‘স্কুলে পড়ার সময় ছুটির দিন যে কাজ আমাকে বেশি আনন্দ দিতো তা হলো টিউলিপ ফুলের বাল্ব যত্ন করে বাস্কেট করা’, গাজীপুরে টিউলিপের বাগান ঘুরে এভাবেই নিজের ছোটবেলার স্মৃতিতে ফিরে যান নেদারল্যান্ডসের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত পাওলা রোস সিনড্রেলা।
সিনড্রেলা শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর শহরের কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামে যান দেলোয়ার হোসেনের টিউলিপ বাগান দেখতে।
বাগান ঘুরে তিনি উদ্যোক্তা দেলোয়ার ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক সেলিনা হোসেন শেলীর পরিশ্রম ও সাফল্যের প্রশংসা করে বলেন, ‘এটা আপনাদের দারুণ সাফল্য।’
ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আপনি যখন গোলাপের কথা ভাবেন তখন ভালোবাসার কথা ভাবেন। যখন টিউলিপের কথা ভাবেন তখন আপনি বন্ধুত্বের কথা ভাবেন। টিউলিপ নেদারল্যান্ডস ও বাংলাদেশের বন্ধুত্বকে আরও সুদৃঢ় করতে পারে।
‘এ দেশে বিশেষ উৎসবের দিনগুলোতে টিউলিপ হতে পারে ভিন্ন আনন্দ। বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের বন্ধুত্বের ৫০ বছরে এটি দুই দেশের জন্যই আনন্দের।’
ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে টিউলিপ ফুল চাষে নেদারল্যান্ডসের পক্ষ থেকে নানা সহযোগিতার আশ্বাস দেন ডাচ রাষ্ট্রদূত। তিনি জানান, নেদারল্যান্ডস থেকে খুব সহজেই যেন বাংলাদেশ বীজ আমদানি করতে পারে, সে ব্যাপারে সহায়তা করা হবে।
২০২০ সালে প্রথমবার নেদারল্যান্ডস থেকে ২০ হাজার বাল্ব (বীজ) আমদানি করে সীমিত পরিসরে দেলোয়ার তার বাগানে টিউলিপের চাষ করেন। এরপর ২০২১ সালে ৩০ হাজার এবং এ বছর ৭০ হাজার বাল্ব আমদানি করেছেন তিনি। এবার দেলোয়ারের বাগানে ফুটেছে প্রায় ১৩ রঙের বাহারি টিউলিপ।
গত বছর দেলোয়ারের বাগানে টিউলিপ ফুটলে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজর কাড়ে। বাগান পরিদর্শনে যান কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। দেলোয়ারের ফোটানো টিউলিপ খবর হয়েছিল খোদ ডাচ পত্রিকায়।
প্রকল্প ব্যবস্থাপক শেলী বলেন, ‘সকাল ১০টার দিকে ডাচ রাষ্ট্রদূত আমাদের বাগান পরিদর্শনে আসেন। বাগানের চারপাশ ঘুরে দেখে খুবই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। পরে দুপুরে আমাদের পারিবারিক পিঠা আয়োজনে তিনি যোগ দেন। তার সঙ্গে নেদারল্যান্ডস হাইকমিশনের আরও কর্মকর্তারা ছিলেন।’
শেলী আরও বলেন, ‘আমাদের একটা স্বপ্ন ছিল নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত আমাদের বাগান দেখতে আসবেন। আজ সে স্বপ্ন সফল হলো।’
দেলোয়ার জানান, এবার পঞ্চগড়ের একটি সংস্থা তাদের কাছ থেকে ৪০ হাজার বাল্ব কিনে খামারিদের দিয়ে টিউলিপ চাষ করাচ্ছে। যশোরের বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন ৫ হাজার বাল্ব নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করেছে।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এস এম মূয়ীদুল হাসান বলেন, ‘টিউলিপকে নিয়ে দেলোয়ারের মতো আমাদেরও অনেক স্বপ্ন রয়েছে। আশা করি, এ দেশেও টিউলিপ ফুলের এক স্বর্গরাজ্য হবে।’