বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঢাবিতে ‘ঘ’ ইউনিট থাকছে না যে কারণে

  •    
  • ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:১২

সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা বলেন, ‘ঘ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার যে পদ্ধতি তা যৌক্তিক নয়। শিক্ষার্থীর উচ্চ মাধ্যমিকের কারিকুলামের ওপর ভিত্তি করে পরীক্ষা হওয়া উচিত। অথচ ‘ঘ’ ইউনিটে শিক্ষার্থীদের সাধারণ জ্ঞানের পরীক্ষা দিতে হয়। তাছাড়া ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষা না থাকলে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ভোগান্তি কমবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগ পরিবর্তন ‘ঘ’ ইউনিট ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

প্রশ্ন উঠেছে, ‘ঘ’ ইউনিট থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাব্যবস্থায় কী সমস্যা হচ্ছিল। আর ইউনিট বাদ দেয়ার এই সিদ্ধান্তে কার কী লাভ বা ক্ষতি হবে।

‘ঘ’ ইউনিটের মাধ্যমে মূলত শিক্ষার্থীরা বিভাগ পরিবর্তন করে অন্য বিভাগের বিষয়গুলোতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় নিজের ইউনিটের পাশাপাশি ‘ঘ’ ইউনিটে পরীক্ষা দেয়ার মাধ্যমে দুইবার চেষ্টার সুযোগটি হারাবে শিক্ষার্থীরা। বিভাগ পরিবর্তনে বিকল্প ব্যবস্থার কথা বলা হলেও তা কেমন হবে- এ নিয়েও তৈরি হয়েছে প্রশ্ন।

উপাচার্য ড. মো আখতারুজ্জামান জানান, ‘ঘ’ ইউনিট কমানোর সিদ্ধান্তে পরীক্ষার বোঝা ও ভোগান্তি কমবে। এখন শিক্ষার্থীদের অধ্যয়ন ক্ষেত্র পরিবর্তনের নীতি ও কৌশল বের করতে পারলে একটি পরীক্ষার বোঝা কমবে৷

সোমবার অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ভর্তি কমিটির বিশেষ এক সভায় ‘ঘ’ ইউনিট না রাখার সিদ্ধান্ত অনুমোদন হলেও এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে মূলত ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ডিনস কমিটির সভায়।

ডিনস কমিটির সেই সভা শেষে উপাচার্য ড. মো আখতারুজ্জামান জানিয়েছিলেন, ‘ঘ’ ইউনিট কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ ফলে পরীক্ষার বোঝা ও ভোগান্তি কমবে। এখন কৌশল বের করতে হবে কীভাবে শিক্ষার্থীরা নিজেদের অধ্যয়ন ক্ষেত্র পরিবর্তন করতে পারেন। এই নীতি ও কৌশল বের করতে পারলে আমরা একটি পরীক্ষার বোঝা কমাতে পারব৷

ভর্তি কমিটির সোমবারের সভায় সেই নীতি ও কৌশল বের করার জন্য কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবদুল বাছিরকে প্রধান করে একটি সাবকমিটি করা হয়েছে।

‘ঘ’ ইউনিট বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত কেন?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষদের একজন ডিন জানান, ‘ঘ’ ইউনিট না রেখে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে যে তিনটি শিক্ষাধারা (মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা) বিদ্যমান আছে তা বিবেচনায় নিয়ে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের নীতি অনুসরণ করলে শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষার চাপ ও পরীক্ষার সংখ্যা কমবে।

