দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে শুরুর দিককার লকডাউনের সময় অনলাইনে চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতেন এক যুবক। তিনি মেডিক্যাল চেকআপের কথা বলে চাকরিপ্রত্যাশী নারীদের আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করতেন গোপনে। সেই ভিডিও দেখিয়ে নারীদের কাছে করতেন টাকা আদায়।
ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায়ের ঘটনায় আল ফাহাদ নামের ওই যুবককে আটক করেছে র্যাব। রাজধানীর গুলশান থানার নর্দ্দা এলাকায় অভিযান চালিয়ে বুধবার রাতে তাকে আটক করে র্যাব-১।
ওই সময় ফাহাদের কাছ থেকে একটি ক্যামেরা, দুটি লেন্স ও একটি মোবাইল ফোন, ছয়টি সিম, একটি মেমোরি কার্ড ও ৪০৩টি ইয়াবা বড়ি জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই যুবক শতাধিক নারীর সঙ্গে প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে বৃহস্পতিবার সকালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
যেভাবে প্রতারণা করতেন
র্যাব কমান্ডার বলেন, ‘ফাহাদ বিভিন্ন কৌশলে প্রার্থীদের করোনাকালীন ভার্চুয়াল মেডিক্যাল করা হবে বলে জানাতেন। প্রার্থীরা বিভিন্ন সামাজিক চ্যাটিং অ্যাপের মাধ্যমে ভিডিও কলে যুক্ত হতেন।
‘আটক যুবক নিজের মোবাইলের ক্যামেরা বন্ধ রেখে ভিডিও কলে মেডিক্যাল পরীক্ষা নিতেন। বিভিন্ন কৌশলে ভুক্তভোগীদের গোপন ভিডিও ধারণ করতেন। পরে ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা দাবি করতেন।’
কমান্ডার মঈন বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা করে আদায় করতেন ফাহাদ। এভাবে শতাধিক নারী পরবর্তীতে তার ব্ল্যাকমেইলের শিকার হন।’
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, ‘ফাহাদ ইন্টারনেট ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে দেশি-বিদেশি ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখাতেন। ফলে অনেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন।
‘বেশি গ্রাহককে আকৃষ্টের লক্ষ্যে চাকরিপ্রার্থী প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি নিতেন তিনি।’
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব ধাপ প্রাথমিকভাবে অতিক্রম করতে হয়, সেগুলো তিনি নিজেই বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে কণ্ঠ পরিবর্তন করে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে ভুয়া নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেন।
‘তিনি বিভিন্ন মেয়ের নামধারণ করে ভুক্তভোগীদের কাছে প্রথমে নিজেকে দেশি/বিদেশি বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে কর্মরত বলে পরিচয় দিতেন। তিনি নিজেও একই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাকরিতে যোগ দিতেন বলে জানাতেন।’
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘পরে তিনি নিজেই ওই কোম্পানির অ্যাডমিন কর্মকর্তা হিসেবে বিভিন্ন নামে পরিচয় দিতেন এবং ভুক্তভোগীদের ইন্টারভিউ নিতেন।’
যেভাবে অপরাধ জগতে প্রবেশ
র্যাব জানিয়েছে, ফাহাদ নারায়ণগঞ্জের একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। প্রথমে তার বাবার সঙ্গে রেলওয়ে স্টেশনের পাশে ফল বিক্রি করতেন।
ফল বিক্রির আড়ালে তিনি ফেসবুকে দুটি গ্রুপে যুক্ত হন। পরে সেসব গ্রুপে দেশি/বিদেশি কোম্পানিতে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে চাকরি দেয়ার নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা শুরু করেন।
প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের কাজে ফেসবুকে বেশ কিছু ভুয়া আইডি ব্যবহার করতেন ফাহাদ।