এটি শুধু কোনো ব্যক্তির বিষয় নয়, এটি প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তির বিষয়।’

শরীফ দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম করায় কোনো চাপের বলি হলেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। যা ঘটেছে তার সঙ্গে তদন্ত বা প্রসেস করা, এর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নাই।’

শরীফের একটি পদক্ষেপে উচ্চ আদালত অসন্তোষ জানিয়েছিল বলেও জানান দুদক সচিব। তিনি বলেন, ‘উনি একটা বদলির বিষয়ে অনুসন্ধানকালে যে টাকা উদ্ধার হয়েছিল, সে বিষয়ে কাজ করছিলেন। হাইকোর্ট থেকেও এ বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল। চাকরিবিধি পরিপন্থি হওয়ার কারণে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আর সেই টাকা বিধি মোতাবেক যথা জায়গায় আছে।’

‘প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার কারণে অপসারণ’

শরীফ উদ্দিনকে অপসারণের এই আদেশ বাতিলের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে দুদক সচিবকে স্মারকলিপি দেন দুদক কর্মচারীরা। পরে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে হয় মানববন্ধন।

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, শরীফ উদ্দিন চট্টগ্রামে দক্ষ ও পরিশ্রমী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। তিনি তার চট্টগ্রাম অফিসে কর্মরত থাকাকালে ৫২টি মামলা করেন। আদালতে বিচারের জন্য ১৫টি অভিযোগপত্র প্রস্তুত করে জমা দেন।

তিনি কক্সবাজারে ভূমি অধিগ্রহণের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা উদঘাটনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বলেও উল্লেখ করা হয় এতে।

অভিযোগ করা হয়, শরীফ উদ্দিনের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের কারণে সংক্ষুব্ধ পক্ষগুলো বিভিন্ন সময়ে তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। এই অবস্থায় তাকে অপসারণ করা প্রকারান্তরে দুর্নীতিবাজদের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার সমার্থক।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘কোনোরূপ আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে এবং তিনি কোনোরূপ অপরাধ করেছেন কি না, তা অবহিত না করে ১৬ ফেব্রুয়ারি ৫৪(২) বিধি প্রয়োগের মাধ্যমে উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়, যা অসাংবিধানিক, বেআইনি ও সাধারণ আইনের আওতায় মানবাধিকার পরিপন্থি।’

দুদক কর্মীদের স্মারকলিপিতে বলা হয়, সংবিধানের ১৩৫(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের অসামরিক পদে নিয়োজিত কাউকে কারণ দর্শানোর যুক্তিসংগত সুযোগ না দিয়ে বরখাস্ত, অপসারণ বা পদাবনমিত করা যাবে না।

এই যুক্তিতে দুদকের এই আদেশকে অসাংবিধানিক, বেআইনি ও মানবাধিকার পরিপন্থি বলছেন কর্মকর্তারা।

এই মানববন্ধনের বিষয়ে দুদক সচিব বলেন, ‘কমিশন মনে করেছে তিনি চাকরিবিধি পরিপন্থি কাজ করেছেন এবং অব্যাহতভাবে করছেন। যার ফলে অপসারণ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। মানববন্ধন কে করেছে এটি আমার সামনে ঘটেনি। ওনারা কয়েকজন আমার কাছে এসেছেন। আদেশটি বিবেচনার কথা বলেছেন।’

জীবননাশের হুমকি পেয়ে শরীফ উদ্দিনের জিডি

গত ৩০ জানুয়ারি দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন চট্টগ্রামের খুলশী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন, যার নম্বর ১৬৪৫। জিডিতে তিনি পেট্রোবাংলার অধীনস্থ ‘কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (পিআরএল) মো. আইয়ুব খান চৌধুরী ও তার সহযোগীর নাম উল্লেখ করেন। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জীবননাশের শঙ্কায় রয়েছেন জানিয়ে জিডিতে তিনি নিরাপত্তা চেয়েছেন।

শরীফের দুর্নীতিবিরোধী আলোচিত যত অভিযান

চট্টগ্রাম দুদক কার্যালয়ে দায়িত্ব পালনকালে ২০২১ সালের ১৬ জুন ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের পরিচালকসহ ইসির চার কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেন শরীফ উদ্দিন। একই বছর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়ে সংলগ্ন কলাতলী বাইপাস রোড এলাকায় পিবিআই কার্যালয় তৈরির জন্য এক একর জমি অধিগ্রহণে জালিয়াতির ঘটনা উঠে আসে শরীফ উদ্দিনের তদন্তে।

কক্সবাজারের মেগা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর জমি অধিগ্রহণের দুর্নীতিতে জড়িত বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে মামলাও করেন তিনি। এ ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালসহ স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে নামে দুদক। পরে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার ও বেশ কয়েকটি মামলা করেছিলেন শরীফ উদ্দিন।

২০২১ সালের ১৬ জুন দুদক পরিচালক মুহাম্মদ মনিরুল ইসলামের সই করা এক অফিস আদেশে মো. শরীফ উদ্দিনকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর