বইমেলা ঘিরে জঙ্গি তৎপরতা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না মন্তব্য করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, এটি প্রতিরোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
বইমেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শনে গিয়ে রোববার সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার রায়ের জন্য জঙ্গিরা একটু ক্ষিপ্ত রয়েছে। সেই সঙ্গে জঙ্গিদের নেতা মেজর জিয়া ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় বইমেলা ঘিরে জঙ্গি তৎপরতাকে একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না, তবে আতঙ্কের কিছু নেই। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মেলায় জঙ্গি তৎপরতা হলে তা রুখে দিতে সোয়াটসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ও ফায়ার সার্ভিসকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তারা পুরো সময় মনিটর করবে।
‘আমরা আশা করি তেমন কিছুই ঘটবে না। তাদের মূল নেতা যেহেতু বাইরে আছে, সেই অর্থে আমাদের প্রস্তুতি নেয়া আছে।’
মেলার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘বইমেলা ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলাকেন্দ্রিক একটি, দোয়েল চত্বর, শহীদ মিনারকেন্দ্রিক ও শাহবাগ-নীলক্ষেতকেন্দ্রিক আরেকটি নিরাপত্তা ব্যবস্থ থাকবে।
‘তিনটি স্তরেই প্রাথমিক তল্লাশি দল থাকবে। সন্দেহজনক কিছু মনে হলেই তারা তল্লাশি চালাবে। মেলায় প্রবেশে মোট ছয়টি গেটে আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেকটর দিয়ে তল্লাশি চালানো হবে। মেলা প্রাঙ্গণকে সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। সেই সঙ্গে সোয়াট, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ ডগ স্কোয়াড মোতায়েন থাকবে।’
মেলায় ধর্মীয় উসকানি সংক্রান্ত বইয়ের প্রবেশ রুখতে ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতি বছরই বইমেলার লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে হঠাৎ করেই কিছু আপত্তিকর বই আসে, যেখনে ধর্মীয় উসকানি দেয়ার মতো বইও থাকে, যেগুলো নিয়ে হইচই শুরু হয়।
‘আমরা এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে গোয়েন্দা ও পুলিশ রাখব। তারা এগুলো মনিটর করবে যে, প্রতিদিন কী কী বইমেলায় ঢুকছে। এখন রাতের আঁধারে যদি এমন কোনো বই মেলায় ঢুকে, সেই দায় স্টল মালিক ও প্রকাশককে নিতে হবে।’
মেলায় স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে বলেও জানান ডিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে মেলায় আসতে হবে। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। সেই সঙ্গে মেলার গেটে সবার শরীরের তাপমাত্রা মেপে এরপর মেলায় ঢুকতে হবে।
‘মেলার ভেতরেও মোবাইল টিম থাকবে স্বাস্থ্যবিধি মনিটরের জন্য। মেলার স্টলের দায়িত্বে থাকা সবাইকে তাদের করোনা টিকা সার্টিফিকেট সঙ্গে রাখতে হবে। না হলে কাউকে স্টলে থাকতে দেয়া হবে না।’
অতীতে ১ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলা উদ্বোধন হলেও এবার করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ১৪ দিন পিছিয়ে মেলা শুরু হচ্ছে ১৫ ফেব্রুয়ারি।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় মেলার সার্বিক প্রস্তুতি ঘুরে দেখেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
ওই সময় তিনি বলেন, ‘মেলার যে সময়কাল দুই সপ্তাহ, আসলে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি যে, বইমেলা মাসব্যাপী হয়। এবার কোভিডের কারণে তো আমরা ১ তারিখে শুরু করতে পারলাম না।
‘কোভিড পরিস্থিতির ওপর বিবেচনা করে যদি সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে আসে, কমে আসে, সহনশীলতার মধ্যে আসে, তাহলে আমরা চেষ্টা করব মেলার সময় বৃদ্ধি করার জন্য।’