করোনা মহামারির বছর ২০২১ সালে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় রেকর্ড পরিমাণ লেনদেন হয়েছে।
লেনদেনের পরিমাণ সাত লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। যা আগের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের চেয়ে ২ লাখ ৮ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা বেশি।
শতকরা হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ৩৭ শতাংশ। ২০২০ সাল শেষে লেনদেন হয়েছিল ৫ লাখ ৬১ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা।মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা বলেছেন, এক বছরের ব্যবধানে এত বড় প্রবৃদ্ধি অন্য কোনো সেবা খাতে সচরাচর দেখা যায়নি।
এর মধ্যে একক মাস হিসেবে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে গত মে মাসে, ৭১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে লেনদেন হয় ৭১ হাজার ১৮২ কোটি টাকা।
বিকাশ, রকেট, এমক্যাশ, উপায়সহ দেশে বর্তমানে ১৩টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক সেবা (এমএফএস) দিচ্ছে। ডাক বিভাগের সেবা ‘নগদ’ও একই ধরনের সেবা দিচ্ছে। তবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির এই সেবা উল্লিখিত হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
গ্রাহকসংখ্যা
তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং এখন সহজ ও জনপ্রিয় একটি সেবা। ফলে দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে গ্রাহকের সংখ্যা। সে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণও।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৩টি এমএফএস সেবার হালনাগাদ তথ্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, লেনদেনের পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় বাড়ছে এজেন্ট ও গ্রাহকের সংখ্যাও।
২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়ায় ১১ কোটি ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬৬৯। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এ সংখ্যা ছিল ৯ কোটি ৯৩ লাখ ৩৬ হাজার। ২০২১ সালে এমএফএস সেবায় ১ কোটি ২১ লাখ ৬২ হাজার গ্রাহক বেড়েছে।
গ্রাহকের মধ্যে গ্রামাঞ্চলে ৬ কোটি ২৩ লাখ এবং শহরের গ্রাহকসংখ্যা ৪ কোটি ৯২ লাখ।
নিবন্ধিতদের মধ্যে পুরুষ ৬ কোটি ৩০ লাখ এবং নারী গ্রাহক প্রায় ৫ কোটি।
এক বছরের ব্যবধানে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা ৬৪ হাজার ৫৬১ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ২৩ হাজার ৫৫৮ জনে।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অন্যান্য সেবা
মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন আর শুধু টাকা পাঠানোতেই সীমাবদ্ধ নেই। বরং এর মাধ্যমে দৈনন্দিন কেনাকাটা, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন বিল পরিশোধ এবং মোবাইলে রিচার্জসহ নানা ধরনের সেবা মিলছে।
রাজধানী ও জেলা শহরে গাড়িচালক ও গৃহপরিচারিকাদের বেতনও এখন দেয়া হচ্ছে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো সেবা মাধ্যম ব্যবহার করে। শ্রমজীবীরাও এখন এমএফএস সেবার মাধ্যমে গ্রামে টাকা পাঠাচ্ছেন।
ডিসেম্বর মাসে এমএফএস সেবায় ব্যক্তি হিসাব থেকে ব্যক্তি হিসাবে ২০ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ বিতরণ হয় ২ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। বিভিন্ন পরিষেবার ১ হাজার ১৫৮ কোটি টাকার বিল পরিশোধ হয়। কেনাকাটার ৩ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকার বিলও পরিশোধ হয় এ মাধ্যমে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে।