টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে একটি অবৈধ বালুর ঘাটের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।
এতে উভয় পক্ষের আহত ১০ জনকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল ও ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়েছে।
উপজেলার পুনর্বাসন এলাকার বাগানবাড়ী বালুর ঘাটে নিকরাইল ইউনিয়নের নৌকার বিদ্রোহী নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মাসুদুল হক মাসুদ এবং একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মতিন সরকারের লোকজনের মধ্যে বুধবার দুপুরে এ সংঘর্ষ বাধে।
নিউজবাংলাকে সংঘর্ষের বিষয়টি নিশ্চিত করে ভূঞাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব জানান, পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আহতদের মধ্যে ছয়জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের পুনর্বাসন এলাকার শহিদুল ইসলাম, পলশিয়া এলাকার শাহ আলম, শফিকুল, হোসেন আলী, সবুজ ও ইয়ামিন। তাৎক্ষণিক বাকি আহতদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনার জন্য দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করেছে।
স্থানীয়দের বরাতে ওসি আব্দুল ওহাব জানান, নিকরাইলে প্রায় ২০টি অবৈধ বালুর ঘাট রয়েছে। এসব ঘাট থেকে তোলা বালু ট্রাকযোগে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। শুষ্ক মৌসুমে যমুনা নদী শুকিয়ে চর জেগে উঠলে শুরু হয় বালু তোলা। বালুর ঘাটের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মতিন গ্রুপ ও মাসুদ গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল।
বুধবার বেলা ২টার দিকে বাগানবাড়ী বালুর ঘাটের রাস্তা নির্মাণ ও দখলকে কেন্দ্র করে এই দুই পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। প্রায় ৩টা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। এতে দুই পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন।
পরে পুলিশ সাত রাউন্ড টিয়ারশেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মতিন সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চেয়ারম্যান মাসুদুল ও নুহু মেম্বারের লোকজন বালুর ঘাট দখল করে মাটি তোলার যন্ত্র (ভেকু) ভাঙচুর করে ও জিনিসপত্র লুটপাট করে। এ সময় তারা ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলি ছোড়ে।’
তার পক্ষের আহত শহিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চেয়ারম্যান মাসুদুলের লোকজন যমুনার নদীর বাগানবাড়ী এলাকায় অন্যের জমির ওপর দিয়ে বালুর ঘাটের রাস্তা তৈরি করছিল। এ সময় আমরা তাদের বাধা দিতে গেলে তারা আমাদের ওপর হামলা চালায়। তাদের ছোড়া পাথরের আঘাতে আমার পায়ের হাড় ভেঙে গেলে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।’
অভিযোগের বিষয়ে চেয়ারম্যান মাসুদুল হক মাসুদ বলেন, ‘ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির লোকজন অন্যদের জমি দখল করে ঘাট তৈরি করছিল। এ সময় আমার লোকজন বাধা দিতে গেলে তারা আমার লোকজনের ওপর আক্রমণ করে।’
এ বিষয়ে নিউজবাংলাকে ওসি মো. আব্দুল ওহাব বলেন, ‘বালুর ঘাট দখল নেয়াকে কেন্দ্র করে সাবেক চেয়ারম্যান ও নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সাত রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়েছে।
‘স্থানীয়দের কাছে গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের কথা শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো আলামত পাইনি।’
ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পরবর্তী সময়ে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে, সে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’