প্রাথমিক থেকে শুরু করে শিক্ষাজীবনের যেকোনো পর্যায়েই মানুষ তার করণীয় সম্পর্কে একটা দিকনির্দেশনা পায়। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে কী করা যাবে আর কী করা যাবে না, তা নিয়ে ওরিয়েন্টেশন থাকে। কিন্তু ডিজিটাল শিক্ষার শুরুতে মানুষের কোনো নির্দেশনা থাকে না। তাই ডিজিটাল লাইফেরও ডিজিটাল রিটারেসি বা ব্যবহারবিধি বা আচরণবিধি প্রয়োজন বলেই মনে করেন এই খাতের বিশেষজ্ঞরা। তাহলে ডিজিটাল পণ্যগুলোর সঠিক ব্যবহার কিভাবে করতে হবে তাও জানতে পারবে মানুষ।
মঙ্গলবার ‘নিরাপদ ইন্টারনেট দিবস-২০২২’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) উদ্যোগে বিসিসি অডিটরিয়ামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বিসিসির নির্বাহী পরিচালক ড. আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক। আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলমও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
ইন্টারনেট থেকে শিশুরা ভালোর সঙ্গে খারাপটাও শিখছে। তারা ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডকে আসল জগৎ মনে করে। ফিজিক্যাল ওয়ার্ল্ড তাদের কাছে অনেকটাই অপরিচিত। ইউটিউব দেখে তারা অনলাইনে শিক্ষকদের ভেংচাচ্ছে। অনলাইন কনটেন্টে ৭০ শতাংশই গালাগালিতে পূর্ণ। তাই এ সম্পর্কে তাদের করণীয় শেখাতে হবে।
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেন, ‘দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রায় ১৩ কোটি মানুষ যাতে নিরাপদ থাকে তা নিশ্চিত করাই মূল লক্ষ্য। ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কে মানুষকে জানাতে ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মানুষকে জানানো হবে ডিজিটাল স্পেসে তার কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
‘দেশের তরুণরা শুধু বাংলাদেশের সাইবার স্পেস নয়, সারা বিশ্বের ডিজিটাল স্পেস নিরাপদ রাখতে সাহসী ভূমিকা নিচ্ছে। তরুণরা এখন আর শুধু বিনোদনের জন্য নয়, বরং ইন্টারনেটের শক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে একেকজন ডিজিটাল খাতে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করছে। তারা পরিবারে সচ্ছলতা আনার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে ডিজিটাল অর্থনীতি হিসেবে গড়ে তুলছে। তাই তাদের মতামত, পরামর্শ ও সুপারিশগুলো আমাদের কর্মকাণ্ডে প্রতিফলিত হতে হবে।’
গ্রামীণফোনের সিইও ইয়াসির আজমান বলেন, ‘ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য শিশুদের অবশ্যই যথাযথ শিক্ষা দিতে হবে। এখান থেকে শিশুরা ভালোর সঙ্গে খারাপটাও শিখছে। তারা ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডকে আসল জগৎ মনে করে। ফিজিক্যাল ওয়ার্ল্ড তাদের কাছে অনেকটাই অপরিচিত। ইউটিউব দেখে তারা অনলাইনে শিক্ষকদের ভেংচাচ্ছে। অনলাইন কনটেন্টে ৭০ শতাংশই গালাগালিতে পূর্ণ। এটা শিশু-কিশোররা শিখছে। তাই এ সম্পর্কে তাদের করণীয় শেখাতে হবে। যেভাবে বাচ্চাদের গণিত, বিজ্ঞান, ইংরেজি বাধ্যতামূলক শেখানো হয়; তেমন করে ডিজিটাল লিটারেসি সম্পর্কেও বাধ্যতামূলক কোর্সের মাধ্যমে তাদের শেখাতে হবে।’
প্রশ্ন আসে, বাচ্চাদের ইন্টারনেট দেয়া ঠিক কি না। তাদের ইন্টারনেটে না আনলে শিখবে কিভাবে? আমরা তাদের শেখাব কিভাবে ইন্টারনেটের জগতে সাইবার বুলিং থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হয়। কিভাবে প্রয়োজনীয় কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হয়। এ জন্য তাদের মা-বাবাকে প্রথমে ট্রেনিং দিতে হবে।
ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ মুখার্জী বলেন, ‘বর্তমান সময়ে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধদেরও ডিজিটাল লাইফে অভ্যস্ত হতে হবে। কিন্তু তারা জানে না কিভাবে সেগুলো ব্যবহার করতে হয়। শিশুদের শেখানো আর বৃদ্ধদের শেখানোর ধরন আলাদা। সবার উপযোগী ডিজিটাল লিটারেসি প্রয়োজন। এ জন্য তরুণদের বেশি করে জানতে হবে। একসময় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আসত বিদ্যালয় থেকে, আর মূল্যবোধ শেখানো হতো পরিবার থেকে। কিন্তু এখন পরিবারের ধরন পরিবর্তন হয়েছে। মূল্যবোধ শেখানোর কেউ নেই। এদিকে নজর ও বিনিয়োগ করতে হবে।’
রবির পরিচালক শাহেদ আলম বলেন, ‘ডিজিটাল লিটারেসির বিকল্প নেই। আমরা যেটাই ইউজ করব, দেখতে হবে সেটার রিস্ক কোথায়। রিস্কটা বুঝতে পারলেই আমরা সাবধানতা অবলম্বন করতে পারব। এটা পারব ডিজিটাল লিটারেসির মাধ্যমে। ডিজিটাল লিটারেসির মাধ্যমেই একজন ৭০ বছরের বৃদ্ধও প্রযুক্তির সুবিধা ভোগ করতে পারছেন।’
ইউনিসেফের চাইল্ড প্রোটেকশন স্পেশালিস্ট মনিরা হাসান বলেন, ‘ইউনিসেফ শিশু-কিশোর নিয়ে কাজ করে। প্রশ্ন আসে, বাচ্চাদের ইন্টারনেট দেয়া ঠিক কি না। তাদের ইন্টারনেটে না আনলে তারা শিখবে কিভাবে? আমরা তাদের শেখাব কিভাবে ইন্টারনেটের জগতে সাইবার বুলিং থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হবে। কিভাবে প্রয়োজনীয় কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হবে। তাদের মা-বাবাকে প্রথমে ট্রেনিং দিতে হবে। এ জন্য ১০ মিলিয়ন ঝরে পড়া শিশুকে নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার শেখানোর উদ্যোগ নিয়েছে ইউনিসেফ।’
সিসিমপুরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম বলেন, ‘সিসিমপুর ১০ বছরের নিচের শিশুদের কনটেন্ট নিয়ে কাজ করে। এখন কিশোর নিয়েও ভাবা হচ্ছে।’
বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ, ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার হেড অব পাবলিক পলিসি, বাংলাদেশের সাবহানাজ রশীদ আলোচনায় অংশ নেন। স্বাগত বক্তব্য দেন আইসিটি বিভাগের ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টারের প্রকল্প পরিচালক সাইফুল আলম খান। উপস্থাপনা করেন টেন মিনিট স্কুলের উদ্যোক্তা আয়মান সাদিক।
পরে প্রতিমন্ত্রী পলক www.digitalliteracy.gov.bd ওয়েবসাইটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন।