ব্রহ্মপুত্র নদের তীরঘেঁষা নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার সাবদী গ্রাম। যত দূর চোখ যায়, দেখা মেলে ফুলের সমারোহ। পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস ও ২১শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা ও মহান শহীদ দিবসকে সামনে রেখে সেখানে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুলচাষিরা।
তবে বৃষ্টির কারণে চাষ কম হওয়ায় এ বছর লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুধু সাবদীই নয়, এ উপজেলার দীঘলদি, মাধবপাশা, আইছতলা ও সোনারগাঁ উপজেলার ফরদী, দরিগাঁও, এলাহিনগর, শম্ভুপুরা ও একরামপুরাসহ ১০টি গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করা হয়।
গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা গ্লাডিওলাস, জারবেরা, বাগানবিলাস, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, কসমস, দোলনচাঁপা, নয়নতারা, মোরগঝুঁটি, কলাবতী, বেলি, জিপসি, চেরি, কাঠমালতি, আলমন্ডা, জবা, রঙ্গন, টগর, রক্তজবাসহ বাহারি রঙের ফুল চাষ করে কয়েক হাজার নারী-পুরুষ স্বাবলম্বী হয়েছেন।
বৃষ্টির কারণে গাছ মরে যাওয়ায় এ বছর ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা চাষিদের। ছবি: নিউজবাংলা
পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস ও ২১শে ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে তারা প্রতিবছর ফুল চাষ করেন। তবে নানা কারণে এসব গ্রামে ফুলচাষির সংখ্যা অনেক কমেছে। এ বছর কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে ফুল চাষ কম হওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন চাষিরা।
সাবদী গ্রামের ফুলচাষি অঞ্জনা রানী বলেন, ‘গত বছর অনেক ফুল বিক্রি করেছি। আমাদের ফুল রাজধানীর শাহবাগের পাশাপাশি সারা দেশে সরবরাহ করা হয়। তবে এ বছর বৃষ্টির কারণে অনেক ফুলের গাছ মরে গেছে, তাই আবার নতুন করে চাষ করেছি। তবে এতে ফুল আসতে সময় লাগবে। তাই লাখ টাকা তো দূরের কথা, চালান উঠাতেই কষ্ট হবে।’
একই গ্রামের চাষি হারুন মিয়া বলেন, ‘বছরের এই সময়টাতে অনেক ফুল বিক্রি করি। দিবসের আগের দিন ফুল বেশি বিক্রি হয়। তবে এবার কী হবে জানি না। কারণ বৃষ্টির কারণে গাছ মরে যাওয়ায় ফুল কম। তারপরও আশা করছি, পরিস্থিতি ভালো থাকলে বেশি বিক্রি হবে।’
দিগলদী গ্রামের ফুলচাষি শিল্প আক্তার বলেন, ‘প্রতিবছর নানা কারণে চাষিরা ফুল চাষ বন্ধ করে সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন। আগে গ্রাম ও আশপাশে মিলিয়ে কয়েক হাজার চাষি ফুল চাষ করতেন, কিন্তু কমতে কমতে এখন তা ১০০-এর ঘরে।
‘উপজেলা প্রশাসন সহযোগিতা না করলে সামনে ফুল চাষ আরও কমে যাবে।’
এদিকে শীতলক্ষ্যা নদী পার করে এসব গ্রামের বাহারি ফুল দেখতে প্রতিদিনই রাজধানীসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো দর্শনার্থী ভিড় করছেন ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী বাবুল এসেছিলেন সাবদীতে ফুলের খোঁজে। তিনি বলেন, ‘ফুল চাষে গ্রামের সৌন্দর্য যেমন বাড়ে, স্বাবলম্বী হন চাষিরাও। তাই তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে তাদের পাশে থাকতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।’
রাজধানীসহ সারা দেশ থেকে দর্শনার্থীরা বন্দর উপজেলায় আসেন ফুল দেখতে। ছবি: নিউজবাংলা
নারায়ণগঞ্জের ভূইয়াপাড়া এলাকার ফুলপ্রেমী রাগিব ভূইয়া বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই এ বছর ফুলের চাষ গত বছরের তুলনায় কম দেখা যাচ্ছে।’
বন্দরের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সিমা মণ্ডল জানান, আগের বছর করোনা মহামারি ও জমিতে পানি থাকায় অনেক ফুলচাষি কমেছে। এ বছর বৃষ্টিসহ নানা সংকটে লোকসানের পথে তারা। এ কারণে প্রতিবছর ফুলচাষিদের সংখ্যা কমছে।
তিনি বলেন, ‘অন্য ফসলে চলে যাওয়া ফুলচাষিদের ফিরিয়ে আনতে আমরা চেষ্টা করছি। তারা যাতে আগামীতে ক্ষতির মুখে না পড়েন সে জন্য নানা পরামর্শ দিচ্ছি।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নারায়ণঞ্জের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. নূর জাহান জানান, গত বছর প্রায় ৭০ হেক্টর আবাদি জমিতে ২৪ ধরনের ফুল চাষ হয়েছিল। এবার ৬২ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে ২০ ধরনের ফুল। বেশি জমির চাষিরা ঝুঁকি নিলেও ক্ষুদ্র চাষিরা অন্য ফসল চাষ করছেন।
তিনি বলেন, ‘ফুলচাষিদের আমরা নানাভাবে সহযোগিতা করে থাকি। তবে গত বছর তাদের আর্থিক সহযোগিতা করা সম্ভব হয়নি। তবে আগামী দিনে এ সমস্যা সমাধানে নানা কার্যক্রম হাতে নেয়া হচ্ছে।’