নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির অনুসন্ধান কমিটি নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্যকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার রোববারের সই করা বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন কাদের।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার না রেখে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের জন্য ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন ‘অর্থহীন চর্চা’ হবে বলে মন্তব্য করেছিলেন বিএনপি মহাসচিব।
নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সার্চ কমিটি গঠন করে শনিবার প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল ওই মন্তব্য করেন।
নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি আদালতে মীমাংসিত ইস্যু, এ নিয়ে আর আলোচনার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র না করে দেশের সংবিধান ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান কাদের।
আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ এ নেতা বলেন, ‘দেশের জনগণ, সংবিধান ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর বিএনপির আস্থা নেই বলেই তারা বারবার অসাংবিধানিক পন্থার কথা বলে আসছে। তারা বিদেশি প্রভুদের তুষ্ট করার মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের দুঃস্বপ্নে বিভোর। তাই দেশের জনগণ ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই।’
নির্বাচনে অংশ না নেয়া, নির্বাচনি ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং জনগণের মতামতকে তোয়াক্কা না করার যে ‘ভ্রষ্ট নীতি’ বিএনপি গ্রহণ করেছে, তা গণতান্ত্রিক রাজনীতির পরিপন্থি বলেও মন্তব্য করেন কাদের।
তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত না থেকে জনগণের প্রতি আস্থাশীল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে দেশের সংবিধান ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ারও আহ্বান জানাচ্ছি।’
নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির অনুসন্ধান বা সার্চ কমিটি প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ‘ইতোমধ্যে আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনে ৬ সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি এই অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশকৃত তালিকা থেকে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন।’
তিনি বলেন, “অনুসন্ধান কমিটির সদস্যদের আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে নির্মোহভাবে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আইনগত বিষয়টি তোয়াক্কা না করে সার্চ কমিটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ‘অর্থহীন’ বলে মন্তব্য করেছেন।
‘যারা এ দেশে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের অপরাজনীতির জন্ম দিয়েছিল, তাদের প্রতিনিধি হিসেবেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চিরাচরিতভাবে এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেছে। যারা বারবার সংবিধান ও প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের মাধ্যমে নিজেদের স্বেচ্ছাচারিতাকে পরিপুষ্ট করেছে, এ দেশের মানুষের ওপর স্বৈরাচারি শাসনের স্টিম রোলার চালিয়েছে। তারাই কেবল এ ধরনের আইনি প্রক্রিয়াকে মূল্যহীন বলার মতো ধৃষ্টতা দেখাতে পারে।’
দেশের জনগণ কোনো গোষ্ঠীর স্বেচ্ছাচারী ও দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যকে বরদাশত করে না বলেও জানান আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এই নেতা।
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে শনিবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে প্রধান করে অনুসন্ধান বা সার্চ কমিটি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ।
এ কমিটি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’-এর ধারা অনুযায়ী সিইসি ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগে আইনে বর্ণিত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করবে।
শুরু থেকেই এ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন গঠনের বিরোধিতা করে আসছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।
রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ সই করার পর গত ৩০ জানুয়ারি সিইসি ও অন্য কমিশনার নিয়োগ বিলের গেজেট প্রকাশ করে সরকার। এ গেজেট উন্মুক্ত করার মধ্য দিয়ে বিলটি আনুষ্ঠানিকভাবে আইনে পরিণত হয়।
এর আগে ইসি নিয়োগ বিল সংসদে তোলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিলটি আনা হয়।
সংসদ সদস্যদের ভোটে বিলটি পাস হলে তা যায় রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য। ২৯ জানুয়ারি তাতে সই করেন রাষ্ট্রপতি।