বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বইমেলার সময় বাড়ানোতে আপত্তি নেই প্রধানমন্ত্রীর

  •    
  • ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৮:২৫

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু আমাদের প্রকাশকদের পক্ষ থেকে একটা দাবি এসেছে যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ১৭ মার্চ, সেই মার্চ মাস পর্যন্ত (বইমেলা) চালাতে পারে। আমিও মনে করি, বইমেলাটা আমরা এক মাস চালাতে পারি। তবে সেটা আপনারা নিজেরাও দেখবেন ভেবে।’

করোনাভাইরাস মহামারির তৃতীয় ঢেউয়ের কারণে নির্ধারিত সময়ের ১৪ দিন পর শুরু হয়েছে বই মেলা। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। তবে এ মেলার সময়সীমা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন অর্থাৎ ১৭ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হলে কোনো আপত্তি দেখছেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তবে এ সিদ্ধান্ত আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির ওপর ছেড়ে দিয়েছেন সরকারপ্রধান।

ঢাকার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মঙ্গলবার বিকেলে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী আয়োজনে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু আমাদের প্রকাশকদের পক্ষ থেকে একটা দাবি এসেছে যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ১৭ মার্চ, সেই মার্চ মাস পর্যন্ত (বইমেলা) চালাতে পারে। আমিও মনে করি, বইমেলাটা আমরা এক মাস চালাতে পারি। তবে সেটা আপনারা নিজেরাও দেখবেন ভেবে।’

এ বিষয়ে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে চান না বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি বলেন, ‘একা আমি তো কিছু বলতে পারব না। আপনারা (বাংলা একাডেমি) কতটুকু করতে পারবেন। আসলে বইমেলা শুধু বইমেলা না, এটা মিলন মেলা।’

তবে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ জানিয়ে রেখেছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটলে বাড়ানো হতে পারে বইমেলার সময়সীমা।

মেলায় যেতে না পারার আক্ষেপ

করোনাভাইরাস ও নিরাপত্তাজনিত কারণে বইমেলায় সশরীরের হাজির হতে না পারার আক্ষেপ ঝরে পড়ে প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে। বইমেলা যাওয়া থেকে নিজেকে কখনও বিরত রাখেননি জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এখন আমি ঘরবন্দি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার দুঃখ হলো যে করোনার কারণে আমি ঘরবন্দি। ভাগ্যিস ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছিলাম, তাই অন্তত ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে আপনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হচ্ছে।’

স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলা একাডেমিতে যখন বইমেলা শুরু হলো আমার তো মনে হয় কোনো বইমেলা বাদ দিইনি। কারণ সারাদিনই বই মেলায় ঘুরে বেড়ানো এটা তো আমাদের একটা অভ্যাস ছিল।’

কিন্তু দেশের সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর সেখানে ভাটা নামার কথা জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছি, তখনই পায়ে শেকল পড়ল। এই নিরাপত্তার অজুহাতে বইমেলায় আগের মতো স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ থাকে না। আবার যখন বিরোধী দলে ছিলাম তখন কিন্তু গেছি।’

তিনি বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে বন্দিদশায় আছি। আর করোনাকালে আরো বেশি বন্দি হয়ে গেছি। এই দুঃখ থেকে গেল।’

প্রাণের মেলা বইমেলা

বই মেলাকে বাঙালির প্রাণের মেলা আখ্যা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোনো কারণে এই মেলাটা হতে না পারলে সবারই মন খারাপ হয়। আজকে আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলছি। কিন্তু আমাদের এই অধিকারে বারবার আঘাত এসেছে। পাকিস্তানিরা একবার এমন করল যে আরবি অক্ষরে বাংলা হবে। তার প্রতিবাদ বাঙালিরা করেছে। এরপর আসল রোমান হরফে বাংলা অক্ষর লেখা হবে। সেই প্রতিবাদও ছাত্রসমাজকে করতে হয়েছে, সেই প্রতিবাদও এ দেশবাসী করেছে।।’

ছাপা বইয়ের আবেদন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বই না পড়লে মনে হয়, কী যেন হলো না। তবে এখন তো ডিজিটাল যুগ। কাজেই ডিজিটাল যুগে আমাদের প্রবেশ করতে হবে। কিন্তু ডিজিটাল ডিভাইস দিয়ে বই পড়ার চেয়ে একটি বই হাতে নিয়ে পাতা উল্টে উল্টে দেখাতে এবং পড়াতে অনেক বেশি আনন্দ।’

তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন সরকারপ্রধান। বলেন, ‘কারণ সেখান থেকে আমরা পিছিয়ে যেতে চাই না। প্রযুক্তি আমাদের ব্যবহার করতে হবে। প্রযুক্তির শিক্ষা আমাদের নিতে হবে। তবে সেই সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বইয়ের মেলাটা আরও সুন্দর হোক সেটা আমরা চাই।’

দেশের কবি, সাহিত্যিকদের অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমি এটুকুই বলবো একটি জাতি সবসময় উন্নতি করতে পারে, যদি তার ভাষা সংস্কৃতি উন্নতি হয়। আর আমাদের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের সংস্কৃতিকর্মীদের বিরাট ভূমিকা রয়েছে।’

অনেক বাধা পেরিয়ে বাংলাদেশ আজকের এই অবস্থানে এসেছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘অনেক আঘাত এসেছে, বারবার বাধা এসেছে। কিন্তু সব বাধা একে একে অতিক্রম করে বাংলাদেশ আজকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির পিতার বক্তব্য ছিল, একটি জাতিকে রাজনৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকার- এই অধিকার অর্জনের জন্য ছিল তার সংগ্রাম।

‘এই অধিকার অর্জনের জন্যই ছিল আমাদের স্বাধীনতা। স্বাধীনতা পেয়েছি বলে আজকে আমরা আমাদের সাহিত্যচর্চা করতে পারছি নিজের ভাষায়।’

দেশের সাহিত্য তুলে ধরতে হবে বিশ্বসভায়

নিজেদের সমৃদ্ধির জন্য যেমন অনুবাদ সাহিত্য প্রয়োজন, তেমনি নিজেদের সাহিত্যও বিশ্বসভায় পৌঁছে দিতে তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘শুধু নিজের ভাষার কথা বললে হবে না। আন্তর্জাতিক ভাষা সম্পর্কেও জানতে হবে। কাজেই অনুবাদ আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজন। অনুবাদ সাহিত্য যেন আরও ভালোভাবে হয় সেদিকে আমাদের বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অন্য দেশের বা অন্য ভাষাভাষীদের সাহিত্য সম্পর্কে আমাদের জানা দরকার, শেখা দরকার, অনেক কিছু জানার আছে আমাদের। আবার আমাদের বাংলা সাহিত্য যেন অন্য দেশ বা অন্য ভাষাভাষীরা জানতে পারে সেই সুযোগটাও আমাদের সৃষ্টি করতে হবে।’

করোনায় সতর্ক থাকুন, টিকা নিন

করোনাভাইরাসের এই সংক্রমণ থেকে দেশবাসীর মুক্তি ঘটবে বলে আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি যে এই অবস্থা থাকবে না। এই অবস্থার পরিবর্তন নিশ্চয়ই হবে। আবার সবাই একসঙ্গে এই বইয়ের মিলন মেলায় এক হতে পারবেন। তবে আমার অনুরোধ থাকবে, যারা এই বই মেলায় আসবেন, তারা সবাই স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলবেন। কারণ এটা একান্তভাবে দরকার।’

সবাইকে টিকা নেয়ার আহ্বান রেখে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই টিকা দিচ্ছি, বুস্টার ডোজ দেয়া হচ্ছে। যারা নেননি, তাদেরকে অবশ্যই টিকা এবং বুস্টার ডোজ নিয়ে নিতে হবে।’

যাদের দুটি টিকা নেয়া হয়ে গেছে, তাদের বুস্টার ডোজ নেয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর যাদের এখনও টিকা নেয়া হয়নি, তারা সবাই টিকা নেবেন। অন্তত টিকা নেয়া থাকলে আপনি একটু সুরক্ষিত থাকেন। এই কথাটা সবাইকে একটু মনে রাখতে হবে। আর মাস্ক পরা থাকলেও নিজেকে সুরক্ষিত রাখা যায়।’

মুছে ফেলা হয় বঙ্গবন্ধুর অবদান

স্বাধীনতার ইতিহাসের মতো ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকেও বঙ্গবন্ধুর অবদানকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনে শেখ মুজিবের যে অবদান, সেটাও কিন্তু মুছে ফেলা হয়েছিল। অনেক গুণীজন বলেছেন, তাদের নাম বলব না, কারণ আমি কাউকে অসম্মান করতে চাই না, অনেকেই বলেছেন, তার আবার কী অবদান ছিল? তিনি তো জেলে ছিলেন।’

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারাগারের থাকার বিষয়টি বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু জেলে তো এমনি যাননি। তিনি ভাষার জন্য সংগ্রাম করে তারপর না জেলে গিয়েছেন। কত বছর তাকে কারাগারে থাকতে হয়েছে। কারাগারে থেকেও তো তিনি আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।’

সেই তথ্যের সত্যতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও পাকিস্তানি গোয়েন্দা রিপোর্টে রয়েছে বলে জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা।

একইসঙ্গে ভাষার জন্য বুকের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করা শহীদেরও স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘ভাষা শহীদদের যে অবদান, সে অবদান আমরা কোনোদিন ভুলতে পারব না। ভাষার জন্য রক্তদানের মধ্য দিয়ে একটি জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অস্ত্র হাতে নিয়ে এ দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করে, আমরা বিজয়ী জাতি।’

এ বিভাগের আরো খবর