তিনি আরও জানান, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যপুস্তকমুখী হবে। ফলে বাড়তি কোচিং নির্ভরতা অনেকাংশে কমবে। এ জন্যই ‘ঘ’ ইউনিট না রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে এই ইউনিটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভাগ পরিবর্তনের যে সুযোগটা পেত সেটি অবশ্যই অব্যাহত থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করে, ‘খ’ ও ‘ঘ’ ইউনিট এবং অন্যদিকে ‘গ’ ইউনিট ও আইবিএর ভর্তি পরীক্ষা অনেকটা একই প্রকৃতির। একই প্রকৃতির একাধিক পরীক্ষা আয়োজন না করা এবং শিক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমান পর্যায়ে অধীত পাঠক্রম বা পাঠ্যপুস্তকের আলোকে মূল্যায়ন করাই কাম্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন অধ্যাপক জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে আসন কমানোর পাশাপাশি ইউনিটভিত্তিক পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রেও গুণগত মান ও শিক্ষার্থীদের অধীত শিক্ষাধারা বা পাঠক্রম বিবেচনায় নিয়ে সংস্কার ও উন্নয়ন জরুরি। এ সিদ্ধান্তের পেছনে ওই বিষয়টিই মুখ্য।

এই অধ্যাপক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করে, ‘খ’ ও ‘ঘ’ ইউনিট এবং অন্যদিকে ‘গ’ ইউনিট ও আইবিএ’র (ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট) ভর্তি পরীক্ষা অনেকটা একই প্রকৃতির। একই প্রকৃতির একাধিক পরীক্ষা আয়োজন না করা এবং শিক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমান পর্যায়ে অধীত পাঠক্রম বা পাঠ্যপুস্তকের আলোকে তাদের মূল্যায়ন করাই কাম্য।

লাভ-ক্ষতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পাঁচটি ইউনিটের অধীনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়ে থাকে৷ এগুলো হলো বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর জন্য ‘ক’, কলা বিষয়গুলোর জন্য ‘খ’, ব্যবসায় শিক্ষার বিষয়গুলোর জন্য ‘গ’, চারুকলার বিষয়গুলোর জন্য ‘চ’ এবং বিভাগ পরিবর্তনের জন্য ‘ঘ’ ইউনিট।

‘ক’ ও ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিকে পঠিত নিজেদের গ্রুপ সাবজেক্ট অর্থাৎ ব্যবসায় শিক্ষার জন্য অ্যাকাউন্টিং, ফিন্যান্স, ম্যানেজমেন্ট ও মার্কেটিং এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও গণিতের ওপর পরীক্ষা দিতে হয়। কিন্তু ‘ঘ’ ইউনিটে শিক্ষার্থীদের গ্রুপ সাবজেক্টের ওপর কোনো মূল্যায়ন হয় না। তারা গ্রুপ সাবজেক্ট না পড়ে শুধু সাধারণ জ্ঞান, বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের ওপর পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হতে পারে। তাই এই ইউনিটকে না রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন শিক্ষকরা।

‘ঘ’ ইউনিট না রাখার সিদ্ধান্তে ভর্তীচ্ছুদের জন্য লাভ-ক্ষতি দুটিই রয়েছে, বলছেন শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা বলেন, ‘ঘ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার যে পদ্ধতি তা একদমই যৌক্তিক নয়। কারণ একজন শিক্ষার্থীর উচ্চ মাধ্যমিকে যে কারিকুলাম ছিল, সেটির ওপর ভিত্তি করে পরীক্ষা হওয়া উচিত। কিন্তু ‘ঘ’ ইউনিটে শিক্ষার্থীদের সাধারণ জ্ঞানে পরীক্ষা দিতে হয়। এটি তো কোনো শিক্ষার্থী আগে পড়ে না। তাই আগে পড়ার যেখানে মূল্য থাকে না, সেই পরীক্ষার মূল্য কতটুকু সেটি ভাবার বিষয়।

তিনি আরো বলেন, মাইগ্রেশনের সিস্টেম থাকায় ‘ক’ বা ‘গ’ ইউনিটে পরীক্ষা দিয়েও অনেকে অন্য বিভাগে যেতে পারবে। সুতরাং ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষা না থাকলে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ভোগান্তি কমবে।

