নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ বা অনুসন্ধান কমিটির কাছে কারা কোন ব্যক্তিদের নাম জমা দিয়েছেন, সে বিষয়টি প্রকাশ্যে আনার দাবি জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সুনামের অধিকারী ও সাহসী ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের দাবিতে বৃহস্পতিবার সুজন আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
দুপুর ১২টার দিকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘অসম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করলে তা স্বচ্ছতা পায় না। সার্চ কমিটির কার্যপদ্ধতি এবং কী মানদণ্ডে তারা প্রস্তাবিত মানুষগুলোর সুনাম যাচাই করবেন, তা জানানো দরকার।’
রাষ্ট্রপতির কাছে ১০ জনের নাম পাঠানোর ৩ দিন আগেই তা প্রকাশে সার্চ কমিটির কাছে দাবি জানান তিনি।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ শেষ হয়। তার আগেই ১৩তম ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন।
সার্চ কমিটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, ব্যক্তিগত পর্যায়, পেশাজীবী সংগঠন এবং বিশিষ্টজনের সঙ্গে আলাপ করে তিন শতাধিক নামের প্রস্তাব পায়।
সার্চ কমিটির এ প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছতার মধ্যে নিয়ে আসতে বিশিষ্টজনদের কেউ কেউ নামের তালিকা প্রস্তাবকারীসহ প্রকাশ্যে আনার দাবি তোলেন, তবে বিশিষ্টজনদের একটি অংশও আছে, যারা এই প্রস্তাবকারীদের নাম প্রকাশ্যে আনার বিরোধিতা করে আসছেন।
গত সোমবার তিন শতাধিক নাম প্রকাশ করে সার্চ কমিটি। তবে তারা প্রস্তাবকারীদের নাম প্রকাশ্যে আনেনি।
এমন বাস্তবতায় প্রস্তাবকারীদের নাম ফের প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে বেসরকারি সংস্থা সুজন।
সংবাদ সম্মেলনে অনুসন্ধান কমিটি স্বচ্ছতার চর্চা করেনি অভিযোগ করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘অনুসন্ধান কমিটি যে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতেছে, তা জনগণের মনে করতে হবে।’
তিন শতাধিক জনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘…৩১৫ জনের নাম যারা প্রস্তাব করেছে, তা প্রকাশ করা উচিত৷’
বিতর্ক নিয়োগের আগেই হয়ে যাওয়া উচিত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অসম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করলে তা স্বচ্ছতা পায় না।’
নির্বাচনি ব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন ত্রুটি ধরিয়ে দেয়া বদিউল আলম মজুমদারের নামও তালিকায় এসেছে, তবে তিনি কমিশনার পদে যেতে অনাগ্রহী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বদিউল বলেন, ব্যক্তিগত কারণেই তিনি রাজি নন।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সুজনের নির্বাহী সদস্য শাহদীন মালিক বলেন, ‘দেশে ভালো নির্বাচন হবে, এটাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।’
বিগত নির্বাচন কমিশনের মতো এবারের ইসি যাতে না হয়, সে প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, ‘কোন দল কার নাম দিয়েছে, সেটা প্রকাশ করতে হবে।’
ইসির নিরপেক্ষতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, ‘ইসি যদি দল নিরপেক্ষ না হয়, তাহলে অন্য কোনো নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।’
দেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়া সবচেয়ে ক্ষতিকর রায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস সংবিধান পরিবর্তনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
তিনি বলেন, ‘দেশের নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক আছে। সংবিধানের ৪৮-এর ৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি ব্যতীত বাকি সব নিয়োগ রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে করবেন।’
রোবায়েত এ অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের বিষয়টি যুক্ত করার মত দেন, যাতে প্রধানমন্ত্রী তার বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করতে না পারেন। ওই সময় তিনি সংবিধানে পরিবর্তন আনার দাবিও জানান।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘সার্চ কমিটির যে প্রসেসটা চলছে, সেটা এখনও স্বচ্ছ হয় নাই। স্বচ্ছ না হলে তা তো অস্বচ্ছই রয়ে গেল।’
১০ জনের নাম প্রকাশের পাশাপাশি স্বচ্ছভাবে ইসি গঠনের দাবিও তোলেন বর্ষীয়ান এ নাগরিক।