বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কৃষকদের কাঁদিয়ে ক্ষমতাসীন নেতার রমরমা বালুর ব্যবসা

  •    
  • ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৯:৪৩

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও এখনও তারা প্রতিকার পাননি।

নওগাঁয় বদলগাছী উপজেলার আধাইপুর ইউনিয়নের কাষ্টডোব কাঁটা চর এলাকায় ছোটযমুনা নদীর প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে হুমকিতে পড়েছে ওই এলাকার অর্ধশত কৃষকের তিন ফসলী জমি।

অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রভাবশালীদের ইন্ধনে তিলকপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও মিলন কুমার কৃষকদের হুমকিসহ তাদের জমি থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন।

এ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও এখনও তারা প্রতিকার পাননি।

ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, ছোট যমুনা নদীর কাটা চরে বছরে ৩টি ফসল উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা। কিন্তু বালু মহালের নামে তাদের এসব জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন নেতারা।

কৃষকরা দাবি করেন, অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে নদীর দুই পাশের উঁচু জমি ভেঙ্গে নদীতে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বালি আনা-নেয়ার কাজে ট্রাক চলাচলের কারণে ধুলোবালি উড়ে গিয়ে ফসল উৎপাদন ব্যহত করছে।

বাধ্য হয়ে কৃষকরা বালু উত্তোলনে বাধা দিলে মামলা এমনকি মারধরেরও হুমকি দেন বালু উত্তোলনকারীরা।

স্থানীয় কৃষক রবিউল ইসলাম জুয়েল বলেন, ‘জমির পাশে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করায় নদীতীরের বিশাল একটি বাঁশঝার কয়েকটি মেহগনি গাছসহ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তিন বিঘা জমি নদীতে চলে যাওয়ায় আমার ছেলে ক্ষতিপূরণ চাইতে গেলে তাকে বিভিন্ন মামলা-হামলার হুমকি দেয়া হয়। আমরা অসহায় দরিদ্র কৃষক।’

মোজাহার আলী নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘নদীর তীরে আমার সাড়ে ৩ বিঘা জমি আছে। চরে বালু উত্তোলনের কারণে আমার জমি এখন হুমকিতে। এমনকি বালু তুলতে তুলতে কিছু অংশ আমার জমির মধ্যে চলে এসেছে। কৃষকদের পেটে আঘাত দিয়ে তারা কিভাবে সরকারি লিজ পায় বুঝলাম না।’

হামিদুল, ইসলাম, নান্টু মন্ডলসহ বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, নদীর তীরে প্রায় ৪০ বিঘা জমি স্থানীয় কৃষকদের মালিকানাধীন। এ ছাড়া নদীর পাড়ের কিছু খাস জমিতে চাষবাদ করেন প্রান্তিক কৃষকেরা। সেইসব জমিকে হুমকিতে ফেলে জোর করে এক্সেভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে প্রতি গাড়ি ৫০০ টাকা করে বিক্রি করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা। এতে ব্যক্তি মালিকানাধীনসহ খাস জমিগুলোও নদীতে বিলিন হয়ে যাচ্ছে।

এ অবস্থায় শিগগির এই বালু মহালের ইজারা বাতিল করে ফসল উৎপাদনে সহযোগিতা করতে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে দাবি জানান কৃষকরা।

ব্যাক্তি মালিকানাধীন জমিতেও বালি উত্তোলনের অভিযোগ কৃষকদের

বিষয়টি নিয়ে বালু উত্তোলনকারী ইজারাদার ও তিলকপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তিনি এই প্রতিবেদককেও হুমকি দেন। এ সময় ‘আপনার লেখার ক্ষমতা আছে লেখতে থাকেন। আর কতো বড় সাংবাদিক হয়েছেন সেটা দেখা যাবে’ বলেই ফোনের সংযোগ কেটে দেন শহিদুল।

এ বিষয়ে বদলগাছীর ইউএনও আলপনা ইয়াসমিন বলেন, ‘একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

নদীর চর লিজ দেয়া হয়েছে সরকারিভাবে। আর বালু উত্তোলনের কারণে পাড়ের জমিগুলো নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় কিভাবে লিজ দেয়া হলো- এমন প্রশ্নে ইউএনও বলেন, ‘আমি কিছুদিন আগে বদলগাছীতে যোগদান করেছি। সার্বিক বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখবো। প্রয়োজনে লিজ বাতিল করা হবে।’

নওগাঁর জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান পিএএ বলেন, ‘বদলগাছী উপজেলা থেকে কিছু কৃষক বালু উত্তোলন নিয়ে অভিযোগ করেছে। বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই জেলা কৃষিনির্ভর এলাকা। কোনোভাবেই ৩ ফসলের জমি নষ্ট করতে দেয়া যাবে না। ফসলী জমি থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে নির্দেশ প্রদান করা হবে। আর ফসলী জমি থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ না করলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর