করোনা মহামারির কারণে পিছিয়ে যাওয়া অমর একুশে বইমেলা শুরু হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ক্রমাগত বাড়তে থাকায় নির্ধারিত ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হতে পারেনি লেখক-পাঠক-প্রকাশকের এই মিলনমেলা।
ভাষার মাসের ৩৮তম এই আয়োজন চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে এলে বাড়ানো হতে পারে সময়সীমা।
মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বইমেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর। স্বাগত বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা।
১ ফেব্রুয়ারি থেকে মেলা শুরুর রীতি থাকলেও করোনা সংক্রমণে ঊর্ধ্বগতির কারণে তা ১৪ দিন পিছিয়ে দেয়া হয়।
প্রতিদিন বেলা ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে মেলা। তবে রাত ৮টার পর কেউ মেলায় ঢুকতে পারবেন না।
অবশ্য ছুটির দিনে সকাল ১১টায় শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে বইমেলা। আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে মেলা।
বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশ মিলিয়ে মেলার মোট আয়তন প্রায় সাড়ে ৭ লাখ বর্গফুট। থাকছে ৩৫টি প্যাভিলিয়ন। এ ছাড়া একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে ১৪২টি স্টল। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠান পেয়েছে ৬৩৪টি স্টল। সব মিলিয়ে মেলায় অংশ নেয়া সংস্থার সংখ্যা ৫৩৪টি।
বইমেলায় প্রবেশ ও বের হওয়াসহ সার্বিক নিরাপত্তায় বসানো হয়েছে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা। থাকবে পর্যাপ্ত আর্চওয়ে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
এবারও শিশুচত্বর থাকছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে শিশু প্রহর উদযাপন নিয়ে শঙ্কা কাটেনি।
লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়ে উদ্যানের এম্ফিথিয়েটারের পূর্বদিকে মেলার মূল প্রাঙ্গণে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। মোট ১২৭টি লিটলম্যাগ পেয়েছে স্টল।
বইমেলায় বাংলা একাডেমি ও মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ ছাড়ে বই বিক্রি করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ‘অমর একুশে বইমেলা বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলা লেখক-পাঠক-সংস্কৃতিকর্মী তথা সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে অনন্য জাগরণ সৃষ্টি করে। বাঙালি সংস্কৃতির মৌলিক বৈশিষ্ট্য মানবতাবাদী সংস্কৃতি।’
‘ভাষা শহীদদের রক্তস্নাত পথ ধরে গড়ে ওঠা বাংলা একাডেমি বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে দেশ ও দেশের বাইরে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে সারা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের প্রাণের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে- এ প্রত্যাশা করি।’
পৃথক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির মনন গঠনে এই বইমেলা সুদূপ্রসারী ভূমিকা রেখে চলেছে। বইমেলা আমাদের জীবনবোধ ও চেতনাকে প্রতিনিয়ত শাণিত করছে। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলনে আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে। মুক্তবুদ্ধির চর্চা, স্বাধীন মত প্রকাশ এবং শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার জন্য বর্তমানে দেশে অত্যন্ত সুন্দর ও আন্তরিক পরিবেশ বিরাজ করছে।’