করোনাভাইরাস মহামারিতে গত দুই বছর ধরে মন্দা যাচ্ছে প্রকাশনা ব্যবসায়। করোনার মধ্যে দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা ও বইমেলায় কাঙ্ক্ষিত বিক্রি না হওয়ায় দুঃসময় পার করতে হয়েছে দেশের বৃহত্তম পুস্তক বিক্রয়কেন্দ্র বাংলাবাজারের ব্যবসায়ীদের।
দেড় বছর পর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীরে ক্লাস শুরু হওয়ার পাশাপাশি বইমেলা পূর্ণোদ্যমে চলার খবরে আশায় বুক বেঁধেছিলেন প্রকাশকরা, তবে তাতে গুড়ে বালি হয়ে দাঁড়ায় করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন।
কিছুদিন ধরে ভাইরাসে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ভাইরাসের বিস্তার রোধে বইমেলাও পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এমন বাস্তবতায় এ বছরও লাভের আশা করতে পারছেন না নতুন বই ছাপানো ব্যবসায়ীরা।
বাংলাবাজারকেন্দ্রিক একাধিক ব্যবসায়ী নিউজবাংলাকে জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকা এবং বইমেলা যথাসময়ে শুরু হওয়ার খবরে তারা নতুন বইয়ের অনেক সংখ্যা ছাপিয়েছেন। ফেব্রুয়ারির আগে ছাপা শেষ করতে হবে ভেবে বেশি কর্মচারী নিয়োগ করে দ্রুত কাজ শেষ করেছেন, কিন্তু এখন পরিস্থিতি এমন যে, বিনিয়োগের বিপরীতে পুঁজি তোলাই মুশকিল হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত বছরের বইমেলায় দোকান সাজাতে ৮ লাখ টাকা খরচ হয়েছিল, কিন্তু বিক্রি হয়েছে ৩ লাখ টাকা। এখনও যেহেতু কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি বইমেলা সম্পর্কে, তাই এ বছর মেলা স্থগিত রাখলেই সবার জন্য উপকার।
‘মার্চে ঝড়-বৃষ্টি থাকে। তাই তখন মেলায় লাভের তুলনায় লোকসানই বেশি হয়। মেলায় মূলত শিক্ষিত মানুষের আগমনই বেশি হয়। করোনা সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিধিনিষেধও বাড়ছে। মানুষজন নিজেও তখন মেলায় আসে না; তাদের পরিবারকেও আসতে দেয় না।’
স্বাভাবিক সময়ে বইমেলার আগে ঈদের আমেজ পাওয়া যেত বাংলাবাজারে। লেখক, পাঠক, ব্যবসায়ীদের সমাগম থাকত, কিন্তু এবার তেমন সাড়াশব্দ নেই সেখানে।
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহসভাপতি শ্যামল পাল বলেন, ‘প্রকাশনা সংস্থার মালিকরা তাদের পুঁজি হারিয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই এ বছর নতুন বই ছাপিয়েছেন ধার-দেনা করে। কেননা ব্যবসায় টিকে থাকতে হলে আমাদের অবশ্যই নতুন বই ছাপতে হবে, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, নতুন চ্যালেঞ্জ নেয়ার মতো অবস্থায় আমরা নেই।
‘বই ছাপার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এবং শ্রমের খরচও আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। অধিক বিনিয়োগ করে সবাই এখন হতাশায় আছেন। মহামারির আগে প্রতি টন কাগজের দাম ছিল ৩৫ হাজার টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৫২ হাজার টাকা। প্লেটপ্রতি খরচ ১৪০ টাকা থেকে ২৬০ টাকা এবং প্রতি কেজি বাইন্ডিংয়ের আঠার দাম ২৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫০ টাকা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বই কেনার জন্য যে বরাদ্দ পায়, সেগুলো সঠিকভাবে ব্যয়ের আহ্বান থাকবে।’
সূর্যোদয় প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর ২০টি নতুন বই প্রকাশ হয়। প্রতিটির ১ হাজার করে কপি ছাপানো হয়েছিল। কাজের দ্রুততার জন্য নতুন লোক নিয়োগ করেছিলাম। গত দুটি বইমেলা করতে না পেরে প্রকাশকরা বিপুল লোকসান গুনেছেন।
‘আসন্ন অমর একুশে বইমেলার আশায় বসে ছিলাম। এখন মেলা ৩০ দিনের স্থলে ১৫ দিন হওয়ায় আমরা শঙ্কায় আছি। কোনো কারণে মেলা না হলে আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘১৫ দিন পিছিয়ে দেয়াতে কোমর ভেঙে যাওয়ার অবস্থা আমাদের। বইমেলায় দোকান বরাদ্দের জন্য অগ্রিম টাকা পরিশোধ করা হয়েছিল।
‘সমিতি থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে দোকান ভাড়া কনসিডারের। ১ মাসের জন্য সিঙ্গেল দোকান ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা এবং ডাবল দোকানের জন্য ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা দিতে হয়।’