‘ঘ’ ইউনিট না রাখার সিদ্ধান্তে ভর্তীচ্ছুদের জন্য লাভ-ক্ষতি দুটিই রয়েছে, বলছেন শিক্ষার্থীরা।

২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষায় প্রথম হওয়া আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শাহ মারুফ বলেন, ‘ঘ’ ইউনিট না রাখার সিদ্ধান্তে আপাতত শিক্ষার্থীদের একদিকে উপকার হয়েছে, অন্যদিকে ক্ষতি হয়েছে। উপকারটা হলো, ভর্তীচ্ছুরা অতিরিক্ত একটি পরীক্ষা থেকে বেঁচেছে। ফলে তাদের শ্রম ও অর্থ সাশ্রয় হবে। আর ক্ষতিটা হলো আগে শিক্ষার্থীরা ‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’ ইউনিটে চান্স না পেলে ‘ঘ’ ইউনিট তাদের জন্য বাড়তি একটা সুযোগ দিত। এখন তারা সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।

তিনি বলেন, তবে শিক্ষার্থীদের বড় কোনো ক্ষতি হবে কি না সেটি বোঝা যাবে বিভাগ পরিবর্তনের নীতিমালা তৈরি হওয়ার পর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ নেই। এ অবস্থায় নিজের ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার পর ‘ঘ’ ইউনিটে পরীক্ষা দেয়ার মাধ্যমে দু’বার চেষ্টার সুযোগটি অনেকের দরকার। এখন শিক্ষার্থীরা সেটি হারাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী ফখরুল ইসলাম কল্প বলেন, আগামী শিক্ষাবর্ষে ভর্তিচ্ছু যারা বিভাগ পরিবর্তন করতে চায় তারা অনেক আগে থেকেই প্রচলিত নিয়মে ‘ঘ’ ইউনিটের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। অর্থাৎ তারা নিজেদের গ্রুপ সাবজেক্ট বাদ দিয়ে সাধারণ জ্ঞান, বাংলা ও ইংরেজির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে।

আবার নতুন এই সিদ্ধান্তে বিভাগ পরিবর্তনে ইচ্ছুক ভর্তীচ্ছুদের সিলেবাস কী হবে সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। সুতরাং এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল আহসান বলেন, এত দিন কোনো ভর্তীচ্ছু নিজের বিভাগে চান্স না পেলে ‘ঘ’ ইউনিটের মাধ্যমে বাড়তি একটি সুযোগ পেত। এখন ‘ঘ’ ইউনিট না থাকলে শিক্ষার্থীরা এই সুযোগটা হারাবে।

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ নেই। এ অবস্থায় নিজের ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার পর ‘ঘ’ ইউনিটে পরীক্ষা দেয়ার মাধ্যমে দুইবার চেষ্টার সুযোগটি অনেকের দরকার। এখন শিক্ষার্থীরা সেটি হারাবে।

আলাল’স GK সিরিজের লেখক, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম আলাল বলেন, আমি মনে করি, শিক্ষার্থীদের জন্য এটি ভালোই হয়েছে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে যে ‘ঘ’ ইউনিট না থাকলেও বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে। এখন ‘ঘ’ ইউনিটের সুযোগটা যদি ‘খ’ ইউনিটে পরীক্ষা দেয়ার মাধ‌্যমে পাওয়া যায় তাহলে ক্ষতি কোথায়।

তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ, প্রশ্ন ফাঁস এবং সময় সাশ্রয় হবে। তেমনই শিক্ষার্থীদের দুইবার পরীক্ষায় না বসে একটি পরীক্ষার মাধ্যমেই ভর্তির সুযোগ তৈরি হ‌বে। তবে এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ভর্তীচ্ছুদের অন্য কোনো বড় ক্ষতি হচ্ছে কি না সেটি এ বিষয়ে নীতিমালা হওয়ার পর বোঝা যাবে।

এ বিভাগের আরো খবর