লেলিহান আগুনের শিখা কেড়ে নিয়েছে সব। ছাই হয়ে গেছে সারা জীবনের সম্বল। মাথার উপরে ছাদও নেই। চোখ জুড়ে এখন শুধু অসহায়ত্ব।
ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সব হারিয়ে অথৈ জলে ভাসছেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ফকিরহাট উপকূল সংলগ্ন জেলেপাড়ার ২২টি পরিবার।
গত ২৮ জানুয়ারি রাতে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে হয়ে যায় জেলেপাড়ার ১৩টি বসতঘর। কোনো মতে নিজের প্রাণ বাঁচিয়ে বের হতে পারলেও মাছ ধরার জালসহ কিছুই রক্ষা করতে পারেননি তারা।
বৃহস্পতিবার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পোড়া বাড়ির মেঝেতে বসে আছে জেলে পরিবারগুলো। কেউ এদিক-ওদিক পায়চারি করছেন। চারদিকে ছাই ও পোড়া গন্ধ। সংবাদকর্মী দেখে এগিয়ে এসে বললেন নিজেদের দুর্দশার কথা।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো জানায়, পূর্বশত্রুতা থেকে কেউ আগুন লাগিয়েছে বলে তাদের সন্দেহ। বিভিন্ন জায়গা থেকে খাদ্যসামগ্রী ও ত্রাণ পেলেও মাথা গোজার জায়গা হয়নি। দিনে এখানে থাকলেও রাতে কেউ কেউ আশ্রয় নেন প্রতিবেশী কিংবা স্বজনদের বাসায়। কীভাবে এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠবেন তারা জানেন না।
ভুক্তভোগী মঙ্গলী রানি দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সে রাতে যদি আমি ঠাহর না পেতাম, তাহলে আমার পরিবারের সবাই আগুনে জ্বলে যেত। চোখের পলকে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সব ছাই।’
তার ছেলে বিশ্বনাথ দাস ও স্বামী রুই দাসের অভিযোগ এ ঘটনার পেছনে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর হাত রয়েছে।
বিশ্বনাথ জানান, তারা যখন বের হওয়ার চেষ্টা করেন, দেখতে পান মূল ফটকটি বাইরে থেকে তালা মারা। ভেতরের দিকের আরেকটি দরজা খোলা থাকায় তারা প্রাণে বেঁচে গেছেন। উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে বলে তাদের সন্দেহ। আগুন পাশেও ছড়িয়ে যায়।
বিশ্বনাথ জানান, তাদের লাখ লাখ টাকার মাছ ধরার জাল ও সারা জীবনের সম্বল আগুনে পুড়ে গেছে। কোনো মতে পরনের কাপড় নিয়ে তারা বেরিয়ে আসতে পেরেছেন।
পরিবারগুলোর উপার্জনের একমাস উৎস মাছ ধরা। জাল পুড়ে যাওয়ায় তাদের উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে।
বিশ্বনাথ বলেন, ‘এর আগেও আমার পাঁচ লাখ টাকার ককশিট আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়। আমরা মামলা করেছি। আমরা সুষ্ঠ বিচার চাই। আমাদের ঘর চাই।’
ছলছল চোখে একই কথা বলেছেন রুই দাস। সারা জীবনের সম্বল হারিয়ে আক্ষেপ করছেন জীবন নিয়ে। আশঙ্কা করছেন জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও।
পোড়া ভিটাটি দেখিয়ে হিরালাল দাস নামের আরেকজন ভুক্তভোগী বলেন, ‘এই জায়গায় আমার ঘর ছিল। কেমনে কী করবো, এখন কিচ্ছু বলতে কিচ্ছু নাই। স্থানীয় এমপি, চেয়ারম্যান, প্রতিবেশীসহ অনেকেই সাহায্য করছেন। কিন্তু ঘর উঠাব কীভাবে?’
পোড়া বাড়িতেই দেখা মেলে একটি মন্দিরের। মন্দিরের সেবিকা সুধবীবালা দাস বলেন অর্থকষ্টের কথা। অশ্রুসজল চোখে তিনি বলেন, ‘আমি সবকিছু ছেড়ে এখানে থাকি, এখানেই খাই। মন্দিরের ভিতরে ভক্তদের টাকা ছিল, সেগুলোও জ্বলে ছাই হয়ে গেছে। একটা টাকাও নেই যে ঠাকুরকে দিয়ে নিজে কিছু পান করব। সরকারি ত্রাণে কিছু খেতে পারছি।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সীতাকুণ্ড থানার উপপরিদর্শক নির্মল ত্রিপুরা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা হয়েছে। আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলেছি। তদন্ত কাজ চলমান।’