ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা সদরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখেন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার (স্যাকমো) আজম খান।
চিকিৎসক পরিচয় দেয়া আজম খানের ভুল চিকিৎসায় পঙ্গুত্বের পথে ৩৯ বছরের গৃহবধূ শাহিনুর বেগম, এমনটাই অভিযোগ তার পরিবারের।
উপজেলার পুখরিজানা গ্রামের বাসিন্দা ইজিবাইকচালক আফজাল মোল্লার স্ত্রী শাহিনুর বেগম বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন।
শাহিনুরের পরিবার জানায়, গত বছরের জুলাই মাসে হাঁটু ও পায়ে ব্যথা অনুভব করলে তাকে রাজাপুরের একটি ক্লিনিকে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক পরিচয়ে আজম খান তাকে দেখেন ও পরামর্শ দেন।
পরবর্তী সময়ে স্টেরয়েড নামক চারটি ইনজেকশন পরপর ২ সপ্তাহে শাহিনুরের পায়ে নিজেই পুশ করেন আজম খান। এর পর থেকেই আস্তে আস্তে তার দুই পা ফুলে ওঠে ও যন্ত্রণা বাড়তে থাকে।
এ ঘটনার এক মাস পর স্বজনদের পরামর্শে ঝালকাঠিতে অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ফেরদৌস রায়হানের কাছে যান শাহিনুর। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানান, শাহিনুরের পায়ে স্টেরয়েড ইনজেকশন দেয়ায় টেন্ডো অ্যাকাইলিজ নামক দুটি রগ ছিঁড়ে গেছে।
তখন ওই চিকিৎসকের পরামর্শে শাহিনুর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় গিয়ে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি।
বর্তমানে রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন শাকিনুর বেগম। ছবি: নিউজবাংলা
পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে শাহিনুরের স্বামী আফজাল মোল্লা বলেন, ‘ঢাকার স্যারেরা কইছে ভুল ইনজেকশন দেওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হইছে। এর চিকিৎসা করাইতে এহন আষ্টো (আট) লাখ টাহা লাগবো।’
এ কথা শুনে হাসপাতাল থেকে নাম কাটিয়ে বাড়িতে চলে আসেন শাহিনুর। এ দিকে আবারও ফুলে ওঠে তার পা। ব্যথা সইতে না পেরে ভর্তি হন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে দ্বিতীয় তলায় মহিলা ওয়ার্ডের ১৭ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন তিনি।
নিউজবাংলাকে শাহিনুর বলেন, ‘গত কয়েক দিন আগে পাও দুইডা ফুইল্যা গেছে। ব্যতা সইতে না পাইররা পয়লা ফেব্রুয়ারি এ হাসপাতালে ভর্তি অইছি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে আজম খানের কর্মস্থল উপজেলার গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গত ৭ ফেব্রুয়ারি গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার সঙ্গে কথা হয় মুঠোফোনে।
তিনি বলেন, ‘কয়েক মাস আগের বিষয় তো কাগজপত্র না দেখে বলতে পারব না। তাছাড়া অনেক রোগী বড় বড় চিকিৎসক দেখিয়ে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে আসেন। অনেকে ইনজেকশনও কিনে আনেন, আমি শুধু পুশ করে দেই।
‘তবে শাহিনুরের বিষয়ে না জেনে বা কাগজপত্র না দেখে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’
তবে স্টেরয়েড ইনজেকশন দেয়ায় শাহিনুরের দুই পায়ের টেন্ডো অ্যাকাইলিজ ছিঁড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) আবুল খায়ের রাসেল।
তিনি বলেন, ‘আজম খান কোনো চিকিৎসক নন, তবুও তিনি রাজাপুর সোহাগ ক্লিনিকে প্রতিদিন রোগী দেখেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
ঝালকাঠি সিভিল সার্জন শিহাব উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার কীভাবে স্টেরয়েড ইনজেকশন প্রয়োগ করলেন তা আমার বোধগম্য নয়। আজম খান যেটা করেছেন তা অপরাধ।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনেছি। রোগীর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলেই তদন্ত কমিটি করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’