বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নিভে গেল দুঃখের সংসারের শেষ বাতি

  •    
  • ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ২৩:৩০

ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন হিমেল। সেই সঙ্গে ছিলেন বড্ড মানবিক। তার দুই যুগের জীবনের পুরোটাই কেটেছে আর্থিক অনটনে। পৌরসভার কর্মচারী আহসান হাবিব ও গৃহিণী মুনিরা আক্তার দম্পতির একমাত্র সন্তান ছিলেন হিমেল। বাবা এক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন ২০১৬ সালে। এরপর থেকে প্রায় এক বছর শয্যাগতই ছিলেন তিনি। ২০১৭ সালে তিনি মারা যান।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হিমেলের ২৪ বছরের জীবনের পুরোটাই কেটেছে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। বেঁচে থাকার সংগ্রামেই পেরিয়ে গেছে সময়।

লেখাপড়া শেষ করে অসুস্থ মাকে নিয়ে সুখের লক্ষ্যটাও নাগালের মধ্যেই এসে গিয়েছিল। কিন্তু ঘাতক ট্রাক তাকে এখানেই থামিয়ে দিল চিরতরে। আশার শেষ অবলম্বনটুকু হারিয়ে যাওয়ায় পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে গেলেন অসুস্থ মা।

চরম আর্থিক অনটনের মাঝে নিজেই চলা কষ্টের। টিউশনি করে, নিজের আঁকা শিল্পকর্ম বিক্রি করে জীবনটা টেনে নিচ্ছিলেন মেধাবী হিমেল। তার মাঝেও অপরকে সহায়তায় সব সময় থেকেছেন সামনের সারিতে। সে সুবাদে সমাজসেবী হিসেবে সবার কাছে পরিচিতি পেতে শুরু করেছিলেন। বাবা-হারা হিমেলের সেই জীবন-সংগ্রাম মাঝপথে থেমে যাওয়ার শোক ছুঁয়ে গেছে সবাইকে।

ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন হিমেল। সে সঙ্গে ছিলেন বড্ড মানবিক। তার দুই যুগের জীবনের পুরোটাই কেটেছে আর্থিক অনটনে। পৌরসভার কর্মচারী আহসান হাবিব ও গৃহিণী মুনিরা আক্তার দম্পতির একমাত্র সন্তান ছিলেন হিমেল। বাবা এক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন ২০১৬ সালে। এরপর থেকে প্রায় এক বছর শয্যাগতই ছিলেন তিনি। ২০১৭ সালে তিনি মারা যান।

বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় পড়ার পর থেকে হিমেলের মা-ও অসুস্থ। ওই সময় থেকেই তিনি থাকেন নাটোরে বাবার বাড়িতে। হিমেলকে নিয়ে ছিল তার অনেক স্বপ্ন- একমাত্র ছেলে মেধাবী। ও নিশ্চয় পড়ালেখা শেষ করে ভালো চাকরি পাবে। কিন্তু মায়ের সেই আশা আর পূরণ হলো না। অসুস্থ মায়ের বুক শূন্য করে দিয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হিমেল।

পরিবারসহ পরিচিতজনেরা বলছেন, জীবনটা স্ট্রাগলেই কেটে গেল হিমেলের। সুখের সময়টা দোরগোড়ায় উঁকি দেয়ার সময়টাতেই তাকে চিরবিদায় নিতে হলো।

হিমেলের শিক্ষক রাবির গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এ এইচ এম তাহমিদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হিমেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর ওর বাবা মারা যান। এরপর থেকে মা-ও প্যারালাইজড। নানার বাসায় থেকেই ও মানুষ হয়েছে। রাজশাহীতে ওকে শিমুল মেমোরিয়াল স্কুলে শিক্ষক হিসেবে ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম। ওখানে প্রায় তিন বছর চাকরি করে হিমেল। করোনার মধ্যে এই চাকরি ছেড়ে দিতে হয় ওকে। এরপর সে নিজ এলাকা নাটোরে একটি কম্পানিতে চাকরি নেয়। এ ছাড়াও সে টিউশনি করে, ডিজাইনের কাজ করে নিজের লেখাপড়ার খরচ জোগাত। মাকেও কিছু খরচ পাঠাত।’

একই বিভাগের শিক্ষার্থী হিমেলের বন্ধু তানভীর হোসেন রিদম বলেন, ‘হিমেল সব সময় হাসি-খুশি থাকার চেষ্টা করত। খুবই সংস্কৃতিমনা ছিল। কোথাও সামান্যতম ভুল হলেও সঙ্গে সঙ্গে মাফ চেয়ে নিত। বলতো- বন্ধু, ভুল হয়ে গেছে; কিছু মনে করিস না। বিভাগের কোনো জুনিয়র যেকোনো প্রয়োজনে হিমেলকে ফোন দিলে সবার আগে পেত।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত রায় বলেন, ‘একাডেমিক লেখাপড়ার পর সাংস্কৃতিক চর্চা ছিল হিমেলের বড় আগ্রহের বিষয়। সংগঠনের কোনো কার্যক্রমে সবার আগে সে উপস্থিত থাকত।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের ২১২ নম্বর কক্ষে থাকতেন মাহমুদ হাবিব ওরফে হিমেল।

হিমেলের বড় খালু আব্দুস সবুর তালুকদার বলেন, ‘জীবনে প্রতিষ্ঠা পেতে কঠোর পরিশ্রম করত হিমেল। তার নানা ও মামারা সাহায্য-সহযোগিতা করার কথা বললেও সে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো তখন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য চেষ্টা করত। সে কোচিংয়ে পড়াত। নিজের আঁকা ছবিগুলো সে বিক্রি করে যে আয় করত তা দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করত।

‘এভাবে সে মাকেও সহযোগিতা করত। তার অসুখ-বিসুখে দেখাশোনা করত। সে নাটোরে একটি কোচিংয়ে সপ্তাহে শুক্রবার করে এসে ক্লাস করাত। সব মিলিয়ে সে সংগ্রামী জীবনই পার করল। জীবনে সুখ আসার সময়টাতেই ওকে কেড়ে নিল ট্রাক।’

এ বিভাগের আরো খবর