একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত জামায়াতে ইসলামীর নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী ছিলেন- এমন মন্তব্য করে মামলার আসামি হলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ এনে শরীয়তপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বুধবার এই মামলা হয়েছে। মামলার বাদী ছাত্র ইউনিয়নের শরীয়তপুর জেলা সংসদের সভাপতি সাইফ রুদাদ।
আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে আসামিকে হাজির হওয়ার সমন জারির আদেশ দিয়েছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবে ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এনডিপি) এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বক্তব্যে তিনি দাবি করেন, কাদের মোল্লা মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাত্র ইউনিয়ন করতেন।
এমন বক্তব্যে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হন।
জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে মানহানির মামলার বিষয়ে সাইফ রুদাদ বলেন, ‘কাদের মোল্লা একজন প্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণিত যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার ও মানবতাবিরোধী অপরাধী ছিলেন। তার মতো ঘৃণ্য ব্যক্তিকে ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে জড়িয়ে বক্তব্য দিয়ে জাফরুল্লাহ ইতিহাস বিকৃতি করেছেন। তাই তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা হয়েছে।’
বাদীর আইনজীবী আজিজুর রহমান রোকন বলেন, ‘জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে করা মানহানি মামলাটি আদালত আমলে নিয়েছে। জেলা ও দায়রা জজ প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস তাকে হাজির হওয়ার সমন দেয়ার আদেশ দিয়েছেন।’
এদিকে মামলায় এখনই কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয় ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফয়েজউল্লাহ। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মামলা করেছে আমরাও শুনেছি, তবে এটা কেন্দ্রীয় কমিটিকে না জানিয়েই করেছে। এটা জেলা কমিটির সিদ্ধান্ত। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি আলাপ করে বক্তব্য জানাবে।’
এর আগে গত ৩ ফেব্রুয়ারি যৌথ এক বিবৃতিতে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফয়েজউল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল জাফরুল্লাহর বক্তব্যকে ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘ইতিহাস বিকৃতি’ বলে দাবি করেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে এনডিপির প্রতিবাদ সভায় জাফরুল্লাহ বলেন, ‘জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচার সঠিক হয়নি। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেয়ে বিচারকদের দায় বেশি।’
কাদের মোল্লা মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী ছিলেন দাবি করে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘এখনও মতিয়া চৌধুরী, নাহিদ (নুরুল ইসলাম নাহিদ) বেঁচে আছেন। তাদের সাক্ষী হিসেবে চেয়েছিলেন, কিন্তু বিচারক তাদের ডাকেননি।
‘বঙ্গবন্ধুর সময়ে তিনি (কাদের মোল্লা) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের সদস্য ছিলেন। এ রকম একজন ব্যক্তিকে বিচার না করে শুধু জোয়ারের পানিতে নৌকা ভাসিয়ে ফাঁসি দেয়া ঠিক হয়নি।’
জাফরুল্লাহর বক্তব্যকে ভিত্তিহীন দাবি করে ছাত্র ইউনিয়ন বলছে, এ বক্তব্য মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র ইউনিয়নের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ও পরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে হওয়া আন্দোলনে ছাত্র ইউনিয়নের ভূমিকা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপপ্রয়াস।
মুক্তিযুদ্ধে কাদের মোল্লার ছাত্র ইউনিয়ন করার তথ্যটি অসত্য দাবি করে সংগঠনের নেতারা জানান, ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হন কাদের মোল্লা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে তিনি শহীদুল্লাহ হলে থাকতেন। ১৯৭০ সালের অক্টোবরে তিনি শহীদুল্লাহ হল ছাত্র সংঘের সভাপতি নির্বাচিত হন।
মুক্তিযুদ্ধে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অসামান্য অবদানের কথা স্মরণ করে ছাত্র ইউনিয়নের ওই যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জাফরুল্লাহ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও তিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে জাতির সামনে মিথ্যাচার করছেন। তা অত্যন্ত দুঃখজনক।’