রংপুরের পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের প্রতিপাল গ্রাম। ওই গ্রামের প্রতিপাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সড়ক পার হলে বুড়াইল নদী। এর দুই পাড়ে ১০ গ্রামের মানুষের বসবাস; যাদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নদীর ওপর একটি বাঁশের সাঁকো।
আর এ সাঁকোটিও নিজেদের অর্থায়ন আর স্বেচ্ছাশ্রমে বানিয়েছেন স্থানীয়রা। শুধু তা-ই নয়, প্রতি বছর সেটি নতুন করে তৈরি করতে হয় তাদের।
সাঁকোটি দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে পারাপার হওয়া গেলেও বর্ষায় হয়ে দাঁড়ায় মারণফাঁদ।
স্থানীয়রা জানান, জনপ্রতিনিধিদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি মিললেও সেসব প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখেননি দুর্ভোগ সঙ্গী করে সাঁকো ব্যবহার করা হাজার হাজার মানুষ।
তাই ঝুঁকি নিয়েই প্রতিনিয়ত এই মারণফাঁদ দিয়ে যাতায়াত করেন পশ্চিমদেবু, শালমারা, পরান, ব্রাহ্মণীকুণ্ডা, আদম, পাওটানা, কামারপাড়াসহ ১০ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ।
এর মধ্যে রয়েছেন এসব গ্রামের স্কুলগামী শিক্ষার্থী, বয়োবৃদ্ধরাও। যে ফাঁদে শিক্ষার্থীদের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।
নিউজবাংলাকে স্থানীয় ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বয়স ৬২ বছর। স্বাধীনতার পর থেকে এখানে কোনো সেতু নির্মাণ করা হয়নি। আমরা টাকা তুলে, বাঁশ কিনে সাঁকো বানাইছি। এই দিয়ে কোনোমতে আমরা চলাচল করছি। ব্রিজ নির্মাণ করা প্রয়োজন, এই নিয়ে কেউ এগিয়ে এলো না।’
হযরত আলী বলেন, ‘আমরা যারা যুবক মানুষ, তারা না হয় পার হই। কিন্তু বুড়া মানুষ আর বাচ্চারা পার হতে পারে না।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে প্রতিপাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থী সাঁকো পার হওয়ার সময় পা ফসকে পানিতে পড়ে যায়। পরে তার ভাসমান লাশ উদ্ধার করা হয়। তারপরও কেউ এগিয়ে আসেনি।’
এসব ছাড়াও দুই পারের ফসলি মাঠে উৎপাদিত ফসল পরিবহনে ভোগান্তিতে পড়তে হয় কৃষকদের।
পাওটানা এলাকার কৃষক রেজাউল করিম বলেন, ‘জন্মের পর থেকে এটে কোনা (এখানে) ব্রিজ দেখনু না। মোর ছইল-পোইলেও ব্রিজ দেখিল না। আর কোনো দিন এটে কোনো ব্রিজ হইবে বাহে্...! ব্রিজের ওপারে জমির আবাত (ফসল) পার করতে তো কয়েক কিষান যায় হামার।’
কামাড়পাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী হেলাল মিয়া বলেন, ‘ভোট এলে খবর হয়। জিতলে বলে ৬ মাসের মধ্যে ব্রিজ হবে। তারপর যেই সেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা না হয় ঝুঁকি নিয়ে পাড় হই। কিন্তু বর্ষার সময় ছোট ছোট ছেলে-মেয়েগুলো তো বিদ্যালয় যেতেই পারে না।’
নিউজবাংলাকে প্রতিপাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কেরামত আলী বলেন, ‘বিদ্যালয়ের পাশে বাঁশের সাঁকোটি। শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়।’
নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সাঁকো থেকে পানিতে পড়ে এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। শিশুদের স্কুলে পাঠিয়ে চিন্তায় থাকতে হয় অভিভাবকদের।
‘তাই নদীর ওপর দ্রুত ব্রিজ করা প্রয়োজন। আমরা আশা করব কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে বিবেচনা করবেন।’
তাম্বুলপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বজলুর রশিদ মুকুল বলেন, ‘এ বিষয়ে কয়েক দফায় কথা হয়েছে। ব্রিজ দ্রুত করা হবে।’
জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে পীরগাছা উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই ব্রিজ এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। সেতু নির্মাণের বিষয়ে কাগজপত্র ঠিক করে অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে কাজ শুরু করা হবে।’