বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান প্রদর্শনের লক্ষ্যে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ লেখাসংবলিত বিশেষ জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বিতরণ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
প্রাথমিক পর্যায়ে রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ১০০ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বিশেষ এনআইডি দেয়া হবে।
স্মার্ট কার্ড (আইডিইএ-২) প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক স্কোয়াড্রন লিডার কাজি আশিকুজ্জামান বৃহস্পতিবার এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা লেখা বিশেষ স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে স্মার্টকার্ডের চিপের নিচ দিয়ে লেখা থাকবে শব্দ দুটি।
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্য, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ ১০০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এই বিশেষায়িত স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হবে।’
‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ লেখাসংবলিত বিশেষ এনআইডি দেয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান কাজি আশিকুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘অনুমোদিত তালিকার ভিত্তিতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য স্মার্ট কার্ড প্রস্তুত করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব বীর মুক্তিযোদ্ধার হাতে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র তুলে দেয়া হবে।'
বর্তমানে দেশে গেজেটেড বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রায় ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৬০ জন। যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধা আগে স্মার্ট কার্ড পেয়েছেন তাদেরও পর্যায়ক্রমে এই বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হবে।
ইসি সার্ভারে ১১ কোটি ১৭ লাখের মতো ভোটারের তথ্য রয়েছে। এদের প্রায় সবাই লেমিনেটেড এনআইডি পেয়েছেন। আর স্মার্ট কার্ড পেয়েছেন ছয় কোটির বেশি নাগরিক।
গত ২০ ডিসেম্বর বিশেষ এই স্মার্ট কার্ডের নকশা তৈরি করতে সাত সদস্যের টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সুপারিশ ও পরামর্শ অনুযায়ী স্মার্ট কার্ডের ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়। অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী বর্তমান স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের অবয়ব ও নিরাপত্তাবৈশিষ্ট্য অপরিবর্তিত থাকবে।
স্মার্ট কার্ডে তিন স্তরবিশিষ্ট ২৫টি নিরাপত্তাবৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রথম স্তরের নিরাপত্তাবৈশিষ্ট্য খালি চোখে দেখা গেলেও দ্বিতীয় স্তরের বৈশিষ্ট্যগুলো দেখার জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ যন্ত্র।
অন্যদিকে ল্যাবরেটরিতে ফরেনসিক টেস্টের মাধ্যমে শেষ পর্যায়ের নিরাপত্তাবৈশিষ্ট্য শনাক্ত করা হয়।
‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ শব্দ দুটি সংযোজনের ফলে কোনো ধরনের নিরাপত্তাবৈশিষ্ট্য এবং যাচাই যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সে বিষয় নিশ্চিত করা হয়েছে।
এই প্রথম কোনো একটি বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য স্মার্ট কার্ডের ডিজাইনে পরিবর্তন এনেছে কমিশন।
ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্যাদি স্মার্ট কার্ড এবং ডাটাবেজেও সংরক্ষিত থাকবে।
২০০৭ সালে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকার কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে এনআইডি কার্যক্রম শুরু করে ইসি। এরপর বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ২০১১ সালে স্মার্ট কার্ড (আইডিইএ) প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।
সেই প্রকল্প শেষ হলে ২০২০ সালে আইডিইএ-২ প্রকল্প হাতে নেয়া হয় সরকারি তহবিল থেকে। বর্তমানে এর অধীনে দেশের সব নাগরিককে স্মার্ট কার্ড সরবরাহের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।