টানা দুই সপ্তাহ ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের পর বৃষ্টির দেখা পেল উত্তরের জেলা নওগাঁ। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
মাঘের শেষের এ বৃষ্টিতে আলুর জমির তলায় পানি জমেছে। অথচ আর কদিন পরেই আলু তোলার উপযুক্ত সময়। এ অবস্থায় বৃষ্টি আর দু’একদিন ঝরলে ক্ষেতে আলুর পচন ধরে ফলন বির্পযয়ের আশঙ্কা করছেন এখানকার চাষিরা।
জেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শ, আলুর পচন রোধে বৃষ্টি কমার পর অবস্থা অনুযায়ী ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ানাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা চাষিদের সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিবেন।
রাণীনগর উপজেলার পারইল গ্রামের আলু চাষি আব্দুস সালাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তিন বিঘা জমিতে আলু করেছি। মাঘের বৃষ্টিতে অধিকাংশ আলুর জমিতে পানি জমে গেছে। জমে থাকা পানি সেচ দেয়া হচ্ছে।
‘শুনলাম রোববার পর্যন্ত নাকি থেমে থেমে বৃষ্টি হবে। চিন্তা হচ্ছে, এমনটা হলে ফলন কম হবে। এতে লোকসানে পরতে হবে।’
সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে আলুর আবাদ করেছেন সদর উপজেলার বর্ষাইলের কেশবপুর গ্রামের আলু চাষি লতিফুর রহমান। বৃষ্টিতে আলুর পচন ধরার শঙ্কায় চিন্তিত তিনি। বলেন, ‘চলতি মাসের শেষের দিকে আলু তুলব। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ক্ষেতে পানি জমে গেছে। চেষ্টা করছি পানি সরাতে, কিন্তু বৃষ্টি তো একবারে থামছেই না।’
আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আর দুই থেকে তিন দিন বৃষ্টি হলে আলুর ক্ষেতে পচন ধরতে পারে। আর তা হলে ফলন কমে যেতে পারে। খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে।’
বদলগাছীর ভান্ডারপুর গ্রামের আলু চাষি আজাদ দেওয়ান বলেন, ‘বিঘাপ্রতি আলু চাষে বীজ, শ্রমিক, সেচ, সার কীটনাশকসহ সব মিলে খরচ হয় ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকার মত। কিন্তু এ বৃষ্টিতে ক্ষেতে পানি জমে গেছে।
‘টানা বৃষ্টি হলে ক্ষেতে পচন ধরে যাবে। ফলন ভালো দূরের কথা, উল্টো লোকসান গুনতে হবে। এমনিতেই এবার আগাম জাতের আলুর বাজারে দাম কম।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ শামছুল ওয়াদুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ অবস্থায় আলু তুলেও কোনো লাভ হবে না। তুলে রেখে দিলেও পচন ধরতে পারে। এ জন্য বৃষ্টি কমার পর অবস্থা অনুযায়ী ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ানাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা চাষিদের সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিবেন।’
বদলগাছীর স্থানীয় কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হয়েছে। রোববার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।’