টেবিলের ওপর বই-খাতা-কলম। সেগুলোর পাশে একটি অসমাপ্ত ছবি। বিছানায় দেয়ালের সঙ্গে দাঁড় করিয়ে রাখা বেশ বড় সাইজের একটি কাঠের শিল্পকর্ম। কাঠের টুকরা দিয়ে এতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে হাতি, ময়ূর, পাখি, ফড়িং, গাছপালা। এই শিল্পকর্মেরও কিছু কাজ বাকি।
এগুলো সবই ট্রাকচাপায় নিহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদ হাবিব হিমেলের।
হিমেল থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ড. শামসুজ্জোহা হলের ২১২ নম্বর রুমে। তার সঙ্গে এই রুমে থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও তিন ছাত্র। তাদের একজন আবু রাফা মো. তাবরেজি হিমেলের জিনিসপত্র দেখান। হিমেল যেভাবে রেখে বের হয়েছিলেন, সবকিছু এখনও সেভাবেই আছে।
তাবরেজি বলেন, “হিমেল ভাইয়ের কিছু ক্লাসওয়ার্কের কাজ বাকি ছিল। সেগুলোতে কখনোই আর হিমেল ভাইয়ের হাত পড়বে না। ভাই সব সময় হাশিখুশি থাকতেন। আজ ভাই নেই। তার জিনিসপত্র স্মৃতি হয়ে পড়ে আছে। বিশ্বাস করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে যে হিমেল ভাই আর কখনও ‘রুমমেট’ বলে ডাক দেবেন না।”
ঘরে আরও কিছু ছবি ও শিল্পকর্ম দেখা যায়। যেগুলোর বেশ কয়েকটি অসমাপ্ত। এই কাজগুলো আর কখনোই শেষ হবে না।
ট্রাকচাপায় নিহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহমুদ হাবিব হিমেল। ছবি: সংগৃহীত
হিমেলের পাশের রুমে থাকেন আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র জাহিদ হাসান।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, “প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠলেই হিমেলের সঙ্গে দেখা হতো। এসে জড়িয়ে ধরত। আমি মজা করে বলতাম, ‘ছেড়ে দে, তোর হিমেল বাতাসে আমার ঠান্ডা লাগছে।’ ওর হাসিমাখা মুখটা আর দেখতে পারব না ভেবে খারাপ লাগছে।”
গত ১ জানুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনের রাস্তায় পাথরবাহী ট্রাকের চাপায় নিহত হন হিমেল। আহত হন তার সঙ্গে একই মোটরসাইকেলে থাকা আরও দুই শিক্ষার্থী।
পরদিন পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণকাজের জন্য মালামাল বহনকারী ওই ট্রাকের চালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তার করে।
হিমেলের রুমমেট তাবরেজি বলেন, ‘এই রুমের দুজন পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আমি অনলাইনে নিজের মতো কিছু কাজ করি। রুমে সব সময় একটা নীরবতা থাকত। হিমেল ভাই এলেই রুমে প্রাণ ফিরে আসত। হাসি, আড্ডা, গানে তিনি সবাইকে মাতিয়ে রাখতেন। আমরা তার শূন্যতা সব সময় টের পাই।’