করোনাভাইরাস মহামারির তৃতীয় ঢেউয়ের কারণে নির্ধারিত সময়ের ১৪ দিন পর মঙ্গলবার শুরু হয়েছে অমর একুশে বইমেলা। প্রতিবছর শুরুর কয়েক দিন মেলায় লোকসমাগম তেমন একটা দেখা না গেলেও এবারের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। উপচেপড়া ভিড় না থাকলেও দর্শনার্থী ও ক্রেতার সংখ্যায় সন্তুষ্ট প্রকাশনা সংস্থাগুলো।
ভার্চুয়ালি বিকেল ৩টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর দর্শনার্থীদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার প্রবেশপথ খুলে দেয়া হয় বিকেল ৫টার দিকে। তবে এর আগে থেকেই মেলা প্রাঙ্গণে আসতে শুরু করেন বইপ্রেমীরা।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, এখনও বেশ কিছু স্টলের কাজ চলছে। অনেকেই স্টল সাজাতে ব্যস্ত সংশ্লিষ্টরা। পরিপূর্ণভাবে সেজে ওঠেনি লিটল ম্যাগাজিন চত্ত্বরও। এবার মেলায় ১২৭টি লিটলম্যাগ পেয়েছে স্টল। প্রথম দিনে বসেছিল মাত্র ৪টি স্টল।
মেলা প্রাঙ্গণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন দর্শনার্থী ও স্টলের কর্মীরা। মেলার প্রবেশ পথে মাপা হচ্ছে শরীরের তাপমাত্রা।
প্রকাশনা সংস্থা ইউপিএলের কর্মকর্তা উৎসব মোসাদ্দেক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম দিন হিসেবে মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা ও বেচাবিক্রি বেশ ভালোই বলতে হবে। মেলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টিও সন্তোষজনক। দু-একজন বাদে সবার মুখে মাস্ক দেখা গেছে।’
করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার মেলায় অংশ নেয়া নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন ইত্যাদি প্রকাশনীর কর্ণধার আদিত্য অন্তর। শেষ পর্যন্ত তার সংস্থা মেলায় অংশ নিয়েছে এবং সার্বিক পরিবেশ নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট। বললেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছর মেলায় আমরা অংশ নেইনি। আজ প্রথম দিনের বিক্রি ও ক্রেতা দর্শনার্থী দেখে ভালো লেগেছে।’
রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন করা হয়েছে। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস/ নিউজবাংলামেলায় ঘুরতে আসা কাজী রিতা নিউজবাংলাকে বললেন, ‘এবার মেলার পরিবেশটা বেশ ভালো লেগেছে। অনেক বড় পরিসরে আয়োজন হওয়ায় ভিড়টা বেশি মনে হচ্ছে না। ঘুরেফিরেও স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া যাচ্ছে। প্রথম দিনে মেলায় এসে দুটি বইও কিনে ফেলেছি।’
মেলায় আগতদের উদ্দেশ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে দুটি ফুডকোর্ট রয়েছে। তবে প্রথম দিন খাবারের দোকান ছিল হাতে গোনা কয়েকটি।
লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের প্রাণের উৎসব অমর একুশে বইমেলার এটি ৩৮তম আয়োজন।
বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশ মিলিয়ে মেলার মোট আয়তন প্রায় সাড়ে ৭ লাখ বর্গফুট। রয়েছে ৩৫টি প্যাভিলিয়ন। এ ছাড়া একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৪২টি স্টল। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠান পেয়েছে ৬৩৪টি স্টল। সব মিলিয়ে মেলায় অংশ নেয়া সংস্থার সংখ্যা ৫৩৪টি।
প্রতিদিন বেলা ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে মেলা। তবে রাত ৮টার পর কেউ মেলায় ঢুকতে পারবেন না।
অবশ্য ছুটির দিনে বেলা ১১টায় শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে বইমেলা। আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে মেলা।
বইমেলায় প্রবেশ ও বের হওয়াসহ সার্বিক নিরাপত্তায় বসানো হয়েছে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা। আছে পর্যাপ্ত আর্চওয়ে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
এবারও শিশুচত্বর আছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে। তবে সাজানো এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। করোনা পরিস্থিতির কারণে শিশু প্রহর উদযাপন নিয়েও শঙ্কা কাটেনি।