কোনো ধরনের প্রাণহানি ছাড়াই ষষ্ঠ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে।
তবে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট গ্রহণে ধীরগতির অভিযোগ উঠেছে। আঙুলের ছাপ না মেলায় কোথাও কোথাও ভোট দিতে না পারার কথা জানিয়েছেন ভোটার ও প্রার্থীরা। এ ছাড়া অনিয়ম, কারচুপির অভিযোগে প্রার্থীর ভোট বর্জনের তথ্যও মিলেছে।
ষষ্ঠ ধাপে সোমবার ২১৯ ইউপিতে ভোট হয়েছে। মাঘের কনকনে শীতের মধ্য সকাল ৮টায় শুরু হওয়া ভোট টানা চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। কেন্দ্রে কেন্দ্রে নারী ও বয়স্ক ভোটারের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
এই পর্বে সব ইউপিতেই ভোটগ্রহণ হয় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)।
গত জুন থেকে শুরু হওয়া ইউপি নির্বাচনের শেষ পাঁচটি ধাপে অন্তত ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগের ধাপে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৩ জন। এ ছাড়া চতুর্থ ধাপে তিনজন, তৃতীয় ধাপে অন্তত ১০ জন, দ্বিতীয় ধাপের আগে পরে ১৬ জন ও প্রথম ধাপে সাতজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।
এবারের ধাপে সিলেটে ইভিএমে ভোটে ধীরগতির কারণে ভোগান্তিতে পড়েন ভোটাররা। তারা জানিয়েছেন, দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষার পর ভোট দিতে পেরেছেন।
সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার ৬ নম্বর তাজপুর ইউনিয়ন ৬নম্বর ওয়ার্ডের হরিনগর বিদ্যালয় কেন্দ্রের এক প্রার্থীর এজেন্ট কাইয়ুম আহমদ বলেন, ‘ইভিএমের মাধ্যমে ভোট দিতে গিয়ে নারীদের বেশি সমস্যা হচ্ছে। তারা মেশিনে টিপ দিতে একাধিকবার টিপ দিচ্ছেন। তা ছাড়া অনেকের আঙুলের ছাপ চিহ্নিত করতে পারছে না ইভিএম।’
ভোট দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন কুমিল্লার ভোটাররাও। মুরাদনগর রামচন্দ্র উত্তর ইউনিয়নের আক্কাব্বরেরনেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ধীর গতির কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভোটারা।
ভোটার জোহরা বেগম বলেন, ‘লাইনে সাড়ে তিন ঘণ্টা ধইরা খারাইছি। অহনও ভোট দিতাম পারছি না।’
প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইভিএম পদ্ধতি নতুন হওয়ায় এ সমস্যা। ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ভোট কাস্ট করা যাবে।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ১১ নম্বর জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের নির্বাচনে ভোট বর্জন করেছেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী রাশেদুল ইসলাম চৌধুরী রাসেল।
কেন্দ্র থেকে নির্বাচনি এজেন্টদের বের করে দেয়া, কারচুপিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন তিনি।
রাশেদুল ইসলাম চৌধুরী রাসেল বলেন, ‘কোনো কেন্দ্রে আমার এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পর থেকে আমার ওপর তিনবার হামলা করা হয়েছে। ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। বহিরাগত লোকজন এসে প্রভাব বিস্তার করেছে। নির্বাচনের পরিবেশ না থাকায় আমি ভোট বর্জন করছি।’
তবে নৌকার প্রার্থী মো. ইদ্রিস বলেছেন, পরাজয় নিশ্চিত জেনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন প্রার্থী।
কুমিল্লার মুরাদনগরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদে দাঁড়ানো চার প্রার্থীর মধ্যে তিনজনই আঙুলের ছাপ না মেলায় নিজেদের ভোট দিতে পারেননি বলে জানিয়েছেন।
মুরাদনগর উপজেলার টনকী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সোনারামপুর কেন্দ্রে ভোট দিতে না পারা তিন প্রার্থী হলেন আপেল প্রতীকের জসিম উদ্দিন জজ মিয়া, তালা প্রতীকের আমির হোসেন ও মোরগ প্রতীকের মো. সোহেল।
জজ মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি চার থেকে পাঁচবার চেষ্টা করেছি। আঙুলের ছাপ মেলে না তাই ভোট দিতে পারিনি। আমাদের তিনজনের একই ঘটনা ঘটেছে।’
টাঙ্গাইলে সেনেরচর বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটারা ভোট দিতে পারেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কেন্দ্রের বিভিন্ন বুথে আনসার সদস্যদের ভোট দেয়ার খবর এসেছে।
নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নে ভোট চলাকালে ইসফাকুল হক মান্না আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্র থেকে সিল মারা ব্যালট বই উদ্ধার করা হয়। পরে সেগুলো বাতিল করা হয়।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয় সূত্র জানায়, এই ধাপে নির্বাচনি এলাকা দেশের ২২ জেলার ৪২টি উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত। এর মধ্যে ঢাকার আশপাশের দোহার ও নবাবগঞ্জের ২০টি ইউপি রয়েছে।
এই ধাপে চেয়ারম্যান পদে এক হাজার ১৫৯ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৭ হাজার ৪৯৮ জন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ২ হাজার ৪৫৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ইউপি নির্বাচনের অন্যান্য ধাপের মতো ষষ্ঠ ধাপেও বেশকিছু প্রার্থী বিনা ভোটে জয়ী হয়েছেন। তিন পদে ভোটের আগেই জয় পান ১৪৩ জন প্রার্থী। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ১২ জন, সাধারণ সদস্য পদে ১০০ জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৩১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া নির্বাচিত হয়েছেন।
এর আগে পঞ্চম ধাপে ১৯৩, চতুর্থ ধাপে ২৯৫, তৃতীয় ধাপে ৫৬৯, দ্বিতীয় ধাপে ৩৬০ ও প্রথম ধাপে ১৩৮ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।
দেশে মোট চার হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। গত জুন থেকে পর্যায়ক্রমে ইউপি নির্বাচন হয়ে আসছে। সব মিলিয়ে ৮ ধাপে প্রায় চার হাজার ১০০ ইউপিতে ভোট হবে। বাকিগুলোতে মামলা জটিলতার কারণে নির্বাচন হচ্ছে না।