‘আই দেশত ন আয়, বিদেশত মরি যাইলিও দুঃখ ন থাইকতো। আঁর বিয়াগ্যিন (সবকিছু) যাইতুগুই, (চলে যেত) শুধু আঁর পোয়া-মাইপা (ছেলে-মেয়ে) থাকিলি অইতো। ও আল্লাহ, আল্লারে; কোন পরীক্ষাত পালাইলা।’
দুই সন্তানকে হারিয়ে মঙ্গলবার সকালে এভাবেই আহজারি করছিলেন মো ইদ্রীস। আগের রাতে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে তার বাড়িতে লাগা আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছে দুই সন্তান।
ঘটনার পর থেকেই বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা রুবি আক্তার। দুই সন্তান হারিয়ে শোকে স্তব্ধ তিনি।
চার দিন আগে ওমান থেকে দেশে ফিরেছেন ইদ্রীস। ওমান থেকেই বাড়িতে নতুন পাকা ঘর তৈরির কাজ শুরু করিয়েছিলেন। সে কাজ প্রায় শেষ। পুরোনো ঘরের সঙ্গেই লাগোয়া নতুন সেই ঘর।
সোমবার রাতে তিনি, স্ত্রী রুবি ও তাদের বড় ছেলে ছিলেন সেই ঘরেই, পারিবারিক আড্ডায়। হঠাৎ বাইরে আগুন জ্বলতে দেখেন তারা। বের হয়ে দেখেন, পুরোনো ঘরটি পুড়ছে।
ওই ঘরটিতে ছিল তাদের ছোট দুই সন্তান ১৬ বছরের মিনহাজ উদ্দিন ও ৩ বছরের রুহী আক্তার। তারা ঘুমিয়ে থাকায় দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে ইদ্রীসরা পাশের ঘরে যান। পরে পুড়ে যাওয়া ঘরের ভেতর দরজার কাছে পাওয়া যায় মিনহাজ ও রুহীর মরদেহ।
ইদ্রীস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা নতুন ঘরে কথা বলতেছিলাম। বাইরে চিৎকার শুনে বের হয়ে দেখি পুরোনো ঘর জ্বলছে। ভেতরে যে আমার ছেলেমেয়ে রয়ে গেছে শুরুতে বুঝতে পারিনি। আমার পাসপোর্টসহ সব ডকুমেন্টস ঘরের ভেতরেই ছিল। সব পুড়ে গেছে।
‘সব পুড়ে গেলেও আমার ছেলেমেয়ে বেঁচে থাকলে আমার দুঃখ লাগত না, কিন্তু তারাও নাই। আমি কীভাবে বাঁচব?’
পুরোনো ঘরের সঙ্গে লাগোয়া আলাদা ঘরে থাকতেন ইদ্রীসের আরও তিন ভাই। তারা হলেন মো. আবুল কাশেম, মো. ইসহাক ও মো. ইলিয়াস। সোমবার রাতে আগুনে তাদের ঘরও পুড়েছে। তবে তারা সময়মতো বের হতে পেরেছেন বলে বেঁচে গেছেন।
ছোট ভাই ও আদরের বোনকে হারিয়ে হতবাক ইদ্রীসের বড় ছেলে হেফাজুল ইসলাম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমন হবে কখনও কল্পনা করিনি। দরজা বন্ধ থাকায় আমার ভাই-বোন বের হতে পারেনি। বের হওয়ার অনেক চেষ্টা করছে। অনেক দরজা ধাক্কা দিচ্ছে। কেউ দরজাটা খুলে দেয়নি। এত বেশি আগুন ছিল যে বিশ-ত্রিশ ফুট দূর থেকেও তাপ লাগতে ছিল।’
স্থানীয় মো. ওসমান বলেন, ‘গতকাল যখন আগুন লাগে ভাত খেয়ে ভাই-বোন পুরোনো ঘরে ঘুমাচ্ছিল। মা, বাবা আর বড় ভাই নতুন ঘরে ছিল। তারা যাওয়ার সময় বাইরে থেকে পুরোনো ঘরের দরজা বন্ধ করে গেছে।
‘তাই আগুন লাগার পর অন্যরা ঘর থেকে সবাই বের হতে হতে পারলেও ইদ্রীসের ছেলে-মেয়ে বের হতে পারেনি। মাত্র চার দিন আগে লোকটা বিদেশ থেকে আসল। আর এর মধ্যেই এ ঘটনা ঘটে গেল।’
বাঁশখালী ফায়ার সার্ভিসের লিডার নুরুল বশর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ৯টা ৩৫ মিনিটে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। গ্রামীণ এবং কাঁচা সড়ক হওয়ায় আমাদের পৌঁছাতে একটু সময় লেগেছে। আমরা যাওয়ার আগেই আগুন নিভে যায়।
‘তখন মরদেহ দুটি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে আগুনের সূত্রপাত। তবে তদন্ত ছাড়া নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।’