ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিট বাতিলের সিদ্ধান্তকে অগণতান্ত্রিক বলে মনে করেন সমাজতান্ত্রিক ফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা। অবিলম্বে তারা এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে তারা এ দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক আরফাত সাদ ‘ঘ’ ইউনিট বহাল রাখার দাবিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের প্রতি একটি খোলা চিঠি পাঠ করেন।
খোলা চিঠিতে বলা হয়, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ১৬টি অ্যাকাডেমিক কমিটির মতামতের বাইরে গিয়ে ‘ঘ’ ইউনিট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কারণ আমরা জানতে পেরেছি, ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকদের এক সভায় উপস্থিত ১৬টি বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটিগুলোর সম্মতিতে ‘ঘ’ ইউনিট তুলে না দেয়ার পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এবং এটির প্রতিবেদন অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে পাঠানো হয়। তারপরও সাধারণ ভর্তি কমিটির সভায় ‘ঘ’ ইউনিট বাতিল করার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-১৯৭৩ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পর্যায়ের ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট অ্যাকাডেমিক কমিটিগুলোর। ফলে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ১৬টি অ্যাকাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ‘ঘ’ ইউনিট বাতিল করা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ অধ্যাদেশ পরিপন্থি।
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনেকটা দায়সারা উপায়ে এবং আড়ালেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের পেছনে সময়সাপেক্ষ ভাবনা ও যথাযথ আলাপ-আলোচনা প্রয়োজনীয়। কিন্তু প্রশাসন হুট করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের দুর্দশার কথা না ভেবে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা না করেই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের পথিকৃৎ হিসেবে কাজ করেছে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আজ এরূপ অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নিয়ে অধঃপতনের দিকে যাচ্ছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা সংকোচন নীতির দিকে এগোচ্ছে দাবি করে চিঠিতে বলা হয়, ‘ঘ’ ইউনিট বাতিলের ফলে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র একবার পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পাবে। এর আগে একজন বিজ্ঞান/মানবিক/বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী তার নিজ ইউনিট এর সাথে সাথে ‘ঘ’ ইউনিটে পরীক্ষা দেয়ার মাধ্যমে দুইবার পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পেতো। আগে থেকেই দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ না থাকা ও প্রায় ১ হাজার ৪০টি আসন কমানোর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণে বলা যাচ্ছে যে ‘ঘ’ ইউনিট বাতিল হলে শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ সংকুচিত হবে। অর্থাৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ধীরে ধীরে শিক্ষা সংকোচন নীতির দিকে এগোচ্ছে।
ঘ ইউনিট বহালের দাবি জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, ‘ঘ’ ইউনিট বাতিল করার পর শিক্ষার্থীরা কিভাবে নিজেদের স্ব স্ব বিভাগ পরিবর্তন করে অন্য বিভাগের সাবজেক্টে ভর্তি হবে সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা এখনও প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি। এমনিতেই করোনার বন্ধে বিশ্ববিদ্যায়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা মারাত্মকভাবে মানসিক এবং একাডেমিক ক্ষতির শিকার হয়েছে। এরূপ পরিস্থিতিতে ‘ঘ’ ইউনিট বাতিলের মতো অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত তাদের সামগ্রিক কষ্ট বাড়িয়ে দিবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক প্রগতি বর্মণ তমা, সহসভাপতি সাদিকুল ইসলাম এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোজাম্মেল হক।