সকাল সাড়ে ৮টা। উপকূল ট্রেনটি কুমিল্লা স্টেশন ছেড়ে এগিয়ে যাচ্ছিল। প্রতিদিনের মতোই ট্রেনের অ্যাটেনডেন্স আনোয়ার হোসেন যাত্রীদের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। তাদের কিছু লাগবে কি না দেখতে এক বগি থেকে আরেক বগিতে যাচ্ছিলেন।
সে সময় একদল যাত্রী হঠাৎ ফুলের তোড়া নিয়ে আনোয়ারের দিকে এগিয়ে যান। তাকে শুভেচ্ছা জানান অবসর জীবনের জন্য। তার হাতে তুলে দেন উপহারও।
কারণ সোমবার ভালোবাসা দিবসে ছিল আনোয়ারের শেষ কর্মদিবস।
বিদায় জানানো ওই মানুষগুলো ট্রেনটির নিয়মিত যাত্রী হওয়ায় আনোয়ারের সঙ্গে তাদের সখ্য অনেক দিনের।
আনোয়ার ২৭ বছর ধরে ট্রেনের কর্মী। সোমবার ট্রেনে তার শেষ কর্মদিবস হলেও বুধবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এলপিআরে যাচ্ছেন।
তাকে বিদায় জানানো যাত্রীদের সঙ্গে কথা হয় মঙ্গলবার। তাদের একজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা টি আলী কলেজের সমাজকর্মের শিক্ষক হাসিনা জান্নাত।
তিনি বলেন, ‘২০১১ সাল থেকে আমি কসবা টি আলী কলেজে শিক্ষকতা করি। প্রতিদিন কুমিল্লা স্টেশন থেকে ট্রেনে করে যাই। উপকূল ট্রেনের ট, ঠ, ড, এই তিন বগির টিকিট চেকসহ যাবতীয় সব কাজই তদারকি করতেন আনোয়ার ভাই। এই তিন বগির অন্তত দেড় শ যাত্রীর সবাইকে তিনি চেনেন। বলা যায় সবার নামও জানতেন।
‘ওনার ব্যবহার খুবই চমৎকার। যাত্রীদের যেকোনো সমস্যা সমাধানে তিনি খুবই আন্তরিক। মাস ছয়েক আগে জানতে পারি ১৪ ফ্রেব্রুয়ারি আনোয়ার হোসেনের শেষ কর্ম দিবস। লোকটার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই আমরা ফুলের তোড়া দিয়ে ওনাকে শ্রদ্ধা জানাই।’
আরেক যাত্রী ব্যবসায়ী মো. সাইজউদ্দিন জানান, আনোয়ারের সেবাদানের মানসিকতা অনন্য। সব সময় হাসিমুখে থাকতেন। তার প্রতি ভালোলাগা থেকেই বিদায়ের এই আয়োজন।
যাত্রীদের এমন ভালোবাসায় আপ্লুত আনোয়ার।
তিনি বলেন, ‘২৭ বছর চাকরিজীবনে অনেক ঘটনা দেখেছি। তবে চাকরির শেষ দিন ট্রেনের যাত্রীরা আমাকে যে সম্মান ও ভালোবাসা দিল, তা আমার সারা জীবন মনে থাকবে।
‘আসলে আমি প্রতিদিন যত্ন করে আমার কাজটা করতাম। যাত্রীরা আমার কাছে ভাইবোনের মতোই। তাদের যেকোনো সমস্যা যত দ্রুত সমাধান করতে পারতাম, আমার ততই ভালো লাগত